ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড ও বাংলাদেশের সম্ভাবনা

, যুক্তিতর্ক

শরিফুল হাসান সুমন | 2023-11-01 11:13:49

কোনো জনগোষ্ঠীতে যখন কর্মক্ষম জনসংখ্যার অনুপাত, নির্ভরশীল জনসংখ্যার চেয়ে বেশি থাকে তখন সেটাকে ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড বলা হয়ে থাকে। অর্থাৎ সেই জনগোষ্ঠীর নির্ভরশীল ব্যক্তির তুলনায় কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা বেশি। সময়ের পরিক্রমায় প্রতিটি জনপদে পরিকল্পিত ও নিয়ন্ত্রিত জনসংখ্যা ব্যবস্থাপনা বজায় থাকলে প্রতি ৮০ বছরে এমন একটা সময় আসে যখন সেই জনপদে কর্মক্ষম বয়সের জনগোষ্ঠীর পরিমাণ সবচেয়ে বেশি হয়। বাংলাদেশের ক্ষেত্রে এই কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর বয়সের সীমা ১৫ থেকে ৬৪ পর্যন্ত।

আগে দেখা যেত ৩-৪-৫ জনের পরিবারে কর্মক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা ১ জন। কিন্তু বর্তমানে কর্মক্ষম বয়সের ব্যক্তির অনুপাত বৃদ্ধির ফলে অনুপাত দাঁড়ায় ২:১ এ। অর্থাৎ ৩ জনের পরিবারে উপার্জনক্ষম ব্যক্তির সংখ্যা ২ আর নির্ভরশীল ব্যক্তির সংখ্যা ১। এমতাবস্থায় পরিবারের খরচের তুলনায় উপার্জন বৃদ্ধি পাবে। এর ফলে সেই পরিবারের সঞ্চয় বাড়বে, নয়তো সেই পরিবারের জীবন মান উন্নয়নের মাধ্যমে শ্রেণি উন্নয়ন ঘটবে। এভাবে শ্রেণি উন্নয়নের ফলে নিম্নবিত্ত নিম্নমধ্যবিত্ত হয়, নিম্নমধ্যবিত্ত উচ্চ-মধ্যবিত্ত হয়, এবং উচ্চবিত্ত শ্রেণিতে প্রবেশ করে। দেশের ক্ষেত্রেও এটা প্রযোজ্য। ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড সুবিধাপ্রাপ্ত দেশের একইভাবে সঞ্চয় বাড়বে এবং উন্নত দেশের কাতারে যুক্ত হবে যদি সঠিক ভাবে সুযোগ সুবিধাদি প্রণয়নের মাধ্যমে কর্মক্ষম জনসংখ্যার আধিক্যের এই সুযোগকে কাজে লাগানো যায়।  

২০২২ সালের আদমশুমারি অনুযায়ী বর্তমানে বাংলাদেশের মোট জনসংখ্যার ১৬.৫১ কোটি জনগণ এর মধ্যে ১০.৮ কোটি মানুষ এই কর্মক্ষম বয়েসের মধ্যে রয়েছে। যা মোট জনসংখ্যার ৬৫.৬%।  অর্থনীতির তত্ত্ব মতে, কোন জনপদে যখন নির্ভরশীল লোকের তুলনায় কর্মক্ষম লোকের সংখ্যা বেশি থাকে তখন সেই জনপদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির সম্ভাবনা খুব দ্রুত হয়। কারণ, উৎপাদনশীল লোকের সংখ্যা বেশি হওয়ায় তাদের অর্থনীতিতে অবদান রাখার সুযোগ বেশি থাকে।

অর্থনীতিবিদদের হিসাব অনুযায়ী বাংলাদেশের কর্মক্ষম জনসংখ্যার এই সংখ্যাধিক্যের সুবিধার সুযোগ ২০৪৫ সাল পর্যন্ত থাকবে। আর ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এ প্রবেশের সময়টা ধরা হয় ২০১৫ সাল থেকে।


 

 অন্যান্য দেশের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি


চীন


১৯৭১ সাল থেকে চীনের জনসংখ্যা বৃদ্ধি নিয়ন্ত্রিত হতে থাকে। ২০০৪ সালে এসে চীনের জনসংখ্যা নির্ভরশীল আর সক্ষম জনসংখ্যার অনুপাত দাঁড়ায় ১.৭ এ। কর্মক্ষম জনসংখ্যার বৃদ্ধির প্রথমার্ধে  ১৯৮০ থেকে ১৯৯৫ সালের মধ্যে চীনের অর্থনীতি বছরে ১০.৫% হারে বাড়তে থাকে। যদিও চীনের ইন্ডাস্ট্রিয়াল সেক্টরের পক্ষে সেই মুহূর্তে প্রতিবছর ১ কোটি কর্মীকে কাজ দেয়ার সক্ষমতা ছিল না, কারণ চীনে সেই মুহূর্তে শিল্পের বিকাশ খুব ধীরে হচ্ছিল। পরবর্তীতে রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠান এবং অর্থনৈতিক ব্যবস্থা উদার অর্থনীতি গ্রহণ করার কারণে দারুণভাবে দক্ষতা ও সক্ষমতা অর্জন করে। চীন সেই সময়ে শ্রমভিত্তিক শিল্পের চেয়ে স্থানীয় পুঁজিভিত্তিক শিল্পকে প্রাধান্য দেয়, যে কারণে সামগ্রিক ভাবে চীনের অর্থনীতিতে উল্লম্ফন দেখা যায় পরবর্তী দশকগুলোতে।

দ্বিতীয়ার্ধে, ১৯৯৫ থেকে ২০১৫, সময়ে এসে চীনের উচ্চ প্রবৃদ্ধি অব্যাহত ছিল। জিডিপি’র ৪০% সঞ্চয় হার, এবং অব্যাহত বিদেশী বিনিয়োগের ফলে শক্ত ভিত্তিতে দাঁড়িয়ে যায় চীনের অর্থনীতি, যার প্রভাব বর্তমানে বিশ্ব বাণিজ্যে পরিলক্ষিত হচ্ছে। 

যদিও চীনের ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ড এর সময়কাল ২০১৫-তে শেষ হয়েছে গিয়েছে, কিন্তু সেই কর্মক্ষম গোষ্ঠীকে সুযোগ সুবিধা দিয়ে তদের সক্ষমতাকে কাজে লাগানোর কারণে ২০২২ সালে চীনের পার ক্যাপিটা ইনকাম ছিল ১২,৭২০ ডলার, যা ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডের প্রথমার্ধে (১৯৮০-১৯৯৫) ছিল গড়ে ৩১৯ ডলার এবং দ্বিতীয়ার্ধে (১৯৯৬ থেকে ২০১৫) যার গড় ছিল ৩১০৬ ডলার।

ভারত


ভারতে ১৮ থেকে ৩৫ বছর বয়সী ৬০ কোটিরও বেশি লোকের বাসস্থান, যার ৬৫% লোকের বয়স ৩৫ বছরের কম। ভারতের জনসংখ্যাগত এই সুবিধা কমপক্ষে ২০৫৫-৫৬ পর্যন্ত টিকে থাকবে বলে আশা করা হচ্ছে এবং ২০৪১ সালের দিকে সর্বোচ্চ হবে, যখন কর্মক্ষম বয়সী অর্থাৎ ২০ থেকে ৫৯ বছর বয়েসী জনসংখ্যা হবে ৫৯%। এটি এমন একটি সুযোগ যা সঠিক শর্ত এবং অর্থনৈতিক অবকাঠামো প্রয়োগ করলে ২০২৫ এর মধ্যে চীনকে টেক্কা দিয়ে পৃথিবীর সবচেয়ে বৃহৎ অর্থনীতির দেশ হবে ভারত। ইউএস পরিসংখ্যান ব্যুরো এমনটাই ভবিষ্যদ্বাণী করেছে।

যোগাযোগব্যবস্থার উন্নয়ন, কাঠামোগত উন্নয়ন, শিল্পোন্নয়নের জিডিপি’র সঠিক ব্যাবহার, শিক্ষার ব্যাপ্তি, জনগণের জীবনমান, চিকিৎসা সুবিধা বৃদ্ধির এই ধারা যদি ভারত ধরে রাখতে পারে তাহলে প্রতি বছর ২% হারে মাথাপিছু জিডিপি বৃদ্ধি পাবে বলে ধারনা করা হচ্ছে। এছাড়াও ভারতের জনগণের জীবনমান বৃদ্ধির জন্য খাদ্য, খাবার পানি, জ্বালানিসহ ভবিষ্যতের ন্যূনতম মৌলিক অধিকারগুলো নিশ্চিত করার জন্য সরকার, প্রশাসন এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলোর আন্তরিক চেষ্টা খুবই জরুরি।

ডেমোগ্রাফিক ডিভিডেন্ডকে সক্ষমতায় পর্যবসিত করার নিয়ামকসমূহ:


সর্বোচ্চ কর্মক্ষম জনসংখ্যা শুধু থাকলেই হয় না, সেই কর্মক্ষমতাকে কাজে লাগাতে কিছু মৌলিক অবকাঠামো প্রয়োজন। যা নিশ্চিত করতে পারে রাষ্ট্র এবং রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানগুলো।

 ১. যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নয়ন: যেকোনো জনপদে উন্নয়নের প্রধান নিয়ামক হচ্ছে যোগাযোগ ব্যবস্থা। স্থানীয় মেধা, শ্রম, পণ্য উন্নতি এবং বৃদ্ধির লক্ষে অনায়াসে যেন সেইসকল স্থানে অভিবাসন করতে পারে, যেখানে উপযোগিতা বা চাহিদা আছে। তবেই স্থানীয় জনগণের আয় বাড়বে, বাড়বে দক্ষতা, বাড়বে জীবনমান। মাইক্রো ইকোনমির এই বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখে যোগাযোগ ব্যবস্থা। 

ইতোমধ্যে আমরা দেখেছি বাংলাদেশের যোগাযোগ খাতে বৈপ্লবিক যুগে সূচনা হয়েছে পদ্মা সেতুর স্বপ্নপুরণের মাধ্যমে। একই সাথে, সড়ক, রেল, নৌ প্রতিটা ক্ষেত্রেই অভাবনীয় সাফল্য লক্ষ্য করা গেছে বিগত বছরগুলোতে। এই যোগাযোগ ব্যবস্থার উন্নতির কারণে স্থানীয় উপযোগ সৃষ্টির সাথে সাথে বেড়েছে সার্বিক উপযোগ পূরণে পণ্য ও মেধার অবাধ অভিবাসন।

২. শিক্ষা মেধা উন্নয়ন:


কর্মক্ষম জনসংখ্যাকে অনুৎপাদনশীল খাতে ব্যবহার করলে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি হবে না। শুধু অল্প টাকায় কায়িক শ্রম বিক্রি করে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জন সম্ভব নয়। কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর মেধা আর দক্ষতা বৃদ্ধিতে তাই শিক্ষার ভূমিকা সবচেয়ে বড় নিয়ামক হিসাবে কাজ করে। আধুনিক সময় ও চাহিদার সাথে মিল রেখে সমন্বিত ও কার্যকর উৎপাদনমুখী শিক্ষাব্যবস্থা একটি জাতির মূল মেরুদণ্ড গড়ে দেয়।

শুধু নিরক্ষরতা দূরীকরণই না, আমাদের কর্ম-ভিত্তিক শিক্ষার দিকে মনোযোগ দিতে হবে। সেই লক্ষে সারাদেশে ৪৯টি নতুন পলিটেকনিক্যাল ইন্সটিটিউট করা হয়েছে, আর এছাড়াও প্রতিটা জেলায় হয়েছে আধুনিক বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়।


সবাইকে উচ্চশিক্ষায় শিক্ষিত করতে হবে, এমন কোন কথা নাই, এটা অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও নিশ্চিত করে না। প্রয়োজন মধ্যম সারির কর্মক্ষেত্রগুলোতে মেধা আর উপযুক্ত কারিগরি প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করা। কৃষি চাষ বা পোল্ট্রি ব্যবসা করা একজন কৃষক বা খামারি যেন উপযুক্ত জ্ঞান আর প্রশিক্ষণ নিয়ে তার উৎপাদনকে শুধু বৃদ্ধিই করলে হবে না, সঠিক প্রশিক্ষণ আর জ্ঞানের মাধ্যমে পণ্যের গুনগত মান নিশ্চিত করতে হবে। এই প্রশিক্ষণ আর মেধা উন্নয়ন নিশ্চিত করতে হবে সরকারকে।

৩. বিদ্যুৎ জ্বালানি:


কর্মক্ষম জনগোষ্ঠীর সক্ষমতা বৃদ্ধি আর উৎপাদনশীলতার জন্য প্রয়োজন জ্বালানির। সেটা বিদ্যুৎ থেকে শুরু করে শিল্প ও কৃষির জ্বালানি নিশ্চিত করতে হবে। তবেই শিল্প ও কৃষির বিকাশ সম্ভব।

বাংলাদেশের উল্লেখযোগ্য খাতগুলোর মধ্যে যে খাতে সবচেয়ে বেশি বিনিয়োগ আর উন্নতি হয়েছে তার অন্যতম হচ্ছে বিদ্যুৎ খাত। বর্তমানে বিদ্যুৎ খাতের সক্ষমতার চিত্র নিম্নরূপ:


 


৪. শিল্পায়ন

বিশ্বানের যুগে শিল্পের চাহিদা সর্বত্র, হোক সে মাঝারি শিল্প বা ভারীশিল্প। শিল্পায়নই পারে সর্বোচ্চ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি আনতে। শিল্পের বিকাশের জন্য কিছু অবকাঠামোগত উন্নয়ন  প্রয়োজন, একইসাথে প্রয়োজন ভৌতিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন। অবকাঠামোগত উন্নয়নের জন্য প্রয়োজন আধুনিক যোগাযোগ ব্যবস্থা, যেন পণ্য ও কাঁচামাল খুব অল্প খরচে দ্রুত পরিবহন করা যায়, তেমনি প্রয়োজন এনার্জির, যেন নিরবচ্ছিন্ন উৎপাদন অব্যাহত রাখা যায়। এবং প্রয়োজন সর্বরকম সুযোগ সুবিধা সম্বলিত শিল্পাঞ্চল।

শিল্পোন্নয়নের সেই লক্ষ্যকে সামনে রেখে শিল্পের বহুমুখীকরণ এবং কর্মসংস্থান, উৎপাদন ও রপ্তানি বৃদ্ধির মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নকে উৎসাহিত করার লক্ষ্যে দেশের সম্ভাব্য এলাকায় অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার কাজ এগিয়ে চলছে। সেই লক্ষ্যমাত্রা নিয়ে, BEZA এখন পর্যন্ত ৬৮টি সরকারি ও ২৯টি বেসরকারি ইকোনমিক জোন নিয়ে দেশব্যাপী ৯৭টি অর্থনৈতিক অঞ্চল প্রতিষ্ঠার অনুমোদন দিয়েছে। এই অনুমোদিত ইকোনমিক জোন গুলোর জন্য সম্ভাব্যতা নিরূপণ, জমি অধিগ্রহণ এবং এলাকা নির্দিষ্ট সামাজিক এবং পরিবেশগত উদ্যোগগুলি চিহ্নিত করা হয়েছে। এখন চলছে শিল্পাঞ্চল তৈরির কার্যক্রম।

ভৌতিক অবকাঠামোগত উন্নয়নের লক্ষ্য হিসাবে প্রণয়ন করা হয়েছে জাতীয় শিল্পনীতিত২০২২। দেশিয় কাঁচামাল ও সম্পদ ব্যাবহার করে শ্রমঘন শিল্পায়নের পাশাপাশি চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের প্রযুক্তিগত সুবিধাকে ধারণ করে বাংলাদেশকে অর্থনৈতিকভাবে সমৃদ্ধ করা, খাতভিত্তিক উৎপাদনশীলতা বৃদ্ধি করা এবং উৎপাদিত পণ্যের গুনগতমানের উৎকর্ষ সাধনই জাতীয় শিল্পনীতি ২০২২ এর মূল উদ্দেশ্য।

৫. বৈদেশিক বিনিয়োগ


 যে কোন দেশের অর্থনৈতিক অগ্রযাত্রার মূল নিয়ামক হচ্ছে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে পারা। চীন পেরেছে, ভারত পারছে। আর এই জন্য প্রয়োজন সঠিক অবকাঠামোগত উন্নয়ন, স্থিতিশীল পরিস্থিতি,  কম মূল্যের শ্রমিক এবং সহনীয় নিয়মনীতি ও উদার অর্থনীতি। বাংলাদেশ বিগত দশকে বৈদেশিক বিনিয়োগ আকৃষ্ট করতে যথেষ্ট সক্ষমতার পরিচয় দিয়েছে। যদিও ২০২০/২১ এ মহামারির কারণে বিনিয়োগের ধারায় ছেদ পড়েছে, তবুই একটি স্থিতিশীল সরকার ব্যবস্থা ও স্থিতিশীল রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিশ্চিত করার ফলে বৈদেশিক বিনিয়োগের একটা উল্লম্ফন দেখা গেছে বিগত দশকে।

আন্তর্জাতিক মান অনুযায়ী অর্থনৈতিক অঞ্চল গড়ে তোলা হচ্ছে বাংলাদেশে, যা আন্তর্জাতিক কোম্পানিগুলোকে এখানে বিনিয়োগে আকৃষ্ট করবে। BEZA সূত্রে জানা গেছে, এই অর্থনৈতিক অঞ্চলে অটোমোবাইল অ্যাসেম্বলি, মোটরসাইকেল, মোবাইল হ্যান্ডসেট, এগ্রো ফুড, লাইট ইঞ্জিনিয়ারিং, গার্মেন্টস, ফার্মাসিউটিক্যাল, প্রতিষ্ঠানসহ বিভিন্ন খাতের কোম্পানি স্থাপন করা হবে। টয়োটা, মিতসুবিশি এবং সুমিতোমোর মতো জাপানি কোম্পানি ইতোমধ্যেই বিনিয়োগের আগ্রহ দেখিয়েছে।

৬. কর্মসংস্থান

 চতুর্থ শিল্প বিপ্লব আসছে ও আধুনিক বিশ্বের প্রযুক্তি পরিবর্তন হচ্ছে। ফলে আমাদের উৎপাদন, প্রযুক্তি ও শ্রমিকদের দক্ষতা সেটার ব্যাপক পরিবর্তন করা দরকার। তার পরিপ্রেক্ষিতে সরকার জাতীয় কর্মসংস্থান নীতি ২০২২ প্রণয়ন করেছে।  এর মূল উদ্দেশ্য দেশের শ্রমজীবী মানুষের কল্যাণ ও কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি।  কর্মসংস্থানপ্রত্যাশী মানুষের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি, জনশক্তিকে কর্মশক্তি উপযোগী ও দক্ষ  করে তোলার মাধ্যমে বেকারত্বহীন দারিদ্রমুক্ত উন্নত সমাজ প্রতিষ্ঠাই এই নীতির লক্ষ্য। নীতির লক্ষ্য ২০৩০ সালের মধ্যে প্রায় ৩ কোটি নতুন চাকরি তৈরি করা এবং ২০৪১ সালের মধ্যে বেকারত্বকে সর্বনিম্ন স্তরে নিয়ে যাওয়া।


নীতিমালায় উল্লেখ করা হয়েছে যে বেকার এবং "ছদ্মবেশী বেকার" লোকের সংখ্যা ২৭ লক্ষ এবং ১ কোটি ২৫ লক্ষ এবং ৬ কোটিরও বেশি লোক কাজ করতে সক্ষম। সরকারের সামগ্রিক রূপকল্প ২০৪১ অর্জনের লক্ষ্যে জনশক্তির দক্ষতা, উৎপাদনশীলতা ও কর্মসংস্থান বৃদ্ধির মাধ্যমে ২০২৭ সালের মধ্যে জাতীয় আয়ে শিল্পখাতের অবদান ৪০% উন্নীতকরণ এই নীতিমালার লক্ষ্য।


 

অর্থনৈতিক উল্লম্ফনের দিকে যাত্রা


অভ্যন্তরীণ অর্থনীতিতে লেনদেনের মাত্রা যেমন বৃদ্ধি পেয়েছে বিগত এক দশকে তেমনি বেড়েছে অভ্যন্তরীণ রাজস্ব সংগ্রহের পরিমাণ। ২৩-২৪ অর্থবছরে বাংলাদেশ সাড়ে ৭ লাখ কোটি টাকার বাজেট প্রণয়ন করেছে। যার মধ্যে প্রায় ৫৭% শতাংশ নিজস্ব আয় থেকে। এক দশক আগে রাষ্ট্রের আয়ের পরিমাণ ছিল ১,৭৬৩ বিলিয়ন টাকা, যা বর্তমানে ৪,৩০০ বিলিয়ন টাকার মতো। রাষ্ট্রের আয় বৃদ্ধির সাথে সেই আয় জনগণের জীবন মান উন্নয়নের জন্য সঠিক ভাবে ও পরিকল্পিত ভাবে খরচ করলেই রাষ্ট্রের প্রতিটা নাগরিক এর সুফল ভোগ করবে ব্যক্তিগত আয় বৃদ্ধির মাধ্যমে।

ব্যক্তির আয়, পরিবারের আয় বৃদ্ধি আর জীবন মানের উন্নতি ঘটলেই হবে শ্রেণি উন্নয়ন। নিম্নবিত্তের উল্লম্ফন হবে মধ্যবিত্ত শ্রেণিতে আর মধ্যবিত্ত শ্রেণির উল্লম্ফন হবে উচ্চবিত্ত শ্রেণিতে। রাষ্ট্রের উন্নয়নের একমাত্র লক্ষ্যই হচ্ছে জনসাধারণের শ্রেণি উন্নয়নের পথ নিষ্কণ্টক করতে পারা।

সকল অর্থনৈতিক সূচক এটাই নির্দেশ করে যে উন্নত দেশ হবার মতো সকল নিয়ামক বর্তমানে বাংলাদেশে উপস্থিত, শুধুমাত্র দরকার এই নিয়ামকসমূহকে সঠিক ভাবে পরিচালিত করতে পারা। অন্তত আগামী ১০ বছর এই ধারা ধরে রাখতে পারলে বাংলাদেশের অর্থনীতি হবে ট্রিলিয়ন ডলারের অর্থনীতি, যেখানে থাকবে প্রচুর কর্মসংস্থান থাকবে প্রচুর দক্ষ শ্রমিক আর শ্রেণি উন্নয়নের অপার সম্ভাবনা।

লেখক: রিসার্চ এসোসিয়েট

এ সম্পর্কিত আরও খবর