‘অবৈধদের’ দখলে বেরোবি’র হল, বেতনহীন কর্মচারী

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ফরহাদুজ্জামান ফারুক, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, রংপুর, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 11:37:48

বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ে (বেরোবি) আবাসিক হল তিনটি। বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হল এবং শহীদ মুখতার ইলাহী হল। এর মধ্যে দুটি হল ‘অবৈধদের’ দখলে থাকায় বৈধভাবে সিট বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষার্থীরা ভুগছেন নানা বিড়ম্বনায়।

ক্ষমতাসীন রাজনৈতিক দলের ছাত্র সংগঠনের প্রভাবে হলে সিট বরাদ্দ পাওয়ার পরও বৈধ শিক্ষার্থীরা হলে উঠতে পারছেন না। দফায় দফায় হল প্রশাসন অনাবাসিকদের হল ছাড়তে নির্দেশ দিলেও টনক নড়েনি।

এদিকে দীর্ঘদিন ধরে অনাবাসিকদের জোর দখল অবস্থানে দিন দিন হলের ফান্ড শূন্যের কোঠায় নেমে আসছে। এতে বেতন বঞ্চিত হচ্ছেন হলের সাধারণ কর্মচারীরা।

জানা গেছে, বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রায় ১০ হাজার শিক্ষার্থীর জন্য তিনটি আবাসিক হল। এর মধ্যে শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব হলে কোনো সমস্যা না থাকলেও দীর্ঘদিন থেকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও শহীদ মুখতার ইলাহী হলে অকল্পনীয় নৈরাজ্য চলছে। রাজনৈতিক ছত্রছায়ার দাপটে প্রায়ই ঘটছে হলের অধিকাংশ বৈধ শিক্ষার্থীদের বিভিন্ন সময় বের করে দেওয়ার ঘটনা। এতে বরাদ্দ পাওয়া শিক্ষার্থীদের দিন কাটছে শঙ্কা আর বিড়ম্বনায়।

২০১৫ সালের ৭ অক্টোবর বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল এবং একই বছরের ২৮ অক্টোবর শহীদ মুখতার ইলাহী হল উদ্বোধন করা হয়। ওই বছর পুরো মেধার ভিত্তিতে দুই হলে প্রায় ৭০০ শিক্ষার্থীকে আবাসিক সুবিধার আওতায় নেওয়া হয়। এরপর থেকেই হলে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে বৈধ শিক্ষার্থীদের মারধরসহ বিভিন্নভাবে হল থেকে বের করে দেয় কিছু ছাত্রনেতা।

খাতা-কলমে দুই হলে প্রায় ৪০০ আসন ফাঁকা থাকলেও বাস্তবে আসন সংখ্যার চেয়ে ওই দুই হলে অবস্থানকারীর সংখ্যা দ্বিগুণেরও বেশি। সর্বশেষ গত বছরের সেপ্টেম্বর মাসে শহীদ মুখতার ইলাহী হলে প্রায় ৫০ জন শিক্ষার্থীকে আসন বরাদ্দ দেওয়া হয়। তবে অনাবাসিক শিক্ষার্থীরা আসন ছেড়ে না দেওয়ায় নতুনভাবে আবাসিকতার সুযোগ পাওয়া শিক্ষার্থীরা অধিকাংশই হলে উঠতে পারেনি।

বর্তমানে শহীদ মুখতার ইলাহী হলের মোট ২৪০টি আসনে দেড় শতাধিক শিক্ষার্থী বৈধভাবে অবস্থান করছেন। আর বঙ্গবন্ধু হলে ৩৫৫টি আসনের মধ্যে বৈধভাবে অবস্থান করছেন মাত্র ৩২ জন। আর নতুন করে বরাদ্দ দেয়া ৬৯ জনের মধ্যে ভর্তি হয়েছেন আরও ২৩ জন।

ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের অভিযোগ, তারা ভর্তির সময় আবাসিক ফি জমা দিয়েও সুবিধা পাচ্ছেন না। অতিদ্রুত হলে নতুন করে আসন বরাদ্দের দাবিও জানান তারা।

এদিকে হলগুলোতে বৈধ শিক্ষার্থী কমে যাওয়ায় হলের ফান্ড শূন্য হয়ে গেছে। এ কারণে ৪ থেকে ৫ মাস ধরে বেতন পাচ্ছেন না হলের প্রায় ২৫ জন কর্মচারী। এতে মানবেতর জীবনযাপন করছেন তারা।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের কর্মচারী বেল্লাল হোসেন বলেন, ‘হল থেকে যে বেতন দেয় তার উপর আমার পরিবার নির্ভরশীল। দীর্ঘ ৪ মাস থেকে বেতন না পাওয়ায় আমার পরিবারকে নিয়ে মানবেতর জীবনযাপন করতে হচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয় হল প্রশাসন যদি এ ব্যাপারে যথাযথ উদ্যোগ গ্রহণ করে তাহলে আমার জন্য অনেক ভাল হয়।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট (চলতি দায়িত্ব) তাবিউর রহমান প্রধান বলেন, ‘যাদের মাস্টার্স পরীক্ষা শেষ হয়েছে অথবা ছাত্রত্ব নেই তাদেরকে হল ছাড়ার জন্য ইতোপূর্বে তিনবার নোটিশ দেওয়া হয়েছে। কিন্তু মাত্র ২০ জন শিক্ষার্থী এ নির্দেশনা মানলেও বাকিরা অবৈধভাবে হলে অবস্থান করছে।’

তিনি আরও বলেন, ‘সর্বশেষ গত সপ্তাহে একটি নোটিশ দেওয়া হয়েছে। সেখানে সাত দিনের মধ্যে অনাবাসিকদের হল ছাড়ার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। যারা এ নির্দেশ অমান্য করবে তাদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’

অন্যদিকে শহীদ মুখতার এলাহী হলের প্রভোস্ট ফেরদৌস রহমান বলেন, ‘অনাবাসিকদের কারণে নতুন করে সিট বরাদ্দ দেওয়া সম্ভব হচ্ছে না। ক্ষমতাসীন ছাত্র সংগঠনের নেতাকর্মীদের আন্তরিকতা ও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের যথাযথ পদক্ষেপ ছাড়া এ সমস্যা সমাধান করা সম্ভব নয়।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর