‘গাছ না কেটে আমার মাথা কেটে নাও!’

বিবিধ, ক্যাম্পাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 10:46:14

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয় (বেরোবি) ক্যাম্পাসকে সবুজের সমারোহে সাজাতে নিরলসভাবে কাজ করছেন ড. তুহিন ওয়াদুদ। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাংলা বিভাগের শিক্ষক।

নিজ উদ্যোগে বিভিন্ন জনের সহযোগিতায় ক্যাম্পাসে প্রায় ৩৩ হাজার গাছ রোপন করেছেন তিনি। ফলজ, বনজ ও ওষধি চারাসহ ১৫০ প্রজাতির গাছ রয়েছে ক্যাম্পাসে। প্রতিটি গাছের সুন্দর ও স্বাভাবিক বেড়ে ওঠার পেছনে রয়েছে তাঁর সবুজয়ানের স্বপ্ন। শত ব্যস্ততার মাঝেও তিনি গাছের নিয়মিত পরিচর্যা করেন।

এ স্বপ্ন বাস্তবায়নে তিনি নিজের মাথা কেটে দিতেও রাজি! তবু গাছ নিধনের পক্ষে নন তিনি। শনিবার (২ মার্চ) ‘বেরোবিতে বৃক্ষ নিধন চলছে’ এই শিরোনামে ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন তিনি। সেখানে গাছ কেটে ফেলার ছবিসহ প্রকাশ করেন তার কষ্ট আর প্রতিবাদের কথা।

সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এ স্ট্যাটাস দেখার পর সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের অনুমতি ছাড়াই রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম ফলের বাগান করতে সকালে এক কর্মচারীকে দিয়ে বেশ কয়েকটি আম গাছ কেটে ফেলেছেন। শিক্ষক ডরমেটরির পেছনে লাগানো গাছগুলো কাটতে দেখে ছুটে আসেন ড. তুহিন ওয়াদুদ। এ সময় তিনি গাছ কাটতে বাধা দিলে বাক-বিতণ্ডা হয়।

https://img.imageboss.me/width/700/quality:100/https://img.barta24.com/uploads/news/2019/Mar/03/1551556177642.jpg

ঘটনাস্থলে থাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের গণিত বিভাগের শিক্ষক মশিউর রহমান বলেন, ‘এ রকম করে গাছগুলো কাটা ঠিক হয়নি।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘গাছগুলো আমাদের সম্পদ। গাছগুলোতে মুকুল আসার উপক্রম হয়েছে। এই সময়ে এসে আম গাছগুলো কীভাবে কাটে! ফলের বাগান লাগানোর জন্য তো বিশ্ববিদ্যালয়ের আরও অনেক জায়গা আছে। এভাবে আমগাছ কেটে তো বাগান লাগানোর কোনো দরকার হয় না।’

এ ব্যাপারে ড. তুহিন ওয়াদুদ বলেন, ‘গাছ না কেটে, আমার মাথা কেটে নিতে বলেছি। কিন্তু তার আগেই দু‘টি আম গাছ কেটে ফেলা হয়। এভাবে গাছ কাটতে দেখে খুব কষ্ট লাগছিল। সইতে না পেরে নিজের মাথা ওই কর্মচারীর কোঁদালের নিকট এগিয়ে দিয়েছিলাম। গাছ কাটার বদলে আমার মাথা কাটতে বলেছিলাম!’

তিনি বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃক্ষ নিধন চলছে। দেখার কেউ নেই। দীর্ঘ কয়েক বছরে অন্যের কাছে অনুরোধ করে গাছ নিয়ে এসে নিজের সময়, শ্রম, অর্থ ব্যয় করে ক্যাম্পাসে ৩৩ হাজার গাছ লাগিয়েছি। কয়েকদিন ধরে চলছে সেই গাছ কাটা। আমার বুক ভেসে কান্না আসছে। এ গাছগুলো আমার সন্তান।’

এদিকে, নিজের ভুলের জন্য দুঃখ প্রকাশ করেছেন রসায়ন বিভাগের শিক্ষক মো. তরিকুল ইসলাম। তিনি বলেন, ডরমেটরির পেছনে ফলের বাগান করার জন্য গাছগুলো কাটার নির্দেশ দিয়েছিলাম। কিন্তু বুঝতে পারিনি, ড. তুহিন ওয়াদুদ এত কষ্ট পাবেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর