বিএনপির ঐতিহ্যগত অপরাধ ও কিছু অভিজ্ঞতা

, যুক্তিতর্ক

হায়দার মোহাম্মদ জিতু | 2023-11-03 13:46:18

কবি গুরু রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর সাহিত্যরসে আলো জ্বেলেছেন কবিতা, গান, সুর, প্রবন্ধ, চিত্রকর্ম, সাহিত্য সমালোচনা, সামাজিক আন্দোলনের মধ্য দিয়ে। এককথায় জীবন সৃজনের মাধ্যমে। শিল্প-সাহিত্যের মত এই অঞ্চলের রাজনীতিও প্রজ্বলিত ও অনুকম্পাহীন। নেতাজী সুভাষ চন্দ্র বসু থেকে বঙ্গবন্ধু, সকলেই সেই সন্ধ্যাতারার বাহক। এঁরা জীবন দিয়ে আলো জ্বেলে গেছেন স্বাধীনতাকামী মানুষের বিবেকে ও স্বপ্নে। যা এখন এগিয়ে নিয়ে চলেছেন বাঙালির শান্ত সাহস শেখ হাসিনা।

তিন মেয়াদে প্রধানমন্ত্রী হবার পূর্বে বিদ্যুৎ, জ্বালানি, সীমান্ত সমস্যা, জঙ্গিবাদ, খাদ্য ঘাটতিসহ বহুমাত্রিক সমস্যার প্লাবনে নিমজ্জিত ছিল বাংলাদেশ। সেই খাদের কিনারা থেকে উদ্বৃত্ত খাদ্য, জ্বালানি নিরাপত্তা, মৌলিক সুবিধা নিশ্চিতের পথে নিয়ে এসেছেন দেশকে। যা বৈশ্বিকভাবে বিস্ময়কর ও গৌরবের।

দেশের এই ধারাবাহিক সমৃদ্ধিতে খবরদারি করা দেশগুলো বেশ বিপাকে পরেছে। কারণ সামান্য সাহায্যের বিনিময়ে যে বঞ্চনা, অযাচিত হস্তক্ষেপ করত তা এখন আর করতে পারছে না। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশকে স্বয়ংসম্পূর্ণ করবার মাধ্যমে সেই পথ রুদ্ধ করে তুলেছেন। সব হিসেব কষে এগিয়ে চলা বাংলাদেশের জয়রথ থামাবার জন্য ঘরে-বাইরের অপশক্তি, বিরোধী শক্তিরা মৌসুম হিসেবে বেঁচে নিয়েছে আগামী দ্বাদশ জাতীয় নির্বাচনকে এবং রাজনৈতিকভাবে বিএনপি-জামায়াতের উপর ভর করেছে।

গেল কিছুদিনে বিএনপি শান্তিপূর্ণ সমাবেশের নামে মানুষ হত্যা, জানমালের ক্ষতি এবং অস্থিরতা শুরু করেছে। দেশের বিচার ব্যবস্থার সর্বোচ্চ পদ প্রধান বিচারপতির বাসভবনে হামলা ও ভাংচুর করেছে। অন্যান্য বিচারপতির এ্যাপার্টমেন্টেও, যা জাজেস কমপ্লেক্স নামে পরিচিত সেখানেও হামলা চালিয়েছে। প্রচলিত নিয়মে বাঁধা দেয়ায় একজন পুলিশ সদস্য মো. আমিরুল ইসলাম পারভেজকে হত্যা ও ৫০জনকে গুরুতরভাবে জখম করেছে। পুলিশকে টার্গেট করে ৫টি পুলিশ বক্সে আগুন ও ১টি পিকআপ ভ্যান পুড়িয়েছে।

শুধু তাই নয় ইসরাইল যেমন ফিলিস্তিনের হাসপাতালে হামলা করে নিরীহ মানুষকে হত্যা করেছে, আহত করেছে। ঠিক একই কায়দায় বিএনপিও রাজারবাগে পুলিশ হাসপাতালে হামলা করেছে। এই হামলায় ২টি অ্যাম্বুলেন্স, ১টি পুলিশ ভ্যান, ৫টি মোটরসাইকেলসহ মোট ২৬টি গাড়ি পুড়িয়েছে। আনসার সদস্যরাও বাদ যায়নি এই তালিকা থেকে। বিএনপির হামলায় মোট ২৫জন আনসার সদস্য আহত হয়েছেন।

মুক্ত গণমাধ্যম যেখানে গণতন্ত্রের স্তম্ভ সেখানে সংবাদকর্মীও এদের হামলার শিকার হয়েছেন। এদের হামলায় মোট ২১জন সাংবাদিক আহত হয়েছেন। সাংবাদিকদের ২টি টেলিভিশন চ্যানেলের গাড়ি ভাংচুরের শিকার হয়েছে। ফায়ার সার্ভিসের একটি গাড়িতে আগুন দেবার সময় খিলগাঁও ফায়ার স্টেশনের সিনিয়র স্টেশন অফিসার আরিফুল ইসলাম এবং একই স্টেশনের ড্রাইভার শরিফুল ইসলাম আহত হন। সারাদেশের হিসেবে, বিএনপি মোট ৭৭টি গাড়ি ও ২০টি মোটর সাইকেলে আগুন ও ভাংচুর করে।

রাজনৈতিক কর্মসূচিতে সব সময় বিরোধীদের প্রতি সহনশীল থেকে যুক্তি উপস্থাপন করতে হয়, জনগণকে সাথে নিয়ে জিততে হয়। কিন্তু বিএনপি তা কোনকালেই করেনি। যার প্রমাণ আবারো এই সহিংস আন্দোলনের মাধ্যমে তারা দিয়েছে। আওয়ামী লীগ ও এর সহযোগী সংগঠনের ৩৫জন নেতাকর্মীকে গুরুতরভাবে আহত করেছে। ৬জন নারীকর্মীকে হেনস্তা করেছে। বিএনপির হামলায় ২০জন সাধারণ মানুষর আহত হয়েছে।

এরপরও বিএনপিকে যারা তার ঐতিহ্যগত অপরাধ ও অপরাধ সংস্কৃতি থেকে দায়মুক্তি দিতে চায় বা চাওয়ায় জন্য লবিং করেন বা করছেন, এদের কাছে বিএনপির হত্যা কিংবা নৈরাজ্য মূলক আন্দোলনের ব্যাখ্যা কি এবং সেই সাথে জনগণকে হত্যা ও অত্যাচার করে তাদের কি প্রাপ্তিযোগ হয়, সেটাও জানা জরুরি। এই যে মানুষের অর্থনৈতিক ক্ষতি, হাসপাতালে আক্রমণ, সাধারণ মানুষকে হত্যা, জখম করা, এসব কি কিভাবে বিএনপির কাছে গণতান্ত্রিক আন্দোলন?

রাজনৈতিকভাবে দেউলিয়া হওয়া বিএনপি ‘টেকব্যাক বাংলাদেশ’ শিরোনামে একটা স্লোগান তুলেছিলেন, সেটাও মাঠে মারা গেছে। ক্ষমতায় যাবার জন্য তারা যেভাবে জনগণকে ভয়-ভীতি এবং হত্যা করেছে তাতে গণতন্ত্রের আসল ও শেষকথা হিসেবে খ্যাত জনগণ-ই বিএনপির দেয়া অবরোধ, হরতাল প্রত্যাখ্যান করে টেকব্যাক বাংলাদেশ তত্ত্ব ছুঁড়ে ফেলেছে। তারা বিএনপির অচল বাংলাদেশ, মৃত্যুপুরী আর ভয়ার্ত বাংলাদেশ চায় না। তারা শেখ হাসিনার নাগরিক সুবিধা সম্পন্ন সামাজিক ব্যবস্থাকে সাধুবাদ জানায়।

লেখক:  সাবেক ছাত্রলীগ নেতা ও রাজনৈতিক কর্মী

haiderjitu.du@gmail.com

এ সম্পর্কিত আরও খবর