ভিসি’র সাথে যোগাযোগ করেছিল প্রতিকের পরিবার

বিবিধ, ক্যাম্পাস

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, শাবি, বার্তা২৪ | 2023-08-25 04:17:16

শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের জেনেটিক ইঞ্জিনিয়ারিং এন্ড বায়োটেকনোলজি (জিইবি) বিভাগের ২০১১-১২ সেশনের শিক্ষার্থী তাইফুর রহমান প্রতিকের আত্মহত্যার ঘটনা নিয়ে তোলপাড় শুরু হয়েছে ক্যাম্পাসে।

আত্মহত্যা নাকি আত্মহত্যায় প্ররোচনা এনিয়ে ক্যাম্পাসে শুরু হয়েছে আলোচনা ও সমালোচনার ঝড়। অনার্সে প্রথম হওয়া সত্ত্বেও মাস্টার্সের রেজাল্ট খারাপ হওয়া ও থিসিস করার জন্য সুপারভাইজার না দেওয়ায় হতাশাগ্রস্ত হয়ে আত্মহত্যায় প্ররোচিত হয়েছে বলে পরিবার দাবি করছে।

থিসিসের সুপারভাইজারের জন্য পরিবার থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদের সাথেও যোগযোগ করেছিল প্রতিকের পরিবার।

এদিকে, এই ঘটনায় প্রতিকের বাবা তাওহিদুজ জামান সিলেটের কোতোয়ালি থানায় একটি অপমৃত্যুর মামলা দায়ের করেছেন বলে জানান থানার এসআই আকবর হোসেন ভূইয়া।

ঘটনার বিষয়ে উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমি বিশ্ববিদ্যালয়ে যোগদানের পরপরই প্রতিকের ফ্যামিলি থেকে তার সুপারভাইজার না পাওয়ার বিষয়টি আমাকে জানানো হয়। আমি তখন তার ডিপার্টমেন্টকে বিষয়টি অবগত করি। এরপর আমার সাথে প্রতিক বা প্রতিকের পরিবারের কেউ যোগাযোগ করেনি এবং পরবর্তীতে ফলাফল কি হয়েছিল এই ব্যাপারেও আমাকে অবগত করা হয়নি।'

উপাচার্য আরও জানান, 'প্রতিকের মতো একজন মেধাবী শিক্ষার্থীর আত্মহত্যার ঘটনায় বিশ্ববিদ্যালয় পরিবার মর্মাহত। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তার মৃত্যুর বিষয় নিয়ে যে সব আলোচনা উঠেছে তা খতিয়ে দেখার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতা সম্পন্ন ৩ সদস্য বিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আমরা আশা করি তদন্তের মাধ্যমে আসল ঘটনা বেরিয়ে আসবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের এগ্রিকালচার এন্ড মিনারেল সায়েন্স অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মোহাম্মদ বেলাল উদ্দীনকে প্রধান করে এই কমিটি করা হয়। কমিটির অন্য দুইজন সদস্য হলেন গণিত বিভাগের অধ্যাপক ড. মো আনোয়ারুল ইসলাম ও সহকারী প্রক্টর মো. সামিউল ইসলাম।'

এ ব্যাপারে জিইবি বিভাগের বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক শামসুল হক প্রধান বলেন, ‘সুপারভাইজার না দেওয়ার বিষয়ে আমি কিছু বলতে পারছি না। আমি কিছুদিন হলো বিভাগীয় প্রধানের দায়িত্বে এসেছি।’

এদিকে বিভাগীয় সূত্রে জানা যায়, অনার্সে ১ম হওয়া ঐ শিক্ষার্থী মাস্টার্সে যৌথভাবে ৭ম স্থান অধিকার করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের সিজিপিএ-৪ স্কেলের মধ্যে অনার্সে তিনি ৩.৮২ পান। আর মাস্টার্স ১ম সেমিস্টারে তার রেজাল্ট ৩.৫৮ ও ২য় সেমিস্টারে তার রেজাল্ট হয় ৩.০৮ এবং তার মাস্টার্সের সম্মিলিত রেজাল্ট দাঁড়ায় ৩.৩৩।

এদিকে, সামাজিক যোগাযোগ ফেসবুকে মাধ্যমে প্রতিকের আত্মহত্যার জন্য শাবিপ্রবির জিইবি বিভাগের শিক্ষকদের দায়ী করেছেন তার বড় বোন ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কমিউনিকেশন ডিসঅর্ডার বিভাগের শিক্ষক শান্তা তাওহিদা।

এনিয়ে বিভাগের অনার্সে ১ম শ্রেণীতে ১ম হওয়া হওয়া সত্ত্বেও প্রতিককে মাস্টার্সে সুপারভাইজার না দেওয়া এবং বিভিন্ন কোর্সে কম নাম্বার দেওয়ার অভিযোগ করেন শান্তা তাওহিদা।

যোগাযোগ করলে তৎকালীন বিভাগীয় প্রধান অধ্যাপক ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, থিসিসের ক্ষেত্রে একজন শিক্ষক একজন শিক্ষার্থী নিতে পারেন। কিন্তু সে সুপারভাইজার খুঁজে পাননি। তার সুপারভাইজার হওয়ার জন্য বিভাগ থেকে শিক্ষকদের সাথে কথা বললে কোন শিক্ষক সুপারভাইজার হতে রাজি হয়নি। ১ম শ্রেণিতে ১ম একজন শিক্ষার্থীকে কেন সুপারভাইজার দেওয়া হলো না এ বিষয়ে প্রশ্ন করলে তিনি কোন সদুত্তর দিতে পারেন নি।

এদিকে, রেজাল্টের অভিযোগের বিষয়ে কয়েকজন শিক্ষকের সাথে যোগাযোগ করা হলে তারা কোনো ধরনের মন্তব্য করতে রাজি হননি।

অন্যদিকে প্রতিকের বন্ধু ফাহমিদ হোসেন ভূঁইয়া জানান, 'প্রতিক কয়েকদিন ধরে ব্যক্তিগত কিছু সমস্যা নিয়ে হতাশায় ছিল এবং বন্ধুদের সাথেও যোগাযোগ কমিয়ে দিয়েছিল।'

উল্লেখ্য, গত সোমবার বিকেলে নগরীর কাজলশাহ এলাকার একটি বাসা থেকে পুলিশ প্রতিকের ফ্যানের সাথে ঝুলন্ত লাশ উদ্ধার করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর