যোগাযোগ ও নেটওয়ার্কিংয়ের গুরুত্ব  

বিবিধ, যুক্তিতর্ক

মুত্তাকিন হাসান | 2023-09-01 23:28:01

তথ্য ও মনের ভাব আদান প্রদানের উপায়ই হলো যোগাযোগ যা আমাদের ব্যক্তিগত জীবনে বা পেশাগত জীবনে একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

যোগাযোগের দক্ষতা- জীবন, কাজ এবং সম্পর্কের সাফল্যের অন্যতম চাবিকাঠি। একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রাখা এখন তেমন কঠিন কাজ নয়; আমরা সহজেই এ কাজটি করতে পারি। এ জন্য আমাদের নিয়মিত অভ্যাসের প্রয়োজন। আমরা যদি একটি ভালো বা অনুকূল পরিবেশে তৈরি করতে পারি, তাহলেই অন্যদের সঙ্গে ইতিবাচকভাবে যোগাযোগ করতে শিখব।

আমাদের জীবনে স্ট্রেসগুলো বেশিরভাগই আসে যখন আমরা অন্য লোকেদের সঙ্গে ওঠাবসা বা মেলামেশা করি না। খোলামেলা মন বা হৃদয় দিয়ে একে অপরের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করা জীবনের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়।

ব্যক্তিগত জীবনে শিশু, অন্যান্য পারিবারিক সদস্য ও বন্ধুদের সঙ্গে ভালো যোগাযোগের আগ্রহ বা আকাঙ্ক্ষা অনেক চিন্তা ভাবনা শেয়ার করার সুযোগ করে দেয়, যা পারিবারিক চাপ কমায় এবং যে কোনো দ্বিধা থেকে উত্তরণের সম্ভাবনা তৈরি করে। আমরা যদি ইতিবাচক মানচিত্রে আমাদের পরিবারের সদস্যদের সঙ্গে যোগাযোগ করি; অন্তত সপ্তাহে একবার ফোন করে বা ফেসবুক বা অন্য কোনো যোগাযোগ মাধ্যমে সংস্পর্শে আসি, তাহলে আমাদের নিজেদের সম্পর্কের টান সমৃদ্ধ করতে সাহায্য করবে। ধরুন, পরিবারের কারো সঙ্গে আপনার মত পার্থক্য বা কোনো কারণে রাগারাগি হয়েছে এবং তার থেকে অনেক দূরে আছেন, কিন্তু আপনি স্বেচ্ছায় যদি তাকে ফোন করে তার কুশলাদি জানতে চান, সে বিরাগ না হয়ে কিছুটা হলেও আপনার প্রতি তার মনটা নরম হবে। এটা বলা হয়ে থাকে যে out of sight, out of mind। তাই শুধুমাত্র নিয়মিত যোগাযোগ কোন ব্যক্তিকে দৃশ্যত রাখতে পারে। তাছাড়া যোগাযোগ শিশুদের সামাজিক করার একটি বিশেষ প্রক্রিয়াও বটে। কারণ শিশুরা অনুকরণ প্রিয়। আমরা নিজেরা যা করি, শিশুরা তাই অনুকরণ করে।

অন্যদিকে, আমাদের প্রত্যেকের কর্মক্ষেত্র বিভিন্ন শ্রেণীর লোকে পরিপূর্ণ এবং তারা প্রত্যেকে আলাদা আলাদা ভূমিকা পালন করে। নিজেদের মধ্যে কার্যকর যোগাযোগ, কর্মস্থলের মধ্যে একটি ভারসাম্য তৈরি করে। যোগাযোগের দক্ষতায় ব্যক্তি জোরালো নৈতিকতা এবং ভালো কাজ করতে অনুপ্রাণিত হয়। এই দক্ষতা তাকে শুধু ভালো কর্মকর্তাই নয়, তাকে একটি বাড়ন্ত ক্যারিয়ার দিতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ করে।

ব্যবসার প্রয়োজনীয়তা ছাড়াও, যোগাযোগের দক্ষতাগুলো অফিসের সমকক্ষদের সঙ্গে সুস্থির সম্পর্ক গড়ে তুলতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যদি একটি প্রতিষ্ঠানের ভেতরের পরিবেশ সুস্থ হয়, তাহলে কর্মকর্তা বা কর্মচারী ও সংস্থা উভয়েরই উপকার হয়। যাদের যোগাযোগের ভালো দক্ষতা আছে, তারা প্রত্যেক বিষয় ও পরিস্থিতি সহজেই বুঝতে পারেন এবং প্রতিকূল পরিবেশেও কাঙ্ক্ষিত ফলাফল আনতে পারেন।

কার্যকরী যোগাযোগ হচ্ছে চাকরির নেটওয়ার্কিংয়ের মূল ভিত্তি। একে অপরকে জানাটাই নেটওয়ার্কিং। যোগাযোগের ক্ষেত্র বাড়ানো আমাদের ক্যারিয়ার গঠনে একটি গুরুত্বপূর্ণ ধাপ। প্রায় ৫০ ভাগ কাজকর্ম, চাকরি-বাকরিই যোগাযোগের ফলে ঘটে। আমরা যদি খুব ভালো যোগাযোগ বা নেটওয়ার্ক তৈরি করতে পারি, এটি আমাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার, সুযোগ-সুবিধা তৈরিতেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে। অনেক সময় প্রতিভা দিয়েই সব হয় না, আর সফলতাও আপনা আপনিই আসে না। প্রকৃত সাফল্য দলগত পরিশ্রমের সমষ্টিগত ফল।

নেটওয়ার্কিং, কোলাবরেশন ও যোগাযোগ নতুন চিন্তা, নতুন কর্মপন্থা এবং নতুন সুযোগ তৈরি করে। আমরা কীভাবে অন্যদের কাছে সুন্দরভাবে নিজেদের উপস্থাপনা করতে পারছি, তাই হলো আমাদের যোগাযোগের দক্ষতা। অর্থাৎ আমাদের কথাবার্তা, আচার-ব্যবহার এর মাধ্যমে আমরা আমাদেরকে কতটা আকর্ষণীয় তুলবো অন্যদের কাছে। তাই নতুন যোগাযোগ তৈরিতে আমাদের প্রতিদিন সময় দেওয়া উচিত। জীবনের নানা প্রয়োজনীয় কাজের সঙ্গে সঙ্গে ধীরে ধীরে আমাদের অনেক মানুষের সঙ্গে মিশতে হবে, বাড়াতে হবে নেটওয়ার্কিং।

তবে নেটওয়ার্কিং অবশ্যই হতে হবে সৎ ও উদ্দেশ্যবহুল। বিভিন্ন মানুষের সঙ্গে শুধু কথা বলার মাধ্যমে যোগাযোগ ও বন্ধুত্ব করাটাও সফল ক্যারিয়ার গড়তে সহায়তা করবে। যেসব লোকের সঙ্গে যোগাযোগ তৈরি হয়েছে, তাদের সঙ্গে আমাদের নিয়মিত যোগাযোগ রাখা এবং সম্পর্ক তৈরি করা উচিত। আমরা যখন চাকরির খোঁজ করি, তখন বিভিন্ন রেফারেন্স গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। সেরা রেফারেন্স তারাই, যারা আমাদের পছন্দ করেন এবং আমাদের দক্ষতা ও ট্র্যাক রেকর্ড অনুমোদন করেন। আমাদের মধ্যে বেশিরভাগের সামর্থ্য রয়েছে এবং সংশ্লিষ্ট ক্ষেত্রগুলোতে দক্ষতা রয়েছে। কিন্তু যথাযথ যোগাযোগের অভাবে আমরা আরও ভালো একটি সুযোগ পাওয়া থেকে বঞ্চিত হই। তাই যোগাযোগের নেটওয়ার্কিং তৈরিতে আমরা যেসব পদক্ষেপ নিতে পারি- সপ্তাহে না পারলেও মাসে একবার হলেও পুরনো বন্ধুদের খোঁজখবর নিতে পারি, ক্যারিয়া নেটওয়ার্কিং র রিলেটেড সভা-সমিতিগুলোতে অংশ নিতে পারি, বন্ধুদের সঙ্গে যোগাযোগ রক্ষা করার সঙ্গে সঙ্গে নতুন নতুন বন্ধু তৈরি করতে পারি, অনুভূতি বা আইডিয়া প্রকাশের সময় আমাদের যোগাযোগ দক্ষতা কাজে লাগাতে পারি এবং সর্বোপরি- লিংকড ইন ও ফেসবুকসহ বিভিন্ন যোগাযোগ মাধ্যমে সক্রিয় থাকতে পারি।

মুত্তাকিন হাসান: কবি, প্রাবন্ধিক ও মানবসম্পদ পেশাজীবী

এ সম্পর্কিত আরও খবর