মাননীয় প্রধানমন্ত্রী, মৌলিক চাহিদা পূরণে জাতি আপনার পথপানে চেয়ে আছে

, যুক্তিতর্ক

মো. কামরুল ইসলাম | 2023-08-31 23:18:10

সাধারণ জনগণ মূল্যস্ফীতি বোঝে না, বোঝার দরকারও নেই। জনগণ শুধু নিজের উপার্জন দিয়ে নিত্যদিনের চাহিদা পূরণ করতে পারলেই যথেষ্ট মনে করে। কিন্তু জনগণ কি সেটা পারছে? এর উত্তর কি উত্তরদাতাদের কাছে আছে?

বিশ্ব বাজারে জ্বালানি তেলের মূল্য অনেকদিন ধরেই অস্থিতিশীল। রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারনে জ্বালানি তেলের বাজার ছিলো ঊর্ধ্বমূখী। গত কিছুদিন ধরে তা আবার নিম্নমূখীও। বাংলাদেশের নাগরিক হিসেবে মনে হয় স্বপ্ন দেখছিলাম গত ৫ আগস্ট, শুক্রবার। রাত ১০ টায় গণমাধ্যমের কল্যাণে জানতে পারলাম নিত্যদিনের ব্যবহার্য দ্রব্য জ্বালানি তেল যেমন-কেরোসিন, ডিজেল, পেট্রোল, অকটেন এর দাম প্রায় ৫০ শতাংশের মতো একলাফে বৃদ্ধি পেয়েছে। তখন ভেবেছিলাম স্বপ্ন ভাঙ্গলে সব কিছু আগের অবস্থায় দেখতে পাবো। কিন্তু সেটা তো স্বপ্ন ছিলো না, ছিলো বাস্তব। তারপর সহজেই অনুমেয় কি অপেক্ষা করছে আমাদের আর্থ-সামাজিক পরিস্থিতির?

কিছুদিন আগেই মাননীয় প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা জনগণকে আশ্বস্ত করেছিলেন স্পষ্টভাবে জ্বালানি তেলের রিজার্ভ নিয়ে, চাহিদা নিয়ে। জাতি হিসেবে সব সমস্যার সমাধানের কেন্দ্রবিন্দু হচ্ছে আমাদের প্রধানমন্ত্রী। বাংলাদেশে সাম্প্রতিককালে বহু সমস্যার সমাধান করতে দেখেছি প্রধানমন্ত্রীর একক সিদ্ধান্তে। জ্বালানি তেল নিয়ে যে সংকট সৃষ্টি হয়েছে, জাতি আজও প্রধানমন্ত্রীর সুচিন্তিত সিদ্ধান্তের পথপানে চেয়ে আছে।

গণমাধ্যমের বদৌলতে দেখতে পাই, সব বিষয়ে সবাই কেমন জানি বিশেষজ্ঞ বনে যাচ্ছেন? সবাই অর্থনীতিবিদ হয়ে যাচ্ছেন, মাইক্রো থেকে ম্যাক্রো ইকনোমিকস নিয়ে কথা বলা শুরু করে দিয়েছেন। নিজের মতো করে ব্যাখ্যা দেয়ার চেষ্টা করছেন, মূল্যস্ফীতি বুঝিয়ে দিচ্ছেন জনগণকে। কেউ কেউ বলার চেষ্টা করছেন, যুক্তরাষ্ট্র যুক্তরাজ্য থেকেও আমরা ভালো আছি কারন আমাদের মূল্যস্ফীতি তাদের থেকে কম। কথায় কথায় বাংলাদেশকে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র, সিঙ্গাপুরের সাথে তুলনা করে ফেলি। আমরা সেখানে কি আদৌ পৌঁছেছি?

দয়া করে নিজেদের মতো করে নয়, অর্থনীতির ভাষায় মূল্যস্ফীতি কি আমাদের মতো আম জনতাকে একটু বুঝিয়ে বলবেন? ডলার এর বিপরীতে টাকার মারাত্নক অবমূল্যায়ন, জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বি, চাল, ডাল, ভোজ্য তেল সহ নিত্যপন্যের দাম যখন ক্রয়সীমার বাহিরে তখনও মূল্যস্ফীতি নাকি আগের জায়গায় আছে। মূল্যস্ফীতির সংজ্ঞাই আজ পরিবর্তন হওয়ার পথে।

বাংলাদেশের পরিবহন ব্যবসায়ীরা সবসময়ই সুযোগের অপেক্ষায় থাকেন। গত বছর যখন ডিজেলের দাম বাড়ানো হলো রাতারাতি সকল গ্যাস চালিত পরিবহন ডিজেল চালিত হয়ে গেলো। শুধু ভেবেছিলাম সিএনজি পাম্পগুলোর কি হবে?

জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি পেলেই পরিবহন ব্যবসায়ীদের লাভের অংশ জ্যামিতিক হারে বেড়ে যায়। যাত্রীদের সাথে পরিবহন শ্রমিকদের অসৌজন্যমূলক আচরনের মাত্রা বেড়ে যায়। যা সত্যিই কষ্টদায়ক। সব অনিয়মই যেন নিয়মে পরিনত হয়ে যাচ্ছে। যাত্রী ভাড়ার ব্যাপারে সরকারের সিদ্ধান্তকেও তোয়াক্কা করে না। ওয়েবিল নামের যন্ত্রণা থেকে বিআরটিএ কোনোভাবেই যাত্রীদের রক্ষা করতে পারছে না।

অনেক নীতিনির্ধারকদের ভাষ্যমতে, বিপিসিকে দেউলিয়া হতে বাঁচাতেই নাকি জ্বালানি তেলের মূল্য বৃদ্ধি করতে হয়েছে। ভারতে তেলের পাচার রোধ ঠেকানোর জন্যও নাকি মূল্য বৃদ্ধি করতে হয়েছে। যখনই অবাধ পাচারের কথা বলা হয়ে থাকে তখন আবার বর্ডার গার্ড বাংলাদেশ (বিজিবি) এর সদস্যদের দায়িত্বে অবহেলার কথা উঠে আসে। বক্তব্যগুলো হওয়া উচিত গঠনমূলক, যেন সাংঘর্ষিক না হয়। 

আবার সংবাদ মাধ্যমের বদৌলতে জানতে পারছি গত কয়েক বছরে বিপিসি ৪৮ হাজার কোটি লাভ করেছে। বিপিসির সর্বশেষ বক্তব্যেও উঠে আসছে প্রতি লিটার ডিজেলে ৬ টাকা ভর্তুকি দিবে আর অকটেন থেকে ২৫ টাকা লাভ করবে। দেশের বর্তমান অবস্থায়ও জনগনের টাকায় পরিচালিত বিপিসি লাভ-ক্ষতির হিসাব করে, অথচ যেখানে সেবাটাই মূখ্য হওয়ার কথা।

বিশ্বের সার্বিক প্রেক্ষাপটের উপর ভিত্তি করে বলা যায় বাংলাদেশে শুধুমাত্র জ্বালানি তেলের উপর ভর্তুকি দিলেই বাজার স্থিতিশীল থাকার সুযোগ পেতো নিদেনপক্ষে বর্তমানের অস্থিরতা বিরাজ করতো না। এখন বিপিসিকে দেউলিয়া থেকে রক্ষা করতে যেয়ে বেঁচে থাকার জন্য প্রতিটি মৌলিক পণ্যের উপর ভর্তুকি দেয়ার প্রয়োজনীয়তা দেখা দিয়েছে। সেটা কি সরকারের পক্ষে সম্ভব?

জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি করার কারনে আজ সারাদেশে রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা দেখা যাচ্ছে। বক্তব্য আর পাল্টা বক্তব্যের মধ্যে পরিবেশ কিছুটা ভিন্নতা পাচ্ছে। কোনো প্রতিষ্ঠানের ভুল সিদ্ধান্ত সরকারকে বিব্রত করতে পারে। জনগনের জন্য কোনো সিদ্ধান্ত নেয়ার আগে ভবিষ্যতের কথা চিন্তায় রাখুন। মাথাপিছু আয় বেড়েই চলছে, কিন্তু জিনিসপত্রের ক্রয়মূল্য সীমা অতিক্রম করছে। বাস্তবে আয়ের সাথে ব্যয়ের সাংঘর্ষিক সম্পর্ক ঘনীভূত হচ্ছে, তা কোনোভাবেই কাম্য হতে পারে না।

আমরা শ্রীলংকা, পাকিস্তান, আফগানিস্তান হতে চাই না। আমরা বাংলাদেশী হয়েই পৃথিবীর মানচিত্রে মাথা উঁচু করে ভবিষ্যতকে সুরক্ষিত রেখে অগ্রসর হতে চাই। আমরা নিজেদের আয় দিয়েই ব্যয় মেটাতে চাই।

লেখক: মোঃ কামরুল ইসলাম, মহাব্যবস্থাপক- জনসংযোগ, ইউএস-বাংলা এয়ারলাইন্স

এ সম্পর্কিত আরও খবর