জাবির ১ম বর্ষের শিক্ষার্থীদের অনলাইন ক্লাস বর্জন

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2024-01-16 20:29:46

আবাসন সংকট নিরসনপূর্বক সশরীরে শিক্ষা কার্যক্রম শুরু করার দাবিতে অনলাইন ক্লাস বর্জনের ডাক দিয়েছে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের (জাবি) ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের ১ম বর্ষের নবীন শিক্ষার্থীরা।

প্রাপ্ত সর্বশেষ তথ্যনুযায়ী বিভিন্ন অনুষদের প্রায় ২০টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের নিয়মিত অনলাইন ক্লাস বর্জন করেছে। অপরদিকে নিয়মিত শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে বলে দাবি করেছেন বিভিন্ন বিভাগের বিভাগীয় প্রধানগন।

এর আগে, গতকাল সোমবার সশরীরে ক্লাস শুরুসহ ৩ দফা দাবি নিয়ে নতুন প্রশাসনিক ভবনের সামনে অবস্থান নেয় নবীন শিক্ষার্থীরা। দাবিগুলো হলো, '২০ তারিখের মধ্যে হল অ্যালটমেন্ট দিতে হবে, জানুয়ারির শেষ সপ্তাহের মধ্যে স্বশরীরে ক্লাস শুরু করতে হবে, অফলাইনে ক্লাস শুরুর ৩০ কর্ম দিবসের মধ্যে কোন প্রকার পরীক্ষা নেওয়া যাবে না এবং এ সংক্রান্ত অফিসিয়াল নোটিশ দিতে হবে।'

পরে তারা বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার আবু হাসান এর সাথে সাক্ষাৎ করেন। রেজিস্ট্রার তাদেরকে আশ্বস্ত করে বলেন, ১৭ তারিখ আউটসোর্সিং-এ ৬৪ জন লোক দিবে। এর ফলে, ২০ তারিখের মধ্যে ক্লাস শুরুর প্ল্যান ছিল। কিন্তু কোন হলের আবাসন ব্যবস্থা না থাকায়, আমরা সিট দিতে পারছি না।

হলে আসন বরাদ্দের বিষয়ে তিনি বলেন, এই মাসের মধ্যে আমরা তোমাদের হলে উঠাতে পারবো বলে আশা করছি। তা না হলে সর্বোচ্চ ফেব্রুয়ারির ১ম সপ্তাহে যাবে। উপাচার্য বলেছিলেন যে, গণরুম থাকবে না। সেই লক্ষ্যেই আমরা এগুচ্ছি এবং আশা করছি, তোমাদের গণরুমে উঠতে হবে না।

একই দাবিতে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, সকল অনুষদ ও বিভাগীয় প্রধানদের কাছে বেনামি ই-মেইলের মাধ্যমে সশরীরে ক্লাস শুরু ও অনলাইন ক্লাস বর্জন করার কথা জানায় তারা। দাবি পূরণ না হওয়ায় গতকাল থেকেই বিভিন্ন বিভাগের শিক্ষার্থীরা ক্লাস বর্জন করতে শুরু করে। সর্বশেষ সে দাবির সাথে একাত্মতা প্রকাশ করে আজ মঙ্গলবার অন্তত ২০ টি বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের চলমান অনলাইন ক্লাস বর্জন করেছেন।

কলা ও মানবিকী অনুষদভুক্ত শিক্ষার্থীদের সাথে কথা বলে জানা যায়, অনুষদভুক্ত বাংলা, ইতিহাস, দর্শন, জার্নালিজম এন্ড মিডিয়া স্টাডিজ, চারুকলা ও প্রত্নতত্ত্ব বিভাগের শিক্ষার্থীরা অনলাইন ক্লাস বর্জন করেছে। তবে ইংরেজি বিভাগে অনলাইনে একটি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হওয়ার খবর পাওয়া গেছে। একই চিত্র দেখা গেছে সমাজবিজ্ঞান অনুষদে। সমাজবিজ্ঞান অনুষদের নৃবিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা একযোগে ক্লাস বর্জন করেছে। অপরদিকে বিজনেস স্টাডিজ অনুষদে ম্যানেজমেন্ট স্টাডিজ বিভাগ ব্যতিত অন্যান্য বিভাগে শ্রেণি কার্যক্রম অব্যাহত রয়েছে।

গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের শিক্ষার্থীরা জানিয়েছেন, অনুষদের গণিত, রসায়ন, পরিবেশ বিজ্ঞান ও ভূতাত্ত্বিক বিজ্ঞান বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস বর্জন করেছে। জীববিজ্ঞান অনুষদের ফার্মেসী ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষার্থীরা একই দাবিতে ইতোমধ্যে ক্লাস বর্জন করেছে। আইন অনুষদেও একই চিত্র লক্ষ্য করা গেছে।

এছাড়া ইন্সটিটিউট অফ ইনফরমেশন টেকনোলজি (আইআইটি) ও তুলনামূলক সাহিত্য ও সংস্কৃতি ইন্সটিটিউটের (বিআইসিএলসি) শিক্ষার্থীরাও ক্লাস বর্জনের ডাকে সাড়া দিয়েছে।

গাণিতিক ও পদার্থবিষয়ক অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. ফরিদ আহমদ জানান, আমি বিশ্ববিদ্যালয়ের বাহিরে থাকায় বিষয়টি জানতে পারিনি। মাত্রই শুনলাম। আমরা বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের সাথে কথা বলে সিদ্ধান্ত নিবো। আশা করা যায় দ্রুত এ অবস্থার অবসান ঘটবে।

জীববিজ্ঞান অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. মো. নূহু আলম বলেন, আমি ফেসবুকে দেখেছি যে ওরা একটা তারিখ দিয়েছে ১৬ তারিখ বা এমন একটা সময়ে তারা ক্লাস বর্জন করবে। তবে ভিসি স্যার অবশ্য চেষ্টা করছেন যেন দ্রুত এ সমস্যার সমাধান করা যায়। জানুয়ারির মধ্যেই আশা করি তারা সশরীরে ক্লাস শুরু করতে পারবে।

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম বার্তা ২৪.কমকে জানান, এ ব্যাপারে আমি শুনেছি। নতুন হলগুলোতে আউটসোর্সিং এর মাধ্যমে লোকবল নিয়োগ প্রায় শেষ পর্যায়ে। আপাতত ছেলেদের একটি হল ও মেয়েদের একটি হল খুলে দেওয়া হবে। আমরা নবীন শিক্ষার্থীদের দুটি হলে সিট এলোট দিয়ে চলতি মাসের শেষদিকে তাদের অফলাইনে ক্লাস শুরু করবো।

প্রসঙ্গত, ২০২২-২৩ সেশনের (৫২ ব্যাচ) ভর্তি পরীক্ষার আবেদন শুরু হয় গত বছরের ৯ মে। পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয় ১৮ জুন থেকে ২৫ জুন পর্যন্ত। এছাড়া ভর্তি কার্যক্রম গতবছরের ১৬ আগস্ট শুরু হয়ে ১৮ সেপ্টেম্বর শেষ হয়।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের ও ইউজিসির মধ্যে স্বাক্ষরিত বার্ষিক কর্মসম্পাদন চুক্তি ২০২৩-২৪ থেকে জানা যায়, বিশ্ববিদ্যালয় ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষে ভর্তিকৃত শিক্ষার্থীদের ক্লাস ৩১ অক্টোবর, ৯ নভেম্বর, ১৬ নভেম্বর, ২৩ নভেম্বর শুরু করবে বলে ইউজিসিকে প্রতিশ্রুতি দেয়। কিন্তু প্রতিশ্রুত তারিখে ক্লাস শুরু করতে ব্যর্থ হয় বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন। এই চারটি তারিখের মধ্যে ক্লাস শুরু করতে পারলে ইউজিসি কর্মসম্পাদন সূচক মান ১–এর মধ্যে বিশ্ববিদ্যালয় ১০০ থেকে ৭০ শতাংশ নম্বর পেত। অপর দিকে পরবর্তী ৩০ নভেম্বরের মধ্যে ক্লাস শুরু করতে না পারলে বিশ্ববিদ্যালয় চলতি মানের নিম্নে ৬০ শতাংশ নম্বর পাবে। এ অবস্থায় তড়িঘড়ি করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনলাইনে ক্লাস শুরু করার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে। এরপর ভর্তি কার্যক্রম শেষ হওয়ার দীর্ঘ পাঁচ মাস অতিবাহিত হলেও ক্লাস শুরু করতে পারেনি প্রশাসন। সর্বশেষ গত ৩০ নভেম্বর অনলাইনে ক্লাস শুরু করা হয়।

কিন্তু সশরীরে নবীনদের ক্লাস শুরুর আগেই ২০২৩-২৪ শিক্ষাবর্ষের স্নাতক (সম্মান) প্রথম বর্ষের ভর্তির আবেদন ও পরীক্ষার সময়সূচি প্রকাশ করেছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর