চবিতে নামফলক নির্মাণকাজে চাঁদা দাবির অভিযোগ ছাত্রলীগের বিরুদ্ধে

, ক্যাম্পাস

চবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-02-02 17:25:58

 

চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ে (চবি) নামফলক নির্মাণকাজের ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের কাছে ৩ লাখ টাকা চাঁদা দাবির অভিযোগ উঠেছে শাখা ছাত্রলীগের সাবেক চার নেতার বিরুদ্ধে। চাঁদা না দেওয়ায় ওই ছাত্রলীগ নেতারা ঠিকাদার তামজিদ উদ্দিন ও তার বন্ধু ফাহিম আলমকে মারধরও করেছেন।

বুধবার (৩১জানুয়ারি) বিকেল ৪ টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের নতুন কলা ফ্যাকাল্টির সামনে মারধরের এই ঘটনা ঘটে। এই ঘটনায় ভুক্তভোগী ঠিকাদার তামজিদ উদ্দিন হাটহাজারী থানায় মামলা করেছেন।

মামলায় শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মেহেদী হাসান, সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক শাফায়েত হোসেন, সাবেক উপ কর্মসূচি ও পরিকল্পনা বিষয়ক সম্পাদক মাশরুর কামাল অনিক ও সাবেক সহ সম্পাদক মোহাম্মদ হৃদয়কে আসামি করা হয়েছে।

মামলার এজাহার থেকে জানা যায়, সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে একটি নামফলক নির্মাণ করার জন্য ডিন অফিস থেকে দায়িত্ব পায় মেসার্স আর এস এন্টারপ্রাইজ নামের একটি ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান। তারা সেখানে কাজ করতে গেলে বাধা দেয় ছাত্রলীগের একাধিক নেতা। পরে তারা তিন লাখ টাকা চাঁদা দাবি করেন। চাঁদা না দেওয়ায় হামলা করেন ওই ছাত্রলীগ নেতারা।

ভুক্তভোগী ঠিকাদার তামজিদ উদ্দিন আরও উল্লেখ করেন তার পিতা মো. সেকান্দর চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্তর্ভুক্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠান মেসার্স আর এস এন্টারপ্রাইজের সত্ত্বাধিকারী। তিনি হৃদরোগে আক্রান্ত হওয়ায় তামজিদ ওই নামফলকের নির্মাণকাজ পরিচালনা করে আসছেন।

ঘটনার ৩ দিন পূর্বে একটি ফোন নম্বর থেকে তামজিদের বাবা মো. সেকান্দরকে আসামিরা ফোন করেন বলেও এজাহারে উল্লেখ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়, ওই নির্মাণকাজ পরিচালনা করতে হলে সাফায়েত হোসেন, মেহেদী হাসান, মাশরুর কামাল অনিক ও হৃদয়কে তিন লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে। তাদের চাহিদা অনুযায়ী টাকা না দিলে কাজ করতে দেবে না বলেও তামজিদের বাবাকে ভয়ভীতি ও হুমকি দেওয়া হয়। এর মধ্যে গত ৩১ জানুয়ারি নামফলকের কাজ চলমান থাকা অবস্থায় বিকেল চারটার দিকে নাম উল্লেখ করা চার আসামিসহ অজ্ঞাতনামা ৭/৮ জনসহ সমাজবিজ্ঞান অনুষদের সামনে এসে কাজে বাধা দেন। ওই সময় কাজ চালিয়ে যেতে চাইলে আবারও তিন লাখ টাকা চাঁদা দিতে হবে বলে জানান।

তামজিদ উদ্দিন বলেন, চাঁদা দিতে অস্বীকার করায় ওই আসামিরা আমাকে এলোপাতাড়িভাবে কিলঘুষি ও লাথি মারেন। তাদের হাত থেকে বাঁচাতে আমার বন্ধু ফাহিম আলম এগিয়ে এলে তাকেও লোহার রড ও কাঠের বাটাম দিয়া এলোপাতাড়ি পিটিয়ে জখম করেন। এরপর তারা আমাকে আব্দুর রব হলে নিয়ে গিয়ে ২৫ মিনিট মত আটকে রেখে বিভিন্ন হুমকি-ধমকি দেন। সেখান থেকে কোনোমতে বের হয়ে আমি প্রক্টর কার্যালয়ে গিয়ে লিখিত অভিযোগ দেই।’

ছাত্রলীগের চাঁদার দাবিতে কাজে বাধা দেওয়ার বিষয়টি নজরে এসেছে সমাজবিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক সিরাজ উদ দৌল্লাহরও। জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আমাদের বিভাগের নামফলক না থাকায় একটি নামফলক নির্মাণ করতে ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেওয়া হয়েছিল। সেখানে কয়েকজন ছাত্র তাদের কাজ করতে বাধা দেওয়া ও চাঁদা দাবির বিষয়টি ঠিকাদারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে জানতে পারি। পরে আমি এই বিষয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টরকে জানিয়েছি।’

এই বিষয়ে তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর নুরুল আজিম শিকদার। তিনি বলেন, ‘এরকম একটি অভিযোগ আমরা পেয়েছি। রেজিস্টারে মাধ্যমে তিন সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন হয়েছে। আগামী রোববার তদন্ত কমিটি প্রতিবেদন দেবে। সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে আমরা জড়িতদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা নেব।’

শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি মেহেদী হাসান চাঁদা দাবি ও মারধরের অভিযোগ অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেন, ‘তামজিদ উদ্দিনের সঙ্গে আমরা টুকটাক কথা বলেছিলাম। সেখানে আমার সঙ্গে মাশরুরও ছিল। এ অবস্থাতেই আমরা দেখতে পাই শাফায়েত তামজিদের সঙ্গে ধস্তাধস্তি করছে। আমি চেষ্টা করেছি তাদের এসব থেকে বিরত রাখতে। আমি এ ধরনের কাজের সঙ্গে জড়িত ছিলাম না।’

সাংগঠনিক সম্পাদক শাফায়েত হোসেনের সঙ্গে যোগাযোগ করা হলে তিনি প্রথমে নিজেকে শাফায়েত নন বলে দাবি করেন। পরে শাফায়েত ওয়াশরুমে গিয়েছেন জানিয়ে সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন। পরবর্তীতে একাধিকবার ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলেও সাড়া পাওয়া যায়নি। আরেক অভিযুক্ত হৃদয়ের মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও কোনো সাড়া মেলেনি।

মামলার বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন হাটহাজারী থানার ওসি মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান। তিনি বলেন, ‘আমরা এরকম একটি মামলা পেয়েছি। বিধি মোতাবেক সাক্ষ্য প্রমাণ নিয়ে তদন্ত হবে। পরে সেই প্রতিবেদন আদালতে পাঠানো হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর