হলে সিট নিয়ন্ত্রণে ছাত্রলীগ, কোণঠাসা রাবি প্রশাসন

বিবিধ, ক্যাম্পাস

সাইফুল্লাহ সাইফ, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-28 10:20:45

রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) প্রায় অধিকাংশ ছাত্র হলে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের বিরুদ্ধে অবৈধভাবে সিট দখল ও বণ্টনের অভিযোগ পাওয়া গেছে। নিয়ম অনুযায়ী, সিট বণ্টনের দায়িত্ব হল কর্তৃপক্ষের। কিন্তু ছাত্রলীগ নেতাকর্মীর বেপরোয়া আচরণে কর্তৃপক্ষ প্রায় কোণঠাসা। ফলে নিয়ম-নীতির তোয়াক্কা না করে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরাই হলের সিট বণ্টন করেন। ফলে হলে বৈধ সিট পেতে ভোগান্তিতে পড়েছেন আবাসিক শিক্ষার্থীরা।

হলগুলোতে খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, দলের বিভিন্ন কর্মসূচিতে অংশগ্রহণ ও দলে ভেড়ানোর শর্তে দলীয় কর্মী কিংবা পছন্দের কোনো ছোট ভাইকে হলে সিট দিচ্ছেন ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। আর যারা সিট পাচ্ছেন তাদের অনেকে সংশ্লিষ্ট হলে সংযুক্তি থাকে না। এমনকি যারা এভাবে সিট বণ্টন করেন তাদের অধিকাংশই সংশ্লিষ্ট হলের না। এছাড়া অনেক নেতাকর্মীর বিরুদ্ধে টাকার বিনিময়ে সিট দেওয়ার অভিযোগ আছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শের-ই বাংলা হলের বাবর নামের এক ছাত্রলীগ নেতা আকাশ (ছদ্মনাম) নামের এক শিক্ষার্থীর কাছে তিন হাজার টাকায় সিট বিক্রি করেন। শুধু বাবর নয়, তার মতো অনেক শিক্ষার্থী টাকার বিনিময়ে সিটের ব্যবস্থা করে দেন।

তবে এ বিষয়ে বক্তব্য জানতে ছাত্রলীগ নেতাকর্মীদের কয়েকজনের সঙ্গে ফোনে যোগাযোগ করা হলে তারা ফোন রিসিভ করেননি।

আরও জানা যায়, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শের-ই বাংলা হল, সোহরাওয়ার্দী হল, মাদার বখশ, জিয়াউর রহমান, নবাব আব্দুল লফিত হল, জোহা হল ও হবিবুর রহমান হলে বিভিন্ন সময় ছাত্রলীগের কর্মীরা রুমে রুমে গিয়ে মাস্টার্সের শিক্ষার্থীদের লিস্ট করেন। তাদের পরীক্ষা কবে শেষ এবং কবে তারা হল ছাড়বেন এ সময়গুলো লিখে নেন। এসব শিক্ষার্থী চলে গেলে ওই সিটগুলো দখলে নেয় ছাত্রলীগ।

এছাড়া প্রায় প্রতিটি হলেই পলিটিক্যাল ব্লক নামে দখলে রাখা হয়েছে অসংখ্য সিট। তবে কর্তৃপক্ষ যাদের বরাদ্দ দিয়েছে তারা সিটে উঠতে না পারলেও নিয়মিত হল ভাড়া পরিশোধ করেন। এছাড়া হল প্রশাসন যদি কোনো শিক্ষার্থীকে সিটে তুলে দেয় তাহলে পরবর্তীতে ছাত্রলীগ নেতারা তাদেরও বের করে দেন।

খোঁজ নিয়ে আরও জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের হবিবুর রহমান হলের ৪০৫ নম্বর রুমে অবৈধভাবে থাকছেন বরেন্দ্র বিশ্ববিদ্যালয়ের জার্নালিজম বিভাগের চতুর্থ সেমিস্টারের শিক্ষার্থী সাদিক। ওই হলের ছাত্রলীগ নেতা মিনহাজ তাকে হলে তুলেছেন বলে জানা গেছে।

এ বিষয়ে হবিবুর রহমান হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক জাহিদুল ইসলাম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমি বিষয়টি জানি না। তবে খোঁজ নিয়ে দেখছি। কেউ এমন করে থাকলে তার বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

এদিকে, গত ৯ সেপ্টেম্বর শিক্ষার্থী সাকিবুল হাসান হবিবুর রহমান হলে উঠতে গেলে হল ছাত্রলীগের নেতা মিনহাজুল ইসলাম তাকে বাধা দেন। জোরপূর্বক সিট থেকে তার জিনিসপত্র ফেলে দিয়ে সিটটি দখলে নেয় মিনহাজ। পরে বিষয়টি মীমাংসা হয়।

ঠিক এর আগের দিন একই ঘটনা ঘটে সোহরাওয়ার্দী হলে। উদ্ভিদবিজ্ঞান বিভাগের এক শিক্ষার্থীকে হলের ৩৪৭ নম্বর কক্ষে তুলে দেন হল প্রাধ্যক্ষ। পরে শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি মাহমুদুল হাসান শাকিল তাকে সিট থেকে নামিয়ে দেন। প্রাধ্যক্ষ শাকিলের কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে সে প্রাধ্যক্ষের সঙ্গে খারাপ আচরণ করেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরিয়াল বডি গিয়ে বিষয়টি সমাধান করেন। এছাড়া ওই হলের ছাত্রলীগ কর্মী মাজহারুল ইসলামের বিরুদ্ধেও অবৈধভাবে সিট দখলের অভিযোগ রয়েছে।

এছাড়া গত ১ ফেব্রুয়ারি মতিহার হল থেকে অবৈধ এক শিক্ষার্থীকে হল থেকে বের করে দেন প্রাধ্যক্ষ আলী আসগর। পরে আবার ওই শিক্ষার্থীকে হলে তুলে দেয় ছাত্রলীগ। এ ঘটনার জেরে প্রাধ্যক্ষ আলী আসগর পদত্যাগ করেন।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক হল প্রাধ্যক্ষ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘গায়ের জোরে কিংবা দল ভারি করতেই হলগুলোতে এসব কর হচ্ছে। যারা অবৈধ তাদের হল থেকে বের করে দিতে গেলে বিভিন্নভাবে বাধা আসে।’

জানতে চাইলে রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমরা দুয়েকদিনের মধ্যেই হলের দায়িত্বে থাকা নেতাকর্মীদের নিয়ে বসবো। হলগুলোতে স্বাভাবিক পরিস্থিতি যেন বজায় থাকে আমরা সেই চেষ্টাই করব।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাধ্যক্ষ পরিষদের আহ্বায়ক অধ্যাপক রেজাউল করিম বকসী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, ‘আমি এ বিষয়ে শুনেছি। আগামী দুয়েকদিনের মধ্যেই উপাচার্যের সঙ্গে হল প্রাধ্যক্ষরা বসে এগুলোর বিষয়ে সিদ্ধান্ত নেব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর