আশ্বাসেই কুবি প্রশাসনের সীমাবদ্ধতা

বিবিধ, ক্যাম্পাস

খালেদ মোর্শেদ, কুবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-23 03:29:00

বিভিন্ন সময়ই কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমস্যা নিয়ে শুধুমাত্র আশ্বাসেই সীমাবদ্ধ থাকছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। স্নাতকোত্তরে ভর্তি ফি কমানো, সমাবর্তনের আয়োজন, শিক্ষার্থী কল্যাণ তহবিল গঠন, বাস সংখ্যা বৃদ্ধি, বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন করপোরেশনের (বিআরটিসি) ফিটনেসবিহীন বাস পরিবর্তন, সমগ্র ক্যাম্পাস ওয়াইফাই আওতাভুক্ত করা, হলের খাবারে ভর্তুকি দেওয়াসহ বিভিন্ন বিষয়ে আশ্বাস দিলেও প্রশাসন থেকে তেমন কোনো ব্যাবস্থা নিতে দেখা যায়নি।

দাবিগুলো সর্বোচ্চ বিবেচনায় বিভিন্ন মেয়াদে বাস্তবায়নের আশ্বাসের পর মাসের পর মাস পেরিয়ে গেলেও উপাচার্যের প্রশাসন কোনো দৃশ্যমান পদক্ষেপ নেয়নি বলে জানান শিক্ষার্থীরা। এতে করে সমস্যাগুলোর সমাধান অধরাই থেকে যাচ্ছে।

সূত্রে জানা গেছে, ৩১ জানুয়ারি উপাচার্য পদে নিয়োগ পাওয়ার এক বছর পূর্ণ করবেন ড. এমরান কবির চৌধুরী। দায়িত্ব গ্রহণের পর থেকে স্বপ্ন দেখিয়ে ও লম্বা বক্তব্য দিয়ে আর রাজনৈতিক দৌরাত্মের অবস্থান নিয়ে সময় পার করেছেন তিনি। সার্বক্ষণিক বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থানের কথা ‘উপাচার্যের নিয়োগ পত্রে’ উল্লেখ থাকলেও কাজ থাকুক বা না থাকুক সপ্তাহের দুই থেকে তিনদিন তিনি রাজধানীতেই অবস্থান করেন। এমনকি তিনি যোগদান করার পর পূর্বের রেজিস্ট্রারকে সরিয়ে পদার্থ বিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহেরকে রেজিস্ট্রারের চলতি দায়িত্বে নিয়ে আসেন। চলতি দায়িত্বের রেজিস্ট্রারও সপ্তাহের অনেক দিনই বিশ্ববিদ্যালয়ের অবস্থান না করার কারণে প্রশাসনিক অনেক কাজই আটকে থাকে।

এদিকে উপাচার্য যোগদানের পর তিনি তিন মাসের সময়সীমা না মেনে ইচ্ছে মত সময়ে সিন্ডিকেট সভা করেছেন। তার এই অনিয়মতান্ত্রিকতায় সঙ্গী হয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়টির একাধিক শিক্ষক নেতা ও কর্মকর্তা। তৈরি করেছেন নিজের ইচ্ছা মতো বিভিন্ন পদ ও পদবী।

এছাড়া শিক্ষার্থীদেরকে দেয়া বিভিন্ন প্রতিশ্রুতির বাস্তবায়ন এক বছরের মধ্যে না হওয়ায় বিষয়গুলো স্বপ্ন দেখানোর মধ্যেই সীমাবদ্ধ রেখেছেন উপাচার্য।

বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীদের দাবি, উপাচার্য তাদের বারবার বিভিন্ন স্বপ্ন দেখালেও এখনো তা স্বপ্নেই রয়ে গেছে, বাস্তবে তেমন কিছুই দেখা যাচ্ছে না। উপাচার্য আসার পর থেকেই বাস বৃদ্ধি, রাস্তা সংস্কার, মাস্টার্সের ভর্তি ফি কমানোসহ বিভিন্ন সময়ে আশ্বাস দিলেও তা আজও বাস্তবায়ন হয়নি।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয় ছাত্রলীগের সভাপতি ইলিয়াস হোসেন সবুজ বলেন, ‘উপাচার্যকে সীমাবদ্ধ সম্পদ দিয়েই শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণ আরও আন্তরিক হওয়া এবং জোরালো পদক্ষেপ নিতে হবে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে অনেক কিছুই পূরণ করা সম্ভব নয়, তাই বলে কি স্বাভাবিক কার্যক্রম থেমে থাকবে?”

বিভিন্ন সময় বিশ্ববিদ্যালয়ের সংবাদকর্মীরা তার সঙ্গে যোগাযোগ করলে তিনি কোনো বক্তব্য না দিয়ে তার নিয়োগকৃত গণমাধ্যম উপাদেষ্টার সঙ্গে যোগাযোগের পরামর্শ দেন। এ প্রতিবেদনের জন্যও তার বক্তব্য গুরুত্বপূর্ণ হলেও তার মুঠোফোনে বারবার চেষ্টা করে যোগাযোগ সম্ভব হয়নি।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. মো. আবু তাহের বলেন, ‘উপাচার্যের আদেশে বিষয়গুলো আমরা গুরুত্বের সঙ্গে দেখছি। ইতোমধ্যে স্নাতকোত্তরে ভর্তি ফি কমানোর জন্য কমিটি করে দেওয়া হয়েছে। সমাবর্তনের জন্য ডেপুটি রেজিস্ট্রারকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। আশা করি খুব শিগগিরই আমরা সমাবর্তন করতে পারব।’
তিনি আরও বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরীণ রাস্তার টেন্ডার খুব শিগগিরই হবে। এছাড়া বাস চালক নিয়োগের কার্যক্রমও চলছে। খুব দ্রুত আমরা সব সমস্যার সমাধান করতে পারব।’

এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের উন্নয়ন কার্যক্রম সম্প্রসারণের জন্য ৬৮ কোটি ৫৬ লাখ টাকার একটি উন্নয়ন প্রকল্প ২০১৪-১৫ অর্থবছরে শুরু হয়ে বর্তমান চলমান থাকলেও তা চলছে ধীর গতিতে।

জানা গেছে, প্রকল্পটির মেয়াদ শেষ হবে চলতি বছরের জুন মাসে। এছাড়া নতুন করে এক হাজার ৬৫৫ কোটি ৫০ লাখ টাকার মেগা প্রকল্প অনুমোদন দেওয়া হয় গত বছরের অক্টোবর মাসে। এ উন্নয়ন কর্মকাণ্ডে ক্যাম্পাস সম্প্রসারণের কথা বলা হলেও ক্যাম্পাসকে দুই অংশে বিভক্ত করা হচ্ছে বলে শিক্ষার্থীরা আন্দোলনও করেছেন।

কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের এসব বিষয়ে অবগত করলে দেশের শিক্ষাবিদ এবং বিশিষ্টজনরা বিস্ময় প্রকাশ করেন। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক উপাচার্য আ আ ম স আরেফিন সিদ্দিক বলেন, ‘একজন উপাচার্যের সার্বক্ষণিক ক্যাম্পাসে থাকা উচিত। আইন অনুযায়ী নিয়মিত সিন্ডিকেটে সভা করা উচিত। কিন্তু তিনি আমার সাবেক সহকর্মী ছিলেন, তাই তার বিষয়ে মন্তব্য করাটা আমার জন্য বিব্রতকর।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর