হল নিয়ে এখনো বিপদে ফয়জুন্নেসার ৫৪ ছাত্রী

বিবিধ, ক্যাম্পাস

রুদ্র আজাদ, জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-28 09:00:48

রুম সংস্কারের অজুহাতে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের অর্ধশতাধিক ছাত্রীকে হল ছাড়তে হয়েছে। হল ছাড়ার এক মাসেও রুম সংস্কার হয়নি। ফলে চরম ভোগান্তিতে দিনাতিপাত করছেন ছাত্রীরা। এমনকি তাদের মধ্যে অনেকেরই ফাইনাল পরীক্ষা চলছে। তবে হল প্রশাসন বলছে, 'তাদের হলে উঠার প্রক্রিয়া আরও দুই-তিন বছর দীর্ঘ হতে পারে।'

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত ২৩ জানুয়ারি জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল প্রশাসন এক নোটিশে হলের ১১৪ ও ১১৫ নং রুম সংস্কারের সিদ্ধান্তের কথা জানায়। ওই দুটি রুমে বিশ্ববিদ্যালয়ের ৪৭তম ব্যাচের ৫৪ জন ছাত্রী অবস্থান করত। নোটিশে- সংস্কারের জন্য ওই ৫৪ শিক্ষার্থীকে রুম ছেড়ে দেওয়ার নির্দেশ দিয়ে অন্য হলে পাঠানো হয়।

ফলে তড়িঘড়ি করে রুম ছাড়তে বাধ্য হয় তারা। 'সাময়িক সময়ের' জন্য তাদেরকে বিভিন্ন হলে স্থানান্তর করে হল প্রশাসন। এর মধ্যে শেখ হাসিনা হলে ২৯, জাহানারা ইমাম হলে ২০ এবং বেগম সুফিয়া কামাল হলে ৪জন শিক্ষার্থীকে স্থানান্তর করা হয়।

জানা যায়, অন্য হলে উঠে ছাত্রীরা পড়েছেন বিপদে। কারণ তাদের জন্য বর্তমান হলে কোন রুম বরাদ্দ দেওয়া হয়নি। তারা সদ্য ভর্তি হওয়া ৪৮ ব্যাচের সাথে গণ রুমে গাদাগাদি করে দিনাতিপাত করছেন।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, রুম খালি করার পর এক মাসের অধিক সময় অতিবাহিত হলেও নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলের ১১৪, ১১৫ নং রুম সংস্কার কাজ শুরু হয়নি। এছাড়া কবে নাগাদ সংস্কার কাজ শুরু হবে সেটাও অনিশ্চিত বলে জানিয়েছেন হল প্রাধ্যক্ষ।

ফলে 'অনিশ্চিত' বিড়ম্বনা পোহাতে হচ্ছে ওই ছাত্রীদের। দুর্ভোগের বিষয়ে ভুক্তভোগী এক ছাত্রী বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'হঠাৎ করে একটা নোটিশ দিয়ে আমাদেরকে বলা হয় যে সকালের মধ্যে রুম ছেড়ে অন্য হলে চলে যেতে। তবে কবে কাজ শুরু হবে, কত তারিখে হলে ফিরতে পারব এবং অন্য হলে রুম পাব কিনা এসব কিছু জানতে পারি নি। পরবর্তীতে এসব বিষয়ে জানতে আমরা হল প্রভোস্ট ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে একাধিক বার যোগাযোগ করার চেষ্টা করেও কোন সাড়া পাইনি। এমতাবস্থায় আমাদের বিভিন্ন হলে স্থানান্তর করা হয়।'

তিনি আরও জানান, আমরা নতুন হলের প্রভোস্টদের কাছে রুম চাইলে তারা রুম দিতে অস্বীকার করেন। প্রভোস্ট আমাদেরকে জানান তোমরা আমাদের হলের গেস্ট, তোমাদের জন্য আমরা কোন রুম দিতে পারব না। তোমাদেরকে ৪৮ ব্যাচের সাথে গণ রুমে থাকতে হবে।

এ ব্যাপারে শেখ হাসিনা হলের প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক বশির আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমার হলে এ বছর প্রায় তিনশত ছাত্রী দেওয়া হয়েছে। আমার অ্যালোটেড ছাত্রীদেরকে আসন না দিয়ে তো আর ওদের কে আসন দিতে পারি না। তবে এখন পর্যন্ত এ বিষয়ে কোন সমাধানে আসা সম্ভব হয়নি।'

নওয়াব ফয়জুন্নেসা হল প্রাধ্যক্ষ অধ্যাপক নাহিদ হক বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলটি অনেক পুরাতন, এই মুহূর্তে অনেক কাজ করা দরকার। একটা বাজেট ও হয়েছে, তবে সেটা কার্যকর হয়নি। ফলে আমরা ১১৪ এবং ১১৫ নাম্বার রুম দুটি পরিত্যক্ত ঘোষণা করেছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রকৌশল অফিসকে বারবার তাগাদা দেওয়া সত্ত্বেও তারা কাজটি শুরু করছে না। এছাড়া খুব শীঘ্রই হলের পুনর্মিলনী আর এসব মিলিয়ে হলের কাজটি শুরু হয়নি।'

তিনি আরও বলেন, 'এ মুহূর্তে হলে আসন সংকট রয়েছে। তারপরেও আমি চেয়েছিলাম যাতে এ বছর নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে ছাত্রীর আসন বরাদ্দ দেওয়া না হয়। কিন্তু যেহেতু না নেওয়ার সিস্টেম নেই তাই বাধ্য হয়ে নিতে হয়েছে। নতুন বাজেট এসেছে সেখান থেকে হল তৈরি হবে, তখন আর সংকট থাকবে না। তবে এই অবস্থায় সংকট সমাধান করতে হলে দু তিন বছর সময়ের দরকার।'

এ ব্যাপারে প্রাধ্যক্ষ কমিটির সভাপতি অধ্যাপক সোহেল আহমেদ বার্তা২৪.কম-কে বলেন, 'আমাদের সকল হলে আসন সংকট আছে। আর নওয়াব ফয়জুন্নেসা হলে এমনিতেই সংকট আছে তারপর আবার দুটি রুম সংস্কারের জন্য একমাসের বেশি ফেলে রাখা হয়েছে এটা দুঃখজনক। আমি মনে করি খুব শীঘ্রই রুমের সমস্যা সমাধান করে ছাত্রীদেরকে থাকার ব্যবস্থা করা দরকার।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর