জাবির শতাধিক ভবনের কোনোটিতে নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা!

, ক্যাম্পাস

মোহাম্মদ আলকামা, জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম | 2023-08-31 14:30:36

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে একাডেমিক ভবন, আবাসিক হল, শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের আবাসিক ভবনসহ ছোট-বড় শতাধিক ভবন রয়েছে। তবে এসব ভবনের কোনোটিতেই নেই অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা। এছাড়া তাৎক্ষণিক দুর্ঘটনা থেকে রক্ষা পেতে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে নেই ফায়ার সার্ভিস ব্যবস্থা।

অন্যদিকে বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহার, বৈদ্যুতিক অব্যবস্থাপনার কারণে শর্ট সার্কিট সহ যে কোন ভাবে ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা। ফলে অগ্নি ঝুঁকিতে রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয়ের সবকটি ভবন।

বিশ্ববিদ্যালয়ের এস্টেট শাখা সূত্রে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয়ে অভ্যন্তরে মোট ভবন রয়েছে ১২৭টি। এর মধ্যে ১৬টি আবাসিক হল, ১০টি একাডেমিক ভবন, দুটি প্রশাসনিক ভবন, একটি করে মেডিকেল সেন্টার, ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্র, মিলনায়তন, ক্যাফেটেরিয়া, পরিবহন অফিস, ব্যায়ামাগার, গবেষণা কেন্দ্র ও কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার। এছাড়া উপাচার্য, উপ-উপাচার্য ও কোষাধ্যক্ষের বাসভবনসহ শিক্ষক ও কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য প্রায় ৯২টি আবাসিক ভবন রয়েছে। কিন্তু এসব ভবনের কোনটিতে অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা নেই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের একাধিক শিক্ষকের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, শিক্ষকদের কোয়ার্টারের কোনো ভবনেই নেই অগ্নি নির্বাপণের ব্যবস্থা। ভবনগুলো যে কাঠামোতে তৈরি করা হয়েছে তাতে আগুন লাগলে দ্রুত সহায়তার কোনো মাধ্যমও নেই। ফলে যেকোনো সময় বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে।

এছাড়া বিজ্ঞান অনুষদভুক্ত বিভাগগুলোর গবেষণাগারে বিভিন্ন দাহ্য পদার্থ ব্যবহার করা হয়। একটু অসতর্ক হলেই, মারাত্মক দুর্ঘটনা ঘটে যেতে পারে। গবেষণাগারে আগুন নেভানোর কোনো ব্যবস্থা নেই। ফলে ঝুঁকি নিয়েই শিক্ষার্থীদের গবেষণাগারে কাজ করতে হয়।

অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের হলগুলোতে প্রায় প্রতিটি কক্ষে শিক্ষার্থীরা ব্যবহার করেন বৈদ্যুতিক হিটার। ফলে অপচয় হচ্ছে বিদ্যুৎ। এছাড়া অনিরাপদ এ বৈদ্যুতিক হিটারের মাধ্যমে যে কোন সময় ঘটে যেতে পারে বড় ধরনের দুর্ঘটনা।

এদিকে, গত ১৮ জুন বিকেলে বিশ্ববিদ্যালয়ের ব্যবসায় অনুষদ ভবনে বৈদ্যুতিক শর্ট সার্কিটের মাধ্যমে অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা ঘটে। মুহূর্তে পুরো অনুষদ ধোঁয়ায় আচ্ছন্ন হয়ে যায়। এ ঘটনায় অল্পের জন্য রক্ষা পায় ব্যবসায় শিক্ষা অনুষদের ভবনটি। তবে ভবন সংশ্লিষ্ট ও শিক্ষার্থীরা জানান অগ্নিকাণ্ডের ঘটনা থেকে রক্ষার জন্য প্রস্তুতি না থাকলে আগামীতে আরও বড় ধরনের ক্ষতি হতে পারে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান প্রকৌশলী আব্দুস সালাম মো. শরীফ বলেন, 'কোথাও অগ্নিনির্বাপক ব্যবস্থা নেই। এ বিষয়ে প্রশাসন থেকে কোনো নির্দেশনা নেই। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন নির্দেশনা দিলে অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র ক্রয় এবং স্থাপনের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করব।'

তবে হলগুলোতে অগ্নি নির্বাপণ ব্যবস্থা কেন নেই এমন প্রশ্নের উত্তরে হল প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বলেন, 'হলগুলো প্রতিষ্ঠার পর থেকে অনেক কিছুর ঘাটতি রয়েছে। অগ্নিনির্বাপক যন্ত্র রাখা অবশ্যই দরকার। পরবর্তী হল প্রাধ্যক্ষ পরিষদের মিটিংয়ে এই গুরুত্বপূর্ণ বিষয়টি উত্থাপন করব। এছাড়া বৈদ্যুতিক হিটার ব্যবহার খুব বিপদজনক। আমরা এগুলোর বিরুদ্ধে শীঘ্রই ব্যবস্থা নেব।'

বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ বলেন, 'পুরাতন কোনো ভবনে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নেই। তবে সামনে যেসব নতুন ভবন নির্মাণ করা হবে সেগুলোতে অগ্নিনির্বাপণের ব্যবস্থা থাকবে। এছাড়া পুরাতন প্রতিটা ভবনে যাতে অগ্নিনির্বাপণ ব্যবস্থা নিশ্চিত করা হয় সেই ব্যবস্থা নেব। অগ্নিকাণ্ডের সময় দ্রুত সহায়তার জন্য বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে কোন ফায়ার সার্ভিস টিম নেই তবে আমরা এসব ব্যাপারে শীঘ্রই কথা বলব।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর