‘লাশ নিয়ে ক্যাম্পাসে বিক্ষোভ হতে পারে, তাই আনতে দেয়নি!’

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-09-01 19:49:05

ডেঙ্গু জ্বরে নিহত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) ছাত্র ফিরোজ কবীর স্বাধীনের মরদেহ ক্যাম্পাসে আনা হলে বিক্ষোভ হতে পারে, এই আশঙ্কায় তার মরদেহ আনতে দেওয়া হয়নি বলে অভিযোগ উঠেছে। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে প্রতিবাদের ঝড় উঠেছে।

স্বাধীনের মরদেহ ক্যাম্পাসে আনতে না দেওয়া হলেও শনিবার (২৭ জুলাই) ব্যবসা শিক্ষা অনুষদের সামনে গায়েবানা জানাজা অনুষ্ঠিত হয়।

এর আগে শুক্রবার (২৬ জুলাই) রাত দেড়টার দিকে ক্যাম্পাসে তার জানাজা করতে বন্ধুরা দাবি জানান। কিন্তু ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) ও হল সংসদের আপত্তির কারণে মরদেহ ক্যাম্পাসে আনতে দেয়নি প্রশাসন।

শনিবার (২৭ জুলাই) এমন অভিযোগ করেন নিহতের সহপাঠী ও বন্ধুরা। তবে ডাকসু ও হল সংসদের দাবি, পরিবারের সিদ্ধান্তেই তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়া হয়েছে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক ড. এ কে এম গোলাম রব্বানী বলেন, ডেঙ্গু জ্বরে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুর বিষয়টি খুবই দুঃখজনক ও অনাকাঙ্ক্ষিত। ক্যাম্পাসে জানাজা হওয়ার বিষয়ে আমার জানা নেই। হলের প্রভোস্ট, হাউজ টিউটর ও ডাকসু প্রতিনিধিরা নিহত শিক্ষার্থীর কাছে গিয়েছিলেন। যেহেতু পরিবারের লোকজন সাথেই ছিলেন, তারাই তার মরদেহ গ্রহণ করেছেন। পরিবারই তাকে গ্রামের বাড়িতে নিয়ে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

হল প্রভোস্ট অধ্যাপক মফিজুর রহমানের দাবি, দেরি হওয়ায় দ্রুততম সময়ে বাড়ি নিয়ে যাওয়ার জন্য ক্যাম্পাসে তার মৃতদেহ আনা হয়নি। ট্রিটমেন্টও পরিবারের পক্ষ থেকে হয়েছিল, পরিবারই নিজেদের দায়িত্বে দ্রুততম সময়ে নিয়ে গেছে। ক্যাম্পাসে জানাজা হওয়ার কথা ছিল কি-না, জানি না।

এদিকে ফিরোজ কবীর স্বাধীনের মরদেহ শেষবারের মতো ক্যাম্পাসে না আনায় ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন তার বন্ধুরা। ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীসহ বেশ কয়েকজন মরদেহ আনতে বাধা দেয় এবং অমানবিক আচরণ করে বলেও অভিযোগ তাদের।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিরোজের এক বন্ধু বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, হয়তো তারা ভেবেছিল তার মরদেহ নিয়ে ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের অস্থিতিশীল পরিবেশ বা মিছিল হতে পারে। কারণ পুরো ক্যাম্পাস অনিয়মে ভরা। গেস্টরুম-গণরুমের একটা ব্যাপারও এর সাথে জড়িয়ে আছে। সেই ভয় থেকে গোলাম রাব্বানী, বঙ্গবন্ধু হল সংসদের ভিপি, জিএস এবং হল প্রভোস্ট মরদেহ আনতে বাধা দেয়।

এ বিষয়ে ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক গোলাম রাব্বানীকে একাধিক বার ফোন করা হলেও তিনি সাড়া দেননি।

এ বিষয়ে বিস্ময় প্রকাশ করে ডাকসু ভিপি নুরুল হক নুর ফেসবুক স্ট্যাটাসে লিখেছেন, 'কী অদ্ভুত রাজনীতি! বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন শিক্ষার্থী মারা গেল, তার বন্ধু ও সহপাঠীরা জানাজা পড়ার জন্য ক্যাম্পাসে লাশটি আনতে চেয়েছিল, কিন্তু প্রশাসনের অনাগ্রহ আর তথাকথিত অতিরাজনীতিবিদ ছাত্রনেতাদের কারণে লাশটি ক্যাম্পাসে আনা হলো না!'

স্বাধীনের জানাজা তার নিজ ক্যাম্পাসে না হওয়ায় ফেসবুকে ক্ষোভ প্রকাশ করছেন অনেক শিক্ষার্থী। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের পাশাপাশি নোংরা রাজনীতি দায়ী করছেন অনেকে।

এদিকে, মশা নিধনে প্রশাসনের অবহেলা এবং ফিরোজ কবীর স্বাধীনের জানাজা ক্যাম্পাসে হতে না দেওয়ার প্রতিবাদে রোববার (২৮ জুলাই) বিকাল সাড়ে ৪টায় রাজু ভাস্কর্যের সামনে মানববন্ধন করার ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।

উল্লেখ্য, নিহত স্বাধীন বিশ্ববিদ্যালয়ের ২০১৩-১৪ সেশনের ব্যবসায় অনুষদের ফিন্যান্স বিভাগের ছাত্র ছিলেন। তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ছিলেন।

গত শুক্রবার রাত সাড়ে ৯টার দিকে তিনি রাজধানীর স্কয়ার হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় মারা যান। তার বাড়ি ঠাকুরগাঁওয়ে।

আরও পড়ুন: ডেঙ্গু আক্রান্ত হয়ে ঢাবি শিক্ষার্থীর মৃত্যু

এ সম্পর্কিত আরও খবর