যে কারণে ‘ইউনূস ইস্যু’ বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্র সম্পর্কে প্রভাব ফেলবে না

, যুক্তিতর্ক

ড. মিল্টন বিশ্বাস | 2024-01-05 12:36:55

সংসদ নির্বাচনের প্রাক্কালে আমেরিকা-বাংলাদেশ সম্পর্কের উষ্ণ ও সৌহার্দ্যপূর্ণ স্রোত এবং রাশিয়া-ইউক্রেন কিংবা ইসরাইল-ফিলিস্তিন যুদ্ধের পক্ষ-বিপক্ষের টেনশন ও ভয়ের মধ্যে ১ জানুয়ারি (২০২৪) ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে করা শ্রম আদালতের রায় প্রকাশিত হয়েছে।ড. ইউনূসের রায় এবং বিএনপি-জামায়াতের বাংলাদেশ নিয়ে অপপ্রচারে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ভুল বোঝাবুঝি এবং বিভিন্ন সামাজিক সমস্যায় কিংবা সহিংস হামলা-মামলায় নেতিবাচক দৃশ্যপট তৈরি করলেও দু’দেশের মধ্যে ভালো সম্পর্কের বন্ধন এগিয়ে চলেছে। এজন্য অনেকেই মনে করেন ড. ইউনূসের ইস্যুটি একটি বিচ্ছিন্ন ইস্যু, নির্বাচনের সঙ্গে এর সম্পর্ক নেই।

আসলে ২০২৪ সালের ৭ জানুয়ারিতে বাংলাদেশের জাতীয় নির্বাচনকে সামনে রেখে আমেরিকা-বাংলাদেশের নিবিড় সম্পর্ক তুলে ধরা দরকার।ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে শ্রম আদালতে মামলা ও সেই রায়ে কারাদণ্ড কিংবা বিএনপি-জামায়াতের লবিস্ট মারফতে পাওয়া বিবরণ দিয়ে শেখ হাসিনার শাসনকালকে মূল্যায়ন করা হলে তা বিভ্রান্তির জন্ম দিবে। বরং গত ১৫ বছরে শেখ হাসিনা সরকারের আমলে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর দিকে তাকালে কিংবা এদেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতিকে বিবেচনায় নিলে উন্নয়নশীল এই দেশটির মহিমান্বিত রূপ উন্মোচন করা সম্ভব হবে।এজন্য আমেরিকাকে মনে রাখতে হবে- বাংলাদেশ এখন বিশ্বের কাছে গৌরবান্বিত একটি দেশ।

যেমন ২৪৭ বছর আগে ব্রিটিশদের কাছ থেকে শুধু ভৌগোলিক স্বাধীনতা নয় আমেরিকায় সেদিন উৎপাটিত হয়েছিল সব পরাধীনতার শৃঙ্খল, বহাল হয়েছিল বাকস্বাধীনতা, পত্রিকা ও প্রকাশনার স্বাধীনতা, ধর্মীয় স্বাধীনতা, এমনকি কোনো আইন পরিবর্তনের জন্য সরকারের কাছে আবেদন করার স্বাধীনতা পেয়েছিল সবাই, আমেরিকায় বসবাসকারী প্রতিটি মানুষ; তেমনি পরিস্থিতি আজ বাংলাদেশেও বিদ্যমান। অর্থাৎ নিজেকে প্রকাশ করার যে স্বাধীনতা, সংবাদপত্র, রেডিও-টেলিভিশন তথা গোটা মিডিয়ার যে স্বাধীনতা তাও স্বীকৃতি পেয়েছে শেখ হাসিনার শাসনকালে। এখন বাংলাদেশের যে কোনো ব্যক্তি জানেন ধর্ম পালনে রাষ্ট্র কাউকে বাধ্য বা নিষেধ করবে না। যে যার ধর্ম পালন করবে। নিরাপদে ও নিশ্চিন্তে স্বাধীনভাবে নিজের ধর্ম পালনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের মতো বাংলাদেশও একমাত্র শান্তির ভূমি। প্রায় আড়াই’শ বছর ধরে নানা ধর্ম-বর্ণের মানুষ আমেরিকায় শান্তিপূর্ণ সহাবস্থান করে চলেছে যেমনটি গত ১৫ বছরে বাংলাদেশের অবস্থা।বাংলাদেশ-যুক্তরাষ্ট্রের সুন্দর ও বন্ধুত্বপূর্ণ সম্পর্ক সবসময়ের জন্য প্রশংসনীয়।উভয় দেশের সম্পর্কের মধ্যে ড. ইউনূস ইস্যুতে কালিমা লিপ্ত করার সুযোগ নেই।

ঢাকাস্থ মার্কিন দূতাবাসের ওয়েবসাইট সূত্রে জানা যায়, যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশের বৃহত্তম রপ্তানি বাজার।এ দেশদুটি দ্বিপক্ষীয় বিনিয়োগ চুক্তি স্বাক্ষর করেছে। পাশাপাশি দ্বৈত কর এড়ানোর জন্যও চুক্তি করেছে। ২০১৭ সালে বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের প্রত্যক্ষ বিনিয়োগ ছিল ৪৬ কোটি ডলার, যা ২০১৬ সালের তুলনায় ০.৪ শতাংশ বেশি। দুই সরকারের মধ্যে ২০১৮ সালের ১৩ই সেপ্টেম্বর ওয়াশিংটন ডিসিতে অনুষ্ঠিত চতুর্থ বার্ষিক ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট কোঅপারেশন ফোরাম এগ্রিমেন্ট (টিকফা) বৈঠক বাংলাদেশের সঙ্গে বৃহত্তর সহযোগিতার সম্ভাবনাকে তুলে ধরে।

টিকফা বৈঠকের আলোচনায় বিশেষ করে বাংলাদেশের বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের তুলার প্রবেশের সুযোগ, ডিজিটাল অর্থনীতিকে এগিয়ে নেওয়া, সরকারি ক্রয়ে স্বচ্ছতা এবং বাংলাদেশে শ্রম সংস্কারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছিল।২০১৭ সালে যুক্তরাষ্ট্র বাংলাদেশে প্রায় দেড়শ’ কোটি ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছিল। এসময়ে দেশটি বাংলাদেশ থেকে আমদানি করে প্রায় ৫শ’ ৭০ কোটি ডলারের পণ্য। বাংলাদেশে যুক্তরাষ্ট্রের যেসব পণ্য রপ্তানি হয় তার মধ্যে রয়েছে কৃষিপণ্য (খাদ্যশস্য, বীজ, সয়াবিন, তুলা, গম এবং ভুট্টা), যন্ত্রপাতি এবং লোহা ও ইস্পাত পণ্য। আর যুক্তরাষ্ট্রের আমদানি পণ্যের মধ্যে আছে তৈরি পোশাক, জুতা, টেক্সটাইল সামগ্রী ও কৃষিপণ্য। (সূত্র: ইউএসটিআর)

বাংলাদেশে শ্রমিক অধিকার এবং শ্রমিকদের নিরাপত্তাজনিত ইস্যুর কারণে যুক্তরাষ্ট্র ২০১৩ সালের জুন মাসে দেশটির জেনারালাইজড সিস্টেম অব প্রেফারেন্স (জিএসপি) বাণিজ্য সুবিধা স্থগিত করে। ওই স্থগিতাদেশের সময় যুক্তরাষ্ট্র জিএসপি বাণিজ্য সুবিধা পুনর্বহালের বিষয়টি বিবেচনার জন্য ভিত্তি হিসেবে বাংলাদেশ সরকারকে শ্রমিকদের অধিকার বাস্তবায়নের লক্ষ্যে একটি অ্যাকশন প্ল্যান দেয়। তখন থেকে এই পরিকল্পনার কয়েকটি লক্ষ্য পূরণে বাংলাদেশ গুরুত্বপূর্ণ অগ্রগতি অর্জন করেছে – বিশেষ করে পরিদর্শন, সুরক্ষা ও নিরাপত্তা ক্ষেত্রে। এছাড়া যুক্তরাষ্ট্র শ্রমিকদের অধিকার বিষয়ে আরও অগ্রগতি নিশ্চিত করতে বাংলাদেশ সরকারের সঙ্গে কাজ করে যাচ্ছে।

জিএসপির ওপর স্থগিতাদেশ বাংলাদেশের সঙ্গে দ্বিপক্ষীয় বাণিজ্যের ওপর সামান্যই তাৎক্ষণিক প্রভাব ফেলেছে, কারণ যুক্তরাষ্ট্রে বাংলাদেশের প্রধান রপ্তানি পণ্য বস্ত্র ও তৈরি পোশাক জিএসপি সুবিধার আওতাভুক্ত নয়।অন্যদিকে যুক্তরাষ্ট্র ও বাংলাদেশ একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক, নিরাপদ ও সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের ব্যাপারে অভিন্ন মতামত পোষণ করে।‘যুক্তরাষ্ট্র-বাংলাদেশ অংশীদারত্ব সংলাপ’ সম্মেলনে গণতন্ত্র ও সুশাসন, বাণিজ্য ও বিনিয়োগ এবং নিরাপত্তা সহযোগিতা নিয়ে সবসময় আলোচনা হয়ে থাকে। উভয় দেশই টেকসই উন্নয়ন, সন্ত্রাসবাদ মোকাবেলা, অভিবাসন ও জলবায়ু পরিবর্তনসহ দ্বিপক্ষীয়, আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক অগ্রাধিকারগুলোর ক্ষেত্রে সহযোগিতা জোরদার করতে ইচ্ছুক।

শেখ হাসিনার আমলে বাংলাদেশ একটি অধিকতর সমৃদ্ধ ও বহুত্ববাদী সমাজ হয়ে ওঠার পথে উল্লেখযোগ্যরকম উন্নতি করেছে। গত ১৫ বছরের বেশি সময় ধরে এ দেশে ৬ শতাংশের বেশি হারে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ২০১৩ সালে তৈরি পোশাক কারখানা রানা প্লাজার মর্মান্তিক দুর্ঘটনার পর থেকে বাংলাদেশ তার গার্মেন্টস খাতে পরিবর্তন আনার লক্ষ্যে উন্নতি করেছে। যুক্তরাষ্ট্র এ দেশে শ্রমিকের অধিকারের প্রতি শ্রদ্ধা প্রদর্শন জোরদার এবং কর্মপরিবেশের নিরাপত্তার উন্নতি করার প্রচেষ্টায় এখনো সক্রিয়ভাবে যুক্ত।আর ধর্মীয় উগ্রপন্থাকে পরাজিত করার প্রচেষ্টায় যুক্তরাষ্ট্র কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে বাংলাদেশের পাশে রয়েছে।

উপরের বাস্তবতার আলোকে বলা যায়, ড. মুহাম্মদ ইউনূসের ছয় মাস কারাদণ্ডের রায় বাংলাদেশের রাজনীতিতে এবং জাতীয়-আন্তর্জাতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে বলে রাজনৈতিক বিশ্লেষকরা যা মনে করছেন তা আসলে সঠিক নয়। বরং ব্যক্তি ইউনূসের জন্য আমেরিকা বাংলাদেশকে হারাতে চাইবে না। ড. ইউনূস অবশ্য এই মামলাকে তার বিরুদ্ধে হয়রানি হিসেবে অভিহিত করেছেন। তিনি বলেছেন, যে অপরাধের সঙ্গে আমি জড়িত নই, সেই অপরাধেই শাস্তি পেলাম। এটি আমার সবচেয়ে বড় দুঃখ।’ আমরা মনে করি ড. ইউনূসের অপরাধ যথার্থভাবেই উদঘাটিত হয়েছে। মামলায় মোটেও তাড়াহুড়া করা হয়নি। আইন তার নিজস্ব ধারায় নিজস্ব গতিতে চলেছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এ মামলার রায়ের পর এখন পর্যন্ত আনুষ্ঠানিকভাবে কোন রকম বিবৃতি দেয়নি। বরং তারা বাংলাদেশের নির্বাচন, নতুন শ্রম আইনসহ বিভিন্ন বিষয়গুলোর দিকে যে ভূমিকা রেখে চলেছে তার একটি উত্তর বা বার্তা পেয়েছে।শ্রম, শ্রমিক ও কারখানা নিয়ে তাদের মাথাব্যথারও জবাব রয়েছে রায়ে।দেশের মানুষের উন্নয়নে কাজ করছে আওয়ামী লীগ সরকার। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় থাকলে উন্নয়ন অব্যাহত থাকবে। এজন্য ড. ইউনূসের বিরুদ্ধে অপরাধের ইস্যু ইতিবাচক হিসেবে দেখতে হবে।

লক্ষণীয় মামলাটি সরকারের তরফ থেকে করা হয়নি। ড. ইউনূস, গ্রামীণ টেলিকমের সাবেক ব্যবস্থাপনা পরিচালক (এমডি), আশরাফুল হাসান, পরিচালক নুর জাহান বেগম ও মো. শাহজাহানের বিরুদ্ধে ২০২১ সালের ৯ সেপ্টেম্বর মামলাটি করে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তর।মামলায় গত ৬ জুন(২০২৩) ড. ইউনূসসহ চারজনের বিরুদ্ধে অভিযোগ গঠন করেন আদালত। অভিযোগ গঠনের আদেশ বাতিল চেয়ে উচ্চ আদালতে আবেদন করেছিলেন ড. ইউনূস ও অন্যরা। আপিল বিভাগ গত ২০ আগস্ট সেই আবেদন চূড়ান্তভাবে খারিজ করে দেন।এরপর ২২ আগস্ট শ্রম আদালতে এই মামলার সাক্ষ্য গ্রহণ শুরু হয়, যা শেষ হয় ৯ নভেম্বর। এতে কলকারখানা ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন অধিদপ্তরের চারজন কর্মকর্তা সাক্ষ্য দেন।

মামলায় অভিযোগ আনা হয় যে শ্রম আইন, ২০০৬ এবং বাংলাদেশ শ্রম বিধিমালা, ২০১৫ অনুযায়ী, গ্রামীণ টেলিকমের শ্রমিক বা কর্মচারীদের শিক্ষানবিশকাল পার হলেও তাঁদের নিয়োগ স্থায়ী করা হয়নি। প্রতিষ্ঠানে কর্মরত শ্রমিক বা কর্মচারীদের মজুরিসহ বাৎসরিক ছুটি দেওয়া, ছুটি নগদায়ন ও ছুটির বিপরীতে নগদ অর্থ দেওয়া হয় না।মামলায় আরও অভিযোগ আনা হয়, গ্রামীণ টেলিকমে শ্রমিক অংশগ্রহণ তহবিল ও কল্যাণ তহবিল গঠন করা হয়নি এবং লভ্যাংশের ৫ শতাংশের সমপরিমাণ অর্থ শ্রমিক কল্যাণ ফাউন্ডেশন আইন অনুযায়ী গঠিত তহবিলে জমা দেওয়া হয় না।অভিযোগের সপক্ষে সব ধরনের তথ্য-প্রমাণ আদালতের কাছে তুলে ধরা হয়েছিল।ফলে শ্রমজীবী মানুষের জয় হয়েছে। এই রায়ের মাধ্যমে মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের খুশি হওয়াটাই স্বাভাবিক।

পত্রিকান্তরে এবং অনলাইন রিপোর্টে বলা হয়েছে, ড. ইউনূসের পক্ষে বিবৃতিদানকারী বিশ্বের খ্যাতিমান ব্যক্তি এবং নেতারা জানেন না মুখোশের অন্তরালের এই মানুষটির প্রতারণা ও অপরাধসমূহ ভয়ঙ্কর।তিনি এবং গ্রামীণ ব্যাংক যৌথভাবে ২০০৬ সালে নোবেল শান্তি পুরস্কার লাভ করেন।অর্থনীতির অধ্যাপক হয়েও শান্তিতে নোবেল পুরস্কার প্রাপ্তির পর থেকেই মুহম্মদ ইউনূস বিভিন্ন বিতর্কে জড়িয়ে পড়েন। ২০০৬ সালে তিনি নিজে একটি রাজনৈতিক দল গঠন করেন। ওয়ান ইলেভেন আনার পেছনেও তাঁর একটি ভূমিকা আছে বলে অনেকে মনে করেন। কিন্তু বর্তমানে তিনি একাধিক ফৌজদারী আইনি জটিলতায় পড়েছেন। তার বিরুদ্ধে শ্রম আইন লঙ্ঘন ও দুর্নীতির বেশ কয়েকটি মামলা চলমান রয়েছে। তার মধ্যে একটির রায় হয়েছে পহেলা জানুয়ারি। নিজে দুর্নীতির দায় থেকে বাঁচার জন্য আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছ থেকে বিবৃতি সংগ্রহ করেছেন।

ড. মুহাম্মদ ইউনূসকে নিয়ে ইতোমধ্যে বিশ্বের নোবেল বিজয়ী বিভিন্ন ব্যক্তি এবং নেতারা তার বিচার কার্যক্রম স্থগিত করার জন্য বিবৃতি দিয়েছেন। তার বিচার স্থগিতের জন্য প্রভাবশালী অন্তর্জাতিক মহল থেকে সরকারের উপর চাপ প্রয়োগ করা হয়েছে। ড. মুহাম্মদ ইউনূস দেশের সমস্যা নিয়ে সবসময়ই নীরব। দেশের কোন সংকটে, উৎসবে তিনি থাকেন না। ব্যক্তি স্বার্থে বিদেশে তিনি সরব। ক্ষুদ্র ঋণের মাধ্যমে দারিদ্রকে জাদুঘরে পাঠানোর ঘোষণা দিয়েছিলেন। দারিদ্র জাদুঘরে যায়নি বটে, তবে তিনি অর্থ, বিত্ত-বৈভবের জাদু দেখিয়েছেন। এখন ‘সামাজিক ব্যবসার’ আওয়াজ তুলে বিশ্বে বক্তৃতা দিচ্ছেন।

সামাজিক ব্যবসা প্রবর্তন হোক না হোক তাঁর বিত্তের প্রসার ঘটেছে। এখন শিক্ষক থেকে তিনি হয়ে উঠেছেন বিলিয়নিয়ার। কিন্তু তার এই বিত্ত বেড়ে উঠেছে গরিবের সম্পদ লুটে; সরকারকে ঠকিয়ে; রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাৎ করে। এটি লক্ষণীয়, ড. ইউনূস তাঁর কর ফাঁকির বিষয়গুলো ধামাচাপা দিতে দেশের আদালতে বেশ কিছু মামলা ও রিট পিটিশন দায়ের করেন। এ সকল মামলা ও রিটের উদ্দেশ্য হচ্ছে কর ফাঁকি সংক্রান্ত বিষয়ে ড. ইউনূসকে যেন আইনের মুখোমুখি হতে না হয়। ড. ইউনূসের কর সংক্রান্ত প্রতিটি ক্ষেত্রেই তাঁর কর ফাঁকির বিষয়গুলো দালিলিকভাবে প্রমাণিত হয়েছে। ড. ইউনূসের কর ফাঁকির বিষয়ে সংশ্লিষ্ট রাষ্ট্রীয় ও নিয়ন্ত্রক কর্তৃপক্ষের দ্বারা পরিচালিত তদন্তে এটি সন্দেহাতীতভাবে প্রমাণিত হয়েছে যে, ড. ইউনূস নিজে এবং তাঁর নিয়ন্ত্রিত প্রতিষ্ঠানগুলো তাঁর নির্দেশনাতেই কর ফাঁকির অপরাধে জড়িত। সর্বোচ্চ আদালতের নির্দেশে জুলাই মাসে(২০২৩)তিনি ১২ কোটি টাকার বেশি দান কর পরিশোধ করেন।

বস্তুত ড. মুহম্মদ ইউনূস অপরাধী হওয়ায় রাজনৈতিক প্রতিহিংসা চরিতার্থে শ্রম আইন ও বিচারব্যবস্থার অপব্যবহারের যে কথা বলা হচ্ছে তা অবান্তর।তাছাড়া ইউনূসের কাজ ও ভিন্নমতের জন্য তাঁর প্রতি রাজনৈতিক প্রতিহিংসার একটি ধরন হিসেবে মামলার রায়কে চিহ্নিত করে বিশ্বব্যাপী যারা গুজব ছড়াচ্ছে, তারাও সমান অপরাধী।কারণ অধ্যাপক ড. মুহাম্মদ ইউনূস অপরাধ করেছেন বলেই শাস্তি পেয়েছেন। শেখ হাসিনা সরকার বিচার ব্যবস্থাকে প্রভাবিত করার প্রয়োজন মনে করে নি।বরং ড. ইউনূস কোনো প্রতিবন্ধকতা ছাড়াই বিচারিক সকল সুযোগ-সুবিধা ব্যবহার করেছেন।

লেখক : অধ্যাপক ও চেয়ারম্যান, বাংলা বিভাগ, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় এবং সাধারণ সম্পাদক, বাংলাদেশ প্রগতিশীল কলামিস্ট ফোরাম। Email: drmiltonbiswas1971@gmail.com

এ সম্পর্কিত আরও খবর