ক্যান্সার আক্রান্তদের নিয়ে বই 'এখানে থেমো না: ক্যান্সার লড়াকুদের বয়ান'

, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-02-03 19:53:48

বিশ্ব ক্যান্সার দিবস-২০২৪ উপলক্ষ্যে সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশনের মাধ্যমে ৪২ জন ক্যান্সার আক্রান্ত যোদ্ধার ক্যান্সারের সাথে লড়াইয়ের অভিজ্ঞতা নিয়ে সংকলিত 'এখানে থেমো না: ক্যান্সার লড়াকুদের বয়ান" বইয়ের মোড়ক উন্মোচন হয়েছে।

শনিবার (৩ ফেব্রুয়ারি) ঢাবির সিরাজুল ইসলাম মিলনায়তনে সেন্টার ফর ক্যান্সার কেয়ার ফাউন্ডেশন আয়োজিত এক আলোচনা সভার মাধ্যমে এ বইয়ের মোড়ক উন্মোচিত হয়। অধ্যাপক কর্নেল (অব:) ডা. খালেদা শাহের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে ছিলেন চিকিৎসাবিজ্ঞানী অধ্যাপক ডা. শুভাগত চৌধুরী।

এ অনুষ্ঠানে বক্তাগণ দেশে সবার জন্য স্বল্প ব্যয়ে আধুনিক ক্যান্সার চিকিৎসা সেবা ব্যবস্থা গড়ে তোলার দাবি জানান। সেই সঙ্গে চিকিৎসা ব্যয় মেটাতে রাষ্ট্রীয় উদ্যোগে সমাজের সবার অংশগ্রহণে একটি 'জাতীয় ক্যান্সার তহবিল' গঠন করা অত্যন্ত প্রয়োজনীয়তা নিয়ে আলোচনা করেন।

প্রধান অতিথির বক্তব্যে সমাজের সবাইকে ক্যান্সার প্রতিরোধে এগিয়ে আসার আহবান জানিয়ে বলেন, ক্যান্সার লড়াকুদের নিজেদের মধ্যে অভিজ্ঞতা বিনিময় করলে তা অত্যন্ত কার্যকর হয় বলে বিভিন্ন সার্ভাইবার গ্রুপ গড়ে তোলা জরুরি।

তিনি আরও বলেন, ক্যান্সার বর্তমানে কমন রোগে পরিণত হয়েছে। সারাবিশ্বে মৃত্যুর দ্বিতীয় কারণ ক্যান্সার। ক্যান্সার চিকিৎসার এতো বেশি অগ্রগতি হয়েছে যে এতে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ কম হয়। আপনারা জেনে অবাক হবেন, পনেরোর্ধ কিশোর কিশোরদের HPV ভ্যাকসিন দিলে সারাজীবনে ক্যান্সার হবে না। কিন্তু এদেশের তরুণদের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা কম। তারা যথার্থ পরামর্শ পায় না। তাই দেশের স্কুল কলেজে গিয়ে শিক্ষার্থীদের সতর্ক করতে হবে। বাচ্চাদেরকে টেলিভিশনের সামনে বসিয়ে রাখা হচ্ছে, হাতে স্মার্টফোন তুলে দেওয়া হচ্ছে। লাইন ধরে কোচিং সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হচ্ছে। বাচ্চারা একেবারে ফার্মের মুরগী হয়ে যাচ্ছে। তাদের খেলাধুলা, ব্যায়াম করা দরকার। অসতর্কতা, অস্বাস্থ্যকর খাবার, মাদকাসক্তি, অস্বাস্থ্যকর জীবন-যাপন ইত্যাদির কারণে ক্যান্সার ব্যাপকহারে ছড়িয়ে পড়ছে। নিজের শরীরটাকে আয়নার সামনে নিয়ে গিয়ে একটু দেখুন এর কী অবস্থা হয়েছে।

আলোচনায় অংশ নিয়ে রোকেয়া পদকজয়ী জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক ডা. হালিদা হানুম বলেন, দেশে নারীদের ক্যান্সার প্রতিরোধে পরিবারের পুরুষ সদস্যদের ভূমকিা রয়েছে। নারী অঙ্গের ক্যান্সার নিয়ে কেবল নারীদেরই নয় পুরুষদেরও ধারণা থাকা, সচেতন করা প্রয়োজন। কারণ এখনো আমাদের দেশের নারীদের সিদ্ধান্ত গ্রহণ প্রক্রিয়ায় যথাযথ ক্ষমতায়িত হয়নি।

ক্যান্সার যোদ্ধা সিফাত আরেফিন প্রতীক বলেন, না চাওয়া সত্ত্বেও ক্যান্সার নামক এক দুর্বিষহ অভিজ্ঞতার মধ্য দিয়ে আমাদের যেতে হয়। এরকম অসংখ্য যোদ্ধাদের নিয়ে আমাদের এ সংগঠন গড়ে উঠেছে। গত বছর ৪ ফেব্রুয়ারি দীর্ঘ এক আলোচনা সভার মধ্য দিয়ে আমরা একত্রিত হই। এরপর থেকে ক্যান্সার যোদ্ধাদের কথাগুলোকে একটা সংকলন আকারে রূপ দেওয়ার চেষ্টা করি। আজকে আমরা তা করতে সক্ষম হয়েছি। 'পাশে আছি' ফেসবুক গ্রুপের মাধ্যমে আমরা দেশব্যাপী কার্যক্রম চালাচ্ছি। মূলত ক্যান্সার আক্রান্তদের মানসিক স্বাস্থ্য ব্যাপকভাবে ভেঙে পড়ে। এসময় ক্যান্সার আক্রান্তদের কাউন্সেলিং, ক্যান্সার সার্ভাইভার কাউন্সেলিং এবং আক্রান্তের স্বজনদের কাউন্সেলিং এর মাধ্যমে আমরা সাহস যুগিয়ে যাচ্ছি।

লেখক ও অধ্যাপক ডা. এস এম শহিদুল্লাহ বলেন, আমার পরিবারে আমরা ৮জন ক্যান্সার আক্রান্ত। এর মধ্যে ৫ জন মারা গেছেন বাকী ৩ জন সুস্থ আছি। বর্তমানে আমি ৮ ঘন্টা অফিস করি।

উল্লেখ্য, এ আলোচনায় আরো অংশ নেন জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ ডা. এস এম শহীদুল্লাহ, কথা সাহিত্যিক অদিতি ফাল্গুনী, অধ্যাপক আনু মুহাম্মদ, অধ্যাপক আকমল হোসেন, কবি হাসান ফকরি, পরিচালক মসিহ উদ্দীন প্রমুখ।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর