শীতের আগে ফুঁসছে করোনা, আসছে ঢেউয়ের পর ঢেউ!

, যুক্তিতর্ক

ড. মাহফুজ পারভেজ, অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 19:33:59

বাংলাদেশের পথেঘাটে মাস্ক ও সামাজিক দূরত্বহীন ড্যামকেয়ার পরিস্থিতি দেখে বৈশ্বিক মহামারি করোনার ক্রমবর্ধমান তাণ্ডব আঁচ করা যাবে না। শীতের প্রাক্কালে ফুঁসছে করোনা ভাইরাস। উত্তর গোলার্ধের শীতপ্রধান দেশগুলোতে শোনা যাচ্ছে মহাবিপদ ঘণ্টা।

করোনার ঢেউয়ের পর ঢেউ আছড়ে পড়ছে বিশ্বের দেশে দেশে। এক বছরে অনেকগুলো ছোবলের পর এবার করোনা ভাইরাস সংক্রমণের পঞ্চম ঢেউয়ে প্রবেশ করেছে ফ্রান্স। রাশিয়ায় চলছে চরম আঘাত। আতঙ্কিত জার্মানি। বিশ্বের দেশে আবার সার্বিক তোড়জোড় শুরু হয়েছে করোনা ঠেকাতে।

ফ্রান্সের স্বাস্থ্যমন্ত্রী অলিভার ভেরন বুধবার (১০ নভেম্বর) জানিয়েছেন সর্তকতা। ফলে দেশজুড়ে নতুন করে আতঙ্ক শুরু হয়েছে। যারা আশা করেছিলেন অবিলম্বে সংক্রমণের হাত থেকে রক্ষা পাবেন, তাদের মধ্যেও এখন আতঙ্ক দেখা দিয়েছে। কারণ, এখন শীতকাল। উত্তর গোলার্ধের এসব দেশে তাপমাত্রা থাকে হিমাঙ্কের নিচে। আর তাতেই ভাইরাসের বাড়বাড়ন্তের আশঙ্কা বিরাজমান।

মৃত্যুর দিক থেকে একদিনে সবচেয়ে বেশি মৃত্যু হয়েছে যুক্তরাষ্ট্রে, সেখানে একদিনে এক হাজার ৪৭৭ জনের মৃত্যু হয়, এরপরেই রয়েছে রাশিয়া এক হাজার ২১১ জন। আক্রান্তের দিক থেকেও সবার উপরে যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়া। রাশিয়া ছাড়াও তাদের প্রতিবেশী দেশ ইউক্রেনেও ব্যাপক সংক্রমণ ও মৃত্যু বেড়েছে। আফ্রিকায় চলছে করোনার পদধ্বনি।

পরিসংখ্যানের নিরিখে বিশ্বজুড়ে আবারও করোনাভাইরাসের সংক্রমণ ও মৃত্যু বাড়ছে। বিশ্বে গত ২৪ ঘণ্টায় সাত হাজার ৮৯০ জনের মৃত্যু হয়েছে। এসময়ে আক্রান্ত হিসেবে নতুন করে শনাক্ত হয়েছেন চার লাখ ৭৪ হাজার ৬১৮ জন। এছাড়া ভাইরাসে আক্রান্ত হওয়ার পর চিকিৎসা শেষে সুস্থ হয়ে উঠেছেন চার লাখ ৩৮ হাজার ১৪৫ জন।

করোনা নিজের খেয়ালে প্রকোপ হ্রাস-বৃদ্ধি করলেও বাংলাদেশেরদ মানুষ বলতে গেলে উদাসীন। উন্নত বিশ্বে তৃতীয় বা বুস্টার ডোজ নেওয়া সম্পন্ন হলেও এখানে টিকাকরণের হার শ্লথ। অনেকে টিকাই নেন নি। এক ডোজ নিয়ে ঝুলে আছেন বহুজন। নাম তালিকাবদ্ধ করেও ডাক পাচ্ছেন না বিপুল সংখ্যক মানুষ।

টিকার ধীর লয়ের সঙ্গে চরম ঔদাস্য সর্বত্র বিরাজমান। অনেকের হাবভাব দেখে করোনা আছে বলেই মনে হয় না। করোনার পুনঃবিস্তারে এমন শিথিল পরিস্থিতি বিপর্যয়ের কারণ হতে পারে।

বিশ্বের দেশে দেশে করোনা মনিটরিং অনেক সক্রিয়। সংশ্লিষ্ট বিভাগগুলো নিজ দায়িত্ব খুবই মনোযোগের সঙ্গে পালন করছে। নিয়মিত কত জন পজিটিভ, সে খবর প্রকাশিত হচ্ছে। সঙ্গে জানানো হচ্ছে, সংক্রমিতের মধ্যে কত জন টিকাপ্রাপ্ত।

সেসব দেশে দেখা যাচ্ছে, সংক্রমিতের বড় অংশই টিকাপ্রাপ্ত। এই তথ্য থেকে অনেক রকম ধারণাই করা যেতে পারে। যেমন, যাঁরা টিকা নিয়েছেন, তাঁরা বেশি সচেতন, সুতরাং জ্বর-সর্দিকাশিতে তাঁরা তাড়াতাড়ি পরীক্ষা করিয়েছেন। অথবা, টিকা নেওয়ার আত্মবিশ্বাসের চোটে তাঁরাই বেশি হইহই করে বেড়িয়েছেন।

সারা বিশ্বের ধারা অক্ষুণ্ণ থাকলে এখানেও দেখা যাবে, আইসিউ-এ ভর্তি যাঁরা, তাঁদের অধিকাংশই টিকা নেননি। এতে টিকাকরণ জোরদার করার গুরুত্বই তীব্রতর হয়। সঙ্গে নাগরিক ও সামাজিক সচেতনা এবং কোভিড প্রটোকল অনুযায়ী স্বাস্থবিধি মান্য করার বিষয়গুলোও জরুরি হয়ে সামনে চলে আসছে।

করোনার ঢেউয়ের পর ঢেউ এসে সর্বব্যাপী প্লাবন তৈরি করবে জেনে উন্নত বিশ্বের দেশগুলো বেশ আগে থেকেই প্রস্তুতি নিয়েছিল। এই ঢেউয়ে শিশুদের আক্রান্ত হওয়ার সম্ভাবনা বেশি, এমন খবর শুনে পেডিয়াট্রিক আইসিউ বেড বাড়ানোর প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছিল। মেডিক্যাল অফিসার ও কর্মীদের বিশেষ কোভিড ম্যানেজমেন্ট প্রশিক্ষণের কাজও হয়েছিল। তদুপরি করোনা বাড়তে না দেওয়ার মতো আনুষঙ্গিক পদক্ষেপও গৃহীত হয়েছিল ব্যক্তিগত, সামাজিক ও সরকারি তরফে। তারপরও ঢেউ এসেছে এবং আসছে। আর সেখানে মজবুত ভিত্তির উপর দাঁড়িয়ে ভাইরাসের বিরুদ্ধে লড়াই চলছে।

আমাদের মতো দেশের সামনে আপাতত উপায় কি? বাস্তব আয়োজন ও কার্যক্রমের গতি দেখে খুব হতাশা লাগাই স্বাভাবিক। তবুও লড়াই চালাতেই হবে। বিভিন্ন পর্যায় থেকে একযোগে লড়াই হলে জয়ের সম্ভাবনা বেশি। বিভিন্ন দেশের অবনতিশীল পরিস্থিতি ও অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে কর্তাব্যক্তিদের এখনই নড়েচড়ে বসা দরকার। জনগণকেও সচেতন, সতর্ক ও সাবধান করা জরুরি। সময়ের কাজ সময়েই করা ভালো। আগের কাজ পরে করে লাভ নেই। এখনকার আগাম প্রস্তুতি যথাযথ হলেই তখনকার বিপদ কম হবে।

ড. মাহফুজ পারভেজ, প্রফেসর, রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগ, চট্রগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়; অ্যাসোসিয়েট এডিটর, বার্তা২৪.কম।

এ সম্পর্কিত আরও খবর