জাবি উপাচার্যকে আবারো কালো পতাকা দেখালেন আন্দোলনকারীরা

বিবিধ, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 13:25:47

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফারজানা ইসলামকে ‘দুর্নীতিবাজ’ অ্যাখ্যা দিয়ে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও পদত্যাগের দাবিতে আবারো কালো পতাকা প্রদর্শন করেছেন আন্দোলনকারী শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা।

সোমবার (২৩ সেপ্টেম্বর) দুপুরে 'দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞানে এ কর্মসূচি পালন করেন তারা।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এক হাজার ৪৪৫ কোটি টাকার উন্নয়ন প্রকল্প থেকে ছাত্রলীগকে দুই কোটি টাকা ভাগ করে দেওয়ার অভিযোগ তুলে আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে উপাচার্যকে স্বেচ্ছায় পদত্যাগের আহ্বান জানানো হয়। এছাড়া চলমান ভর্তি পরীক্ষায় বিশ্ববিদ্যালয়ের সকল ভবনে উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করা হয়। তবে আন্দোলনকারীদের আন্দোলন উপেক্ষা করে গতকাল (২২ সেপ্টেম্বর) দিনের শেষে ভর্তি পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেন উপাচার্য।

এদিকে ‘অবাঞ্ছিত’ অবস্থায় আন্দোলনকারীদের সঙ্গে সম্ভাব্য ‘ঝামেলা’ এড়াতে উপাচার্য গতকাল বিকেলে কাউকে না জানিয়ে পরীক্ষা কেন্দ্র পরিদর্শন করেছেন বলে মনে করছেন ‘দুর্নীতির বিরুদ্ধে জাহাঙ্গীরনগর’ আন্দোলনের অন্যতম মুখপাত্র আশিকুর রহমান।

আরও পড়ুন: পদত্যাগের দাবিতে বিক্ষোভ মিছিল, পদে অনড় জাবি উপাচার্য

কর্মসূচিতে দর্শন বিভাগের অধ্যাপক আনোয়ারুল্লাহ ভূঁইয়া বলেন, ‘জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য যে অবস্থান নিয়েছেন তা সারাদেশের শিক্ষা ব্যবস্থাকে প্রশ্নবিদ্ধ করেছে। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক হিসেবে আমরা লজ্জিত। আমরা দেখেছি বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য তার পেটোয়া বাহিনী দিয়ে শিক্ষার্থীদের ওপর ন্যক্কারজনক হামলা চালিয়েছে। এই বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্যও চেয়েছিলেন আমরা ভর্তি পরীক্ষা বাধাগ্রস্ত করি। কিন্তু কোমলমতি ভর্তিচ্ছুকদের কোনো ক্ষতি আমরা করব না।’

তিনি আরও বলেন, ‘ভর্তি পরীক্ষা চলছে বলে আমরা নমনীয়ভাবে আমাদের কর্মসূচি পালন করছি। আমাদের নমনীয়তাকে দুর্বলতা ভাববেন না। ১ অক্টোবরের মধ্যে আপনি সসম্মানে পদত্যাগ না করলে বিশ্ববিদ্যালয়ের অচলাবস্থার দায় নিয়ে আপনি পদত্যাগ করতে বাধ্য হবেন।’

বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদের জাবি শাখার যুগ্ম আহ্বায়ক জয়নাল আবেদীন শিশির বলেন, ‘শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা আপনাকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা করেছে। এই ভয়ে দিনের শেষ সময়ে লুকোচুরি করে পরীক্ষা পরিদর্শনে গেলেন। আর দুটো ছবি তুলে ঘোষণা করলেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ভালোভাবে চলছে। আন্দোলনকারীরা আপনাকে সাত দিনের আল্টিমেটাম দিয়েছে। তিনদিন অতিবাহিত হওয়ার পরেও আপনার অবস্থান পরিষ্কার না করে দৃষ্টটা প্রদর্শন করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সচেতন শিক্ষক শিক্ষার্থীরা এই দৃষ্টটার উচিত জবাব দেবে।’

কর্মসূচিতে অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন- বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক সোহেল রানা, নৃবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক সাঈদ ফেরদৌস, অধ্যাপক মির্জা তাসলিমা সুলতানা, দর্শন বিভাগের অধ্যাপক রায়হান রাইন, অধ্যাপক কামরুল আহসান, পরিবেশ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক জামাল উদ্দিন রুনু, বাংলা বিভাগের অধ্যাপক শামীমা সুলতানা, সহযোগী অধ্যাপক নাজমুল হাসান তালুকদার, অধ্যাপক তারেক রেজা প্রমুখ।

এছাড়া জাহাঙ্গীরনগর সাংস্কৃতিক জোট, ছাত্র ইউনিয়ন, সমাজতান্ত্রিক ছাত্র ফ্রন্ট, বাংলাদেশ সাধারণ ছাত্র অধিকার সংরক্ষণ পরিষদ জাবি শাখার নেতা কর্মীরা অংশগ্রহণ করেন।

এর আগে বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন প্রকল্পে দুর্নীতি ও অপরিকল্পনার অভিযোগ এনে তিন দফা দাবিতে আন্দোলন শুরু করেন শিক্ষক-শিক্ষার্থীরা। আন্দোলন চলা অবস্থায় চাপের মুখে গত ১২ সেপ্টেম্বর আন্দোলনকারীদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে বাধ্য হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। আলোচনায় তোপের মুখে দুটি দাবি মেনে নেয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

তবে দুর্নীতির বিচার বিভাগীয় তদন্তের দাবিটি অমীমাংসিত রেখেই শেষ হয় সেদিনের আলোচনা সভা। পরবর্তীতে ১৮ সেপ্টেম্বর আবারও আলোচনায় বসেন বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন ও আন্দোলনকারী শিক্ষক শিক্ষার্থীরা। কিন্তু আলোচনা সভা ফলপ্রসূ না হওয়ায় উপাচার্যকে অবাঞ্ছিত ঘোষণা ও আগামী ১ অক্টোবরের মধ্যে পদত্যাগের দাবি জানান তারা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর