অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে শিক্ষকদের মানববন্ধন

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-28 04:30:39

বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসন বিরোধী অভিন্ন নীতিমালা বাতিলের দাবিতে মানববন্ধন করেছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম। এতে বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে আসা প্রায় তিন শতাধিক শিক্ষক অংশ নেন।

বৃহস্পতিবার (৫ সেপ্টেম্বর) ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) রাজু ভাস্কর্যের সামনে এ মানববন্ধন অনুষ্ঠিত হয়।

মানববন্ধনে বক্তারা দাবি করেন, বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই নিজের মান নির্ধারক। যাবতীয় নীতিমালা বিশ্ববিদ্যালয়ের সিন্ডিকেটই ঠিক করবে। অভিন্ন নীতির প্রয়োজন নেই। অভিন্ন নীতিমালা বাতিল চেয়ে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার হস্তক্ষেপ চেয়েছেন শিক্ষকরা।

মানববন্ধনে শিক্ষক ফোরামের প্রধান সমন্বয়ক ঢাবির পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক কামরুল ইসলাম মামুন বলেন, ‘যারা বিশ্ববিদ্যালয়কে অভিন্ন নীতিমালায় অন্তর্ভুক্ত করতে চায়, তারা বিশ্ববিদ্যালয় কি সেটাই বুঝে না। বিশ্ববিদ্যালয়ে পার্লামেন্ট সম একটা সিন্ডিকেট থাকে তারাই বিশ্ববিদ্যালয়ের যাবতীয় নীতি ঠিক করবে। পৃথিবীতে এমন কোনো বিশ্ববিদ্যালয় নেই যেটা অভিন্ন নীতিমালার অন্তর্ভুক্ত। উচ্চ শিক্ষাকে ধ্বংসের দ্বারপ্রান্তে নিয়ে যেতেই এ নীতি। এই কালো চক্রান্ত রুখতে হবে। আমরা শিক্ষক ফোরাম এই অভিন্ন নীতিমালা দৃঢ়কণ্ঠে প্রত্যাখ্যান করি।’

আরেক শিক্ষক নাসরিন সুলতানা বলেন, ‘আমরা শিক্ষক। আমাদের কাজ শিক্ষা দেওয়া, জাতি গঠনে ভূমিকা পালন করা। আমরা রাজ পথে নামতে চাই না। আমাদেরকে রাজপথে নামতে বাধ্য করবেন না।’

তিনি আরও বলেন, ‘অভিন্ন নীতিমালার নামে যে পথে হাঁটছে সরকার, সেটা আমরা মানি না। বিশ্ববিদ্যালয়ের সব দায় দায়িত্ব শিক্ষকরাই নেবে। আমরা আমলাতান্ত্রিক হস্তক্ষেপ মানি না।’

এর আগে প্রধান সমন্বয়কের পক্ষে বিবৃতি দেন ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ের আলতাফ হোসেন রাসেল। বিবৃতিতে তিনি বলেন, ‘জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে স্বায়ত্তশাসন দিয়ে এ দেশের শিক্ষাব্যবস্থার একটি যুগান্তকারী শুভসূচনা করেছিলেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের মানোন্নয়নকে স্বায়ত্তশাসনের আওতায় রেখে, অর্থ সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের আকার নির্ধারণের দায়িত্ব দিয়ে ১৯৭৩ সালের অন্য একটি অধ্যাদেশে তিনি বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশন (ইউজিসি) প্রতিষ্ঠা করেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের আর্থিক চাহিদা নির্ধারণ, সরকারের কাছ থেকে তহবিল গ্রহণ করে বণ্টন কিংবা বরাদ্দ, উচ্চশিক্ষা বিষয়ে তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ এবং সার্বিক উন্নয়ন মূল্যায়নসহ উচ্চশিক্ষার সম্প্রসারণে সরকারকে পরামর্শ দেওয়া অধ্যাদেশ-প্রদত্ত বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের কাজ। এতে খুব সুস্পষ্টভাবে প্রতীয়মান হয় যে, স্বায়ত্তশাসনের আলোকে বিশ্ববিদ্যালয় নিজেই নিজের মান নির্ধারণ করবে।’

তিনি আরও বলেন, ‘বিভিন্ন গণমাধ্যমে প্রকাশিত সংবাদের মাধ্যমে আমরা ইতোমধ্যেই অবগত হয়েছি, গত ২৫ আগস্ট মন্ত্রণালয়ে শিক্ষামন্ত্রীর সভাপতিত্বে ইউজিসির প্রতিনিধিদের সমন্বয়ে প্রণীত একটি অভিন্ন নীতিমালা গৃহীত হয়েছে। এই নীতিমালায় বলা হয়েছে- বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের মান ও ডিগ্রিপ্রাপ্ত শিক্ষার্থীদের মধ্যে জ্ঞান-বিজ্ঞানের যে বৈষম্য বিরাজ করছে তা এবং জাতীয় বেতন স্কেল-২০১৫ প্রণয়নের পর শিক্ষকদের বেতন কাঠামো নিয়ে সৃষ্ট জটিলতা দূরীকরণের লক্ষ্যে এই অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করা হয়েছে।’

আলতাফ হোসেন রাসেল বলেন, ‘বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক ফোরাম মনে করে, বর্তমান বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাকে ঢালাওভাবে বৈষম্যপূর্ণ আখ্যা দিয়ে ইউজিসি যে অভিন্ন নীতিমালা প্রণয়ন করেছে তা বৈচিত্র্যপূর্ণ উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে এক ধরনের ভুল সাধারণীকরণ ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্বায়ত্তশাসনের পরিপন্থী এবং বর্তমান সরকারেরই গত ১০ বছরের শিক্ষার উন্নয়নকে অস্বীকার করা। তাই প্রতিটি বিশ্ববিদ্যালয় তার শিক্ষকদের মান ও সুযোগ সুবিধা বিবেচনায় নিয়ে সংশ্লিষ্ট পদে শিক্ষক নিয়োগের শর্ত ঠিক করবে। একই বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন অনুষদ, আবার একই অনুষদের বিভিন্ন বিভাগেরও শিক্ষক নিয়োগ ও প্রমোশন নীতি ভিন্ন হতে পারে। অভিন্ন নীতিমালা না করে সংশ্লিষ্ট বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর একাডেমিক কাউন্সিলে আলোচনার মাধ্যমে একটি যুগোপযোগী বাস্তব নীতিমালা প্রণয়নের জন্য অনুরোধ করা যেতে পারে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর