কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না

, যুক্তিতর্ক

মুত্তাকিন হাসান | 2023-09-01 10:51:31

কেউ অপরাধী হয়ে জন্মায় না। ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশ, সমাজে বিরাজমান নৈরাজ্য এবং হতাশা মানুষকে অপরাধী করে তোলে। তবে কিশোর অপরাধ বেড়ে যাওয়ার প্রধান কারণ হচ্ছে পারিবারিক শিক্ষার অভাব। পরিবার থেকে যদি একজন কিশোর শ্রদ্ধাবোধ না শেখে তাহলে তার অপরাধে জড়িত হওয়ার প্রবণতা বেশি থাকবে।

পারিবারিক শাসন ভালো, কিন্তু অতিরিক্ত শাসন এর উল্টোটা বয়ে আনতে পারে। আমরা স্কুল বা কলেজ জীবনে মুরুব্বিদের সামনে দেখলে মাথা নীচু করে দ্রুত হেঁটে যেতাম আর এখন কিশোরদের দেখলে মুরুব্বিরা মাথা নীচু করে দ্রুত হেঁটে যায়। কারণ অল্প বয়সেই সমাজের বিভিন্ন প্রভাবশালী লোকদের ছত্রছায়ায় তারা আস্কারা পেয়ে নেতা বনে যায়। জীবন জগত সম্পর্কে তারা অতিকৌতূহলী এবং উদ্দেশ্যহীন থাকে বিধায় সুবিধাভোগী সমাজ তাদের সহজেই রপ্ত করতে পারে।

একটি আদর্শবান সমাজ ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজন আদর্শবান মানুষ। পুরো সমাজের মানুষ হয়তো আদর্শবান হতে পারবে না, কিন্তু সমাজের যারা নীতিনির্ধারক তাদের আদর্শ যদি শূন্য কোটায় চলে যায় তাহলে সুষ্ঠু ও সুন্দর সমাজ ব্যবস্থা গঠন সম্ভব নয়।

শহর অপেক্ষা গ্রামে এখনও অনেক মানুষ আদর্শবান বিধায় কিশোর অপরাধের ব্যাপকতা ও গভীরতা গ্রাম অপেক্ষা শহরে বেশি। বাঁধভাঙ্গা অপসংস্কৃতিও কিশোর অপরাধের জন্য অনেকাংশে দায়ী। এ ছাড়া জৈবিক ও বংশগত কারণেও কিশোররা অপরাধী হয়ে উঠতে পারে।

শিশুদের ত্রুটিপূর্ণ দৈহিক গঠন থাকলে তারা হীনমন্যতায় ভোগে এবং অস্বাভাবিক আচরণ করে। বিশেষ করে এই হীনমন্যতা পরিবার থেকেই প্রথম আসে। সে পরিবেশের সাথে স্বাভাবিক উপযোগ স্থাপনে ব্যর্থ হয়। পরিবারের লোকজন তাকে নিয়ে উপহাস করলে তার হীনমন্যতার পরিমাণ বাড়তে থাকে, ফলে সে নিজেকে আড়াল করতে বিপথে যেতে বাধ্য হয়। তবে বংশগত কারণে অপরাধী হওয়ার প্রবণতা থাকলেও এখন দেশে পরিমাণটা কমে গেছে। বাবা চোর হলেও ছেলে স্বাভাবিকভাবে চোর হয় এমনটি কম লক্ষণীয়।

যেভাবেই অপরাধী হোক না কেন, একবার কেউ অপরাধী হয়ে গেলে তাকে ফেরানো কঠিন হয়ে যায়। তবে সবল পরিবারের লোকজন কিছু কিছু ক্ষেত্রে ফিরে আসলেও বেশি ক্ষতিগ্রস্থ হয়। সমাজের এ ঝুঁকিপূর্ণ পরিবেশে দুর্বলরা একবার অপরাধী হয়ে গেলে তারা মার্কা মারা সন্ত্রাসী বলে পরিচিত হয় বা মার্কা মারা সন্ত্রাসী বানানো হয়। অথচ যারা আসল অপরাধী তারা কোনো না কোনো ক্ষমতার জোরে পার পেয়ে যায়।

অপরাধ প্রতিরোধের জন্য ঢাকার অদুরে গাজীপুরের টঙ্গীতে ১৯৭৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় কিশোর আদালত, কিশোর হাজত এবং সংশোধন প্রতিষ্ঠানের সমন্বয়ে জাতীয় কিশোর অপরাধ সংশোধন ইনস্টিটিউট প্রতিষ্ঠা করা হয়। বর্তমানে এর নাম জাতীয় কিশোর উন্নয়ন প্রতিষ্ঠান।

আমরা যত প্রতিষ্ঠানই করি না কেন, পারিবারিক মূল্যবোধ আর আদর্শের চর্চা বাড়াতে হবে। ভয় দেখিয়ে বা শাস্তি দিয়ে হয়তো স্বল্প সময়ের জন্য তাদেরকে অপরাধ থেকে দূরে রাখা যায়, কিন্তু দীর্ঘ মেয়াদী ফল পাওয়া যায় না। তাই প্রত্যেক বাবা-মায়ের উচিত সন্তানকে স্নেহময় পরিবেশে মানুষ করা। কোনটা ন্যায় কোনটা অন্যায় বা কোনটা ভালো কোনটা মন্দ- শিশু কিশোরদের সুন্দর ধারণা দেয়া। পরিবারের পাশাপাশি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোরও উচিত নৈতিক শিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেয়া যাতে কিশোরদের মানসিক বিকাশের কোনো বিচ্যুতি না ঘটে।

এই পৃথিবীতে প্রত্যেকেই নিষ্পাপ মন নিয়ে আগমন করে। পরিবেশ পরিস্থিতি  মোকাবেলায় কেউ হয় অপরাধী। 

মুত্তাকিন হাসান: কবি, প্রাবন্ধিক ও মানব সম্পদ ব্যবস্থাপনা পেশাজীবী

এ সম্পর্কিত আরও খবর