মেডিকেল ভর্তি নীতিমালায় বিপাকে শিক্ষার্থীরা

, ক্যাম্পাস

সেন্ট্রাল ডেস্ক, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, ঢাকা | 2023-08-30 14:55:39

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের নীতিমালায় বিপাকে পড়েছেন মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করা শিক্ষার্থীরা। মন্ত্রণালয়টি তাদের প্রণীত নীতিমালা-২০১১ বদলে নীতিমালা-২০১৭ নামে নতুন ভর্তির নিয়ম করায় সাধারণ শিক্ষার্থীরা সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন। এই নীতিমালার ফলে মেডিকেল কলেজের ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে হলে কমপক্ষে জিপিএ দরকার ৯। অন্যদিকে নীতিমালা ২০১১ এর ক্ষেত্রে জিপিএ কমপক্ষে ৮ হলেই পরীক্ষায় অংশ নেওয়া যেত।

জিপিএ ০৮ থেকে ০৯ করায় গত বছরে আট শিক্ষার্থী হাইকোর্টে রিট দায়ের করেন। হাইকোর্টের বিচারপতি মো. আশফাকুল ইসলাম ও বিচারপতি মোহাম্মদ আলীর যৌথ বেঞ্চ গত মে মাসে রিটকারীদের পক্ষে রায় দেন। আদেশে বলা হয়, নীতিমালা ২০১৭ এর ২.২ অনুচ্ছেদ অবৈধ। অনুচ্ছেদটিতে ভর্তি ক্ষেত্রে জিপিএ ০৯ লাগবে বলে নিয়ম করেছিল স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়।
হাইকোর্টের আদেশের বিরুদ্ধে আপিল করে বাংলাদেশ মেডিকেল অ্যান্ড ডেন্টাল কাউন্সিল (বিএমডিসি)। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের ১৪ আগস্টের রায় স্থগিত করে।

কিন্তু বিএমডিসি তড়িঘড়ি করে ইতিমধ্যে ২০১৯-২০২০ শিক্ষাবর্ষের জন্য ভর্তি বিজ্ঞাপন দিয়েছে। আর তাতে জিপিএ ০৯ এর কম কিন্তু ৮ এর বেশি পেয়েছে বিজ্ঞান বিভাগের এমন শিক্ষার্থীরা বেকায়দায় পড়েছেন। আপিল বিভাগ হাইকোর্টের রায় বহাল রাখলে বেকায়দায় পড়া শিক্ষার্থীরা কীভাবে পরীক্ষা দেবেন এবং দিতে পারলেও প্রস্তুতির ঘাটতির কথা বলছেন অনেকে।

এছাড়া বাংলাদেশে বিদেশি শিক্ষার্থীদের মেডিকেল কলেজে পড়তে জিপিএ দরকার ৭ বা সমান নম্বর। দেশি ও বিদেশি শিক্ষার্থীদের ক্ষেত্রে দুই নিয়মকে বৈষম্য হিসেবে দেখছেন অনেকে। অথচ বিদেশি শিক্ষার্থীরা বাংলাদেশ থেকে এমবিবিএস পড়ে গিয়ে নিজ দেশে চিকিৎসক নিবন্ধন পরীক্ষায় প্রথম ধাপেই পাস করছেন।

পার্শ্ববর্তী দেশ ভারত, নেপাল, মালয়েশিয়া ও ফিলিপাইনে জিপিএ ০৬ বা ৫০ শতাংশ নম্বর হলেই মেডিকেল কলেজে পড়ার জন্য ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নিতে পারে। আর পাকিস্তানে দরকার হয় জিপিএ ৮ বা ৭০ শতাংশ নম্বর।

গত বছর ভারতে ১৪ লাখ শিক্ষার্থী এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় সুযোগ পান। তা থেকে ৮ লাখ পরীক্ষার্থীকে নির্বাচিত করা হয় এবং ১ লাখ ভর্তির সুযোগ পান।
এছাড়া ইংরেজি মাধ্যমের শিক্ষার্থীদেরও দরকার হয় জিপিএ ০৯। যেটা খুবই কষ্টসাধ্য বিষয়। বিএমডিসি স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রণালয়ের এমন সিদ্ধান্তে দেশের অনেক শিক্ষার্থী বিদেশে এমবিবিএস পড়তে চলে যাচ্ছেন।

দেশের তৃণমূল পর্যায়ে বৃহৎ জনগোষ্ঠীর অনেকে ভালো শিক্ষকের কাছে পড়ার বা কোচিং করার সুযোগ পান না। শহরে বসবাস করা শিক্ষার্থীরা ভালো কোচিং এবং টিচারের কাছে পড়ার সুযোগ পাওয়ার ফলে তারা অপেক্ষাকৃত ভাল করেন। গবেষণায় দেখা গেছে, গ্রামের তুলনায় শহরের ছেলেমেয়েরা জিপিএ ০৯ বেশি পান।

এমন অবস্থায় প্রত্যন্ত অঞ্চলের শিক্ষার্থীরা জিপিএ ৮ পেলে মেডিকেল কলেজ ভর্তি পরীক্ষায় যেন অংশ নিতে পারেন এজন্য আট শিক্ষার্থী এ রিট করেন। তাতে অধিক সংখ্যক ছাত্র-ছাত্রীদের অংশগ্রহণে প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে মেধাবীদের যাচাই বাছাইয়েরও সুযোগ হবে। অন্যথায় জিপিএ ০৯ হওয়াতে বিদেশে মেধাবীদের চলে যাওয়ার পাশাপাশি বিপুল পরিমাণ অর্থও দেশ থেকে চলে যাবে।

উক্ত পরিস্থিতিতে দেশের বৃহত্তর স্বার্থে জিপিএ ০৮ প্রাপ্ত শিক্ষার্থীরা এমবিবিএস ভর্তি পরীক্ষায় অংশ নেয়ার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেছেন। প্রতিবেশী দেশ ভারত যদি ৫০ শতাংশ নম্বর প্রাপ্তদের মেডিকেল ভর্তি পরীক্ষায় অংশগ্রহণের সুযোগ দেয়, তাহলে বাংলাদেশ কেন দেবে না, এমন প্রশ্ন অনেক শিক্ষার্থীর।

এ সম্পর্কিত আরও খবর