রাকসু নির্বাচন নিয়ে ‘অনিশ্চয়তা’

বিবিধ, ক্যাম্পাস

সাইফুল্লাহ সাইফ, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 21:19:02

প্রায় তিন দশক ধরে অচল রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (রাকসু)। এটি সচলের যে তোড়জোড় শুরু হয়েছিল, ক্রমেই তা কমতে শুরু করেছে। ফলে রাকসু নির্বাচন নিয়ে এখন ‘অনিশ্চয়তা’ সৃষ্টি হয়েছে শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতাদের মাঝে। রাকসু নির্বাচন দেওয়ার লক্ষ্যে সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা না করেই ‘মনগড়া’ কার্যক্রম পরিচালনা করায় এমনটি হচ্ছে বলে অভিযোগ তাদের।

শিক্ষার্থী ও ছাত্রনেতারা বলছেন, চলতি বছরেই রাকসু নির্বাচনে ঘোষণা দেওয়া হলেও রাকসু সংলাপ কমিটি তাদের কার্যক্রম পরিচালনায় গড়িমসি করছে। দুই মাস পার হলেও এখন পর্যন্ত তারা ছাত্রসংগঠনগুলোর সঙ্গে সংলাপ শেষ করতে পারেনি। এছাড়া সুনির্দিষ্ট কোনো পরিকল্পনা নিয়েও তারা কাজ করছে না। ফলে রাকসু নিয়ে অনিশ্চয়তা কাজ করছে।

তবে সংলাপ কমিটি বলছে, পরিকল্পনা অনুযায়ী কার্যক্রম পরিচালিত হচ্ছে। ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূল করেই রাকসু নির্বাচন দেওয়া হবে।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কেন্দ্রীয় ছাত্র সংসদ (ডাকসু) নির্বাচনের তারিখ ঘোষণার পর দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি তোলেন বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্রিয়াশীল ছাত্রসংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা। এ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে ব্যাপক প্রচার-প্রচারণা চালান তারা।

এরপর গত ২০ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক লুৎফর রহমানকের আহবায়ক করে চার সদস্যবিশিষ্ট রাকসু সংলাপ কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। পরে ২২ জানুয়ারি সংলাপের জন্য নিবন্ধিত রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনগুলোর গঠনতন্ত্র, কার্যনির্বাহী কমিটির সদস্যের তালিকা আহবান করে সংলাপ কমিটি। এতে সংলাপের জন্য দশটি ছাত্রসংগঠন গঠনতন্ত্র জমা দেয়।

এরপর ৭ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্র ফেডারেশনের সঙ্গে সংলাপের মধ্য দিয়ে আনুষ্ঠানিকভাবে শুরু হয় রাকসু সংলাপ কমিটির কার্যক্রম। সর্বশেষ গত ৪ এপ্রিল বিশ্ববিদ্যালয়ের দু’টি স্বেচ্ছাসেবী সংঠনের সঙ্গে সংলাপ অনুষ্ঠিত হয়। সংলাপে ছাত্রসংগঠনগুলো তাদের বিভিন্ন দাবি ও যৌক্তিকতা সংলাপ কমিটির কাছে তুলে ধরেন। সংলাপ কমিটিও সংগঠনগুলোর দাবির বিষয়ে ‘ইতিবাচকভাবে’ সাড়া দেয় বলে সংলাপে বসা সংগঠনগুলোর নেতাকর্মীরা জানান। এরপর আগামী ১৬ এপ্রিল স্বেচ্ছাসেবী দু’টি সংগঠনের সঙ্গে সংলাপে বসবে প্রশাসন।

এদিকে গত ৭ ফেব্রুয়ারি থেকে ৪ এপ্রিল পর্যন্ত সংলাপে বসে বিশ্ববিদ্যালয়ের ১০টি রাজনৈতিক ও দুইটি স্বেচ্ছাসেবী ছাত্রসংগঠন যে দাবি জানিয়েছে সেগুলো বিশ্লেষণ করে দেখা গেছে, কিছু দাবির ক্ষেত্রে ছাত্রলীগ ছাড়া বাকি প্রায় সব সংগঠন একমত। বিশেষ করে হলের বাইরে ভোট কেন্দ্র করার দাবির বিষয়ে ব্যতিক্রম কেবল ছাত্রলীগ।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রগতিশীল ছাত্রজোটের আহবায়ক রঞ্জু হাসান বলেন, ‘ডাকসু নির্বাচনের তারিখ হওয়ার পর রাকসু নিয়ে আমরা আশাবাদী ছিলাম। প্রশাসনও সেসময় ব্যাপক তোড়জোড় শুরু করে দেয়। কিন্তু কোনো সুনির্দিষ্ট পরিকল্পনা হাতে না নিয়ে নিজের মতো করে কার্যক্রম পরিচালনা করেছে প্রশাসন। যার ফলে রাকসু নির্বাচন নিয়ে এক ধরনের অনিশ্চয়তা সৃষ্টি হয়েছে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রদলের সাধারণ সম্পাদক কামরুল হাসান বলেন, ‘রাকসু নির্বাচন আমাদের প্রাণের দাবি। কিন্তু প্রশাসন এটি নিয়ে অনেক নাটকীয়তা শুরু করেছে। কবে নাগাদ রাকসু নির্বাচন হবে, সেবিষয়ে স্পষ্ট কোনো কিছু বলছে না। ক্যাম্পাসে সব রাজনৈতিক দলের সহাবস্থান নিশ্চিত করে ও রাজনৈতিক সব নিষেধাজ্ঞা তুলে দিয়ে দ্রুত রাকসু নির্বাচন দেওয়া হোক।’

তিনি আরও বলেন, ‘দ্রুত রাকসু নির্বাচনে দাবি আমরা বারবার জানালেও রাকসু নির্বাচন দেওয়ার জন্য প্রশাসন যেভাবে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করছে, তাতে মনে হয় এ বছর রাকসু নির্বাচন সম্ভব নয়।’

রাবি ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক ফয়সাল আহমেদ রুনু বলেন, ‘আমাদের সঙ্গে প্রশাসনের অনুষ্ঠিত সংলাপে দ্রুত রাকসু নির্বাচনের দাবি জানিয়েছিলাম। আমরা আবারও তাদের সঙ্গে বসব এবং দ্রুত রাকসু নির্বাচনের তারিখ নির্ধারণ করে নির্বাচনী তফসিল ঘোষণা করার দাবি জানাব।’

এ ব্যাপারে রাকসু সংলাপ কমিটির আহবায়ক ও প্রক্টর অধ্যপক লুৎফর রহমান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘১২টি সংগঠনের সঙ্গে সংলাপে বসা হয়েছে, আর তিনটি সংগঠন বাকি আছে। তাদের সঙ্গে বসার পর হল প্রশাসনের সঙ্গে বসা হবে। সব মিলিয়ে ক্যাম্পাসের সার্বিক পরিস্থিতি অনুকূল করেই আমরা রাকসু নির্বাচন দেব।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর