রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে মাদকের অলিখিত ৪১ ‘স্পট’

বিবিধ, ক্যাম্পাস

শাহরিয়ার হাসান ও সাইফুল্লাহ সাইফ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট ও রাবি করেসপন্ডেন্ট বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 11:51:28

রাজশাহী থেকে: রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় (রাবি) ক্যাম্পাসে মাদকের ভয়াবহতা চরমে। অবাধে মাদক সেবনের সুযোগে একের পর এক শিক্ষার্থী মাদকাসক্ত হয়ে পড়ছেন। বহিরাগতদের সহজে অনুপ্রবেশের সুযোগে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪১টি জায়গাকে মাদকের অলিখিত স্পট (নির্দিষ্ট স্থান) বানিয়ে ফেলেছেন মাদকসেবীরা।

বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের চোখকে ফাঁকি দিয়ে ৪১টি স্পটে সন্ধ্যা নামলেই শিক্ষার্থীরা গড়ে তোলেন মাদকের আখড়া। যার নেতৃত্বে থাকেন স্থানীয় তথাকথিত নেতা ও তার অনুসারীরা।

বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গেই নিয়েছিল বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। বিশেষ অভিযানও চালিয়ে ছিল অভিযুক্তদের বিরুদ্ধে। প্রায় এক বছর অভিযান চালিয়ে শেষ পর্যন্ত পেরে উঠতে পারেনি প্রশাসন। গত ছয় মাস ধরে বন্ধ রয়েছে এ মাদকবিরোধী অভিযান। যার ফলে মাদক ব্যবসায়ীরা নিশ্চিন্তে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছেন।

সূত্র বলছে, বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিনোদপুর, কাজলা, তালাইমারী, কাটাখালি, স্টেশন বাজার, বুধপাড়া, মেহেরচন্ডী থেকে কতিপয়  শিক্ষার্থীরা গাজা, ইয়াবা ও ফেন্সিডিলসহ বিভিন্ন মাদকদব্য সংগ্রহ করছে। শুধু তাই নয়, বিশ্ববিদ্যালয়ের অনেক কর্মকর্তা-কর্মচারী ও বহিরাগতরা বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে এসে শিক্ষার্থীদের মাদক সরবরাহ করছে।

রাবি ক্যাম্পাসে বহিরাগতদের অবাধে চলাফেরা

রাবির প্রক্টরিয়াল বডির সূত্রে জানা যায়, রাজশাহী সীমান্ত পার্শ্ববর্তী এলাকায় হওয়াতে ঐ এলাকা থেকে প্রতিনিয়ত বিভিন্ন ধরণের মাদক ঢুকছে। মাদক ব্যবসায়ীরা নিরাপদ স্থান হিসেবে নেতা ও অনুসারীদের যোগসাজশে বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসকে নিরাপদ হিসেবে ব্যবহার করছে।

রাবির লোক প্রশাসনের বিভাগের শিক্ষার্থী সজল বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মাদক সেবনের আখড়া হিসেবে পরিচিত ক্যাম্পাসের বেশকিছু জায়গা রয়েছে। যেখানে শিক্ষার্থী ও বহিরাগতরা অহরহ মাদক সেবন করে থাকেন।’ 

সরেজমিনে আরো দেখা যায়, মাদক সেবনের স্পট  হিসেবে ব্যবহৃত হয়ে আসছে বিভিন্ন একাডেমিক ভবনের ছাদ, ছাত্রদের হলের ছাদ, সাবাস বাংলাদেশ মাঠের দক্ষিণ পশ্চিম কোণ, আইবিএ ভবন চত্বর, হবিবুর রহমান হলের মাঠ, জুবেরী মাঠ, বিশ্ববিদ্যালয়ের সোহরাওয়ার্দী হলের পুকুর ঘাট, আমীর আলী হলের মাঠ, নবাব আব্দুল লতিফ হলের পূর্ব পাশের মাঠ, শাহ মখদুম হলের পশ্চিম পাশে আমগাছ তলা।

এছাড়াও শহীদ শামসুজ্জোহা হলের পূর্ব পাশে, জিমনেসিয়ামের সামনের মাঠ, ইবলিশ চত্বর, শহীদুল্লাহ কলা ও মমতাজ উদ্দিন কলা ভবনের সামনের আমতলা, সিরাজী ভবনের সামনে মেহগনী বাগান, পশ্চিম পাড়া শিক্ষকদের আবাসিক এলাকায়, চারুকলা ও কৃষি অনুষদ সংলগ্ন মাঠ, চারটি বিজ্ঞান ভবনের চারপাশে, শহীদ সুখরঞ্জন সমাদ্দার ছাত্র-শিক্ষক সাংস্কৃতিক কেন্দ্রে সামনের মাঠ মাদকের স্পট হিসেবে পরিচিত।

সাধারণ শিক্ষার্থীরা অভিযোগ করছেন, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন চাইলে এ অবৈধ কর্মকাণ্ড বন্ধ করতে পারে। কিন্তু তারা করে না। অভিযানের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকে প্রশাসনের কার্যক্রম। 

রাবির হল

 

বহিরাগতদের কাছ থেকে মাদক সরবরাহ করা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের শিক্ষার্থী সামির বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় সংলগ্ন বিভিন্ন এলাকার বহিরাগতরা এসে আমাদের কাছে গাজা, ইয়াবাসহ বিভিন্ন নেশাজাতীয় সরবরাহ করে। যার ফলে মাদক সেবনকারী শিক্ষার্থীরা ক্যাম্পাসের বিভিন্ন স্থানে মাদকের আসর বসান।’ 

তিনি বলেন, ‘ক্ষমতাসীন ছাত্র নেতাদের ছত্রচ্ছায়ায় বহিরাগতরা ক্যাম্পাসে মাদক সরবরাহ করে। আবার অনেক সময় তারাও শিক্ষার্থীদের নিয়ে বিভিন্ন হলে মাদক সেবন করেন।’ 

জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমান বার্তা২৪.কম-কে বলেন, ‘মাদকের স্পটগুলো সর্ম্পকে আমরা অবহিত আছি। মাদকের বিষয়ে আমরা জিরো টলারেন্স গ্রহণ করেছি। ক্যাম্পাসের বিভিন্ন চিহ্নিত জায়গায় অভিযান চালিয়েছি। আবারও অভিযান শুরু হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর