কংক্রিটের আস্তরণে শেকৃবির সবুজের সমারোহ ম্রিয়মাণ

, ক্যাম্পাস

সিফাতুল্লাহ আমিন, শেকৃবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2024-01-25 13:37:37

রাজধানী ঢাকায় অবস্থিত ৮৭ একরের নির্মল সুন্দর একটি ক্যাম্পাস শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। অনেকে ঢাকার মধ্যে অবস্থিত সবুজ গ্রাম বলতেও পছন্দ করেন। তবে সবুজের সেই সমারোহ ক্যাম্পাস থেকে অনেকটা হারিয়ে যাওয়ার পথে। সভ্যতার পালাবদলে আধুনিকতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে সৌন্দর্য বর্ধন করতে গিয়ে সবুজের গ্রামীণ নির্মল পরিবেশ আজ অট্টালিকা দালান আর রৌদ্রের তীব্রতায় যেন অনেকটায় ম্রিয়মাণ।

সভ্যতার সঙ্গে তাল মিলিয়ে আধুনিক কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় গড়ে তুলতে পরিবর্তন অনিবার্য। আর সেই পরিবর্তন ও সৌন্দর্য বর্ধনের লক্ষ্য নিয়েই পুরোনো গাছ কেটে নতুন গাছ লাগানো, পুরোনো ভবন ভেঙ্গে নতুন প্রকল্প বাস্তবায়ন করছে দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তারা। কিন্তু সবুজ নির্মল একটা ক্যাম্পাসে যখন হঠাৎ রৌদ্রের তীব্রতায় পথ চলা অসহায় হয়ে যায়, মনে হয় মরুভূমির মধ্যে একে বেকে চলা কোনো রাস্তা তখন কিছুটা হলেও বিরক্তবোধ জেগে ওঠে ক্যাম্পাসের মানুষদের। 

সৌন্দর্য বর্ধনের প্রকল্প নিয়ে বার্তা২৪ এর সঙ্গে কথা বলেছেন শেকৃবি ক্যাম্পাসের শিক্ষক-শিক্ষার্থী।

কৃষি অনুষদের তৃতীয় বর্ষের এক শিক্ষার্থী অনুভূতি ব্যক্ত করে বলেন,'আমাদের সবুজ শেকৃবি আজ সবুজ বিহীন। যখন ক্যাম্পাসে প্রথম এসেছিলাম তখন এই ক্যাম্পাসের গাছপালা আর প্রকৃতি সব থেকে বেশি আকর্ষণ করেছিল। দিন পরিবর্তন হয়েছে। ক্যাম্পাস হয়েছে অনেক সুন্দর। রাস্তা গুলো পাকা হয়েছে, নতুন সব ভবন হয়েছে।সুন্দর শহীদ মিনার, ভিন্ন ডিজাইনের ভাস্কর্য আর বিশাল টিএসসি সবই আমাদের পরিবর্তনের সুস্পষ্ট প্রমাণ। আর এই পরিবর্তনের সব থেকে বড় প্রমাণ ক্যাম্পাসের বড় গাছগুলো দিনে দিনে কমে যাওয়া। রৌদ্রের তীব্রতায় এখন ক্যাম্পাসে হেঁটে চলা আর মরুভূমির রাজ্য ঘুরে বেড়ানো একই অনুভূতি। কংক্রিটের টবে ক্যাম্পাস জুড়ে গাছ লাগানো প্রশংসিত হলেও এই সৌন্দর্য রাতের ক্যাম্পাসকেই সুন্দর করে তুলে। দিনের বেলা এখন শুধু আকাশে সূর্য আর আশেপাশে পাশে দালানের সমারোহই চোখে বাধে। ক্যাম্পাসের কিছু অংশে অবশিষ্ট কিছু গাছের বিসর্জনের মাধ্যমেই হয়তো আমাদের ক্যাম্পাস সৌন্দর্যে পরিপূর্ণতা লাভ করবে।'

সৌন্দর্য বর্ধন কমিটির সাবেক সদস্য অধ্যাপক জামাল উদ্দিন বলেন, আমি জানি না আমরা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় হওয়ার পরেও সবুজকে সংরক্ষণের বিষয়ে ও ক্যাম্পাসকে সবুজ করার বিষয়ে কতটা দায়িত্ববান। অনেক গাছ লাগানো হয়েছে, ক্যাম্পাসকে সুন্দর করার জন্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে। কিন্তু পনেরো বছর বিশ বছর বয়সী গাছ গুলোকে রেখে কি এই পরিকল্পনা করা যেত না। আজকের রোপণ করা গাছগুলো আগের গাছ গুলোর অবস্থানে যেতে কত বছর লাগবে একটু ভেবে দেখুন।ক্যাম্পাসে রোদ উঠলে হাটতে বের হওয়া যায় না।ক্যাম্পাসের উন্নতিকরণ করা হোক। আমরা সবাই ক্যাম্পাসকে সুন্দর অবস্থানে দেখতে চাই, কিন্তু সবুজ এই প্রকৃতিকে ধ্বংস করে যেন সেই তথাকথিত সৌন্দর্য বর্ধন যেন না করা হয়।


অনুভূতি প্রকাশ করতে গিয়ে আরেক শিক্ষার্থী বলেন, শেখ কামাল ভবনে ক্লাস করতে যাওয়া শিক্ষার্থীরা অনুভব করতে পারে রাস্তার দু’ধারে থাকা গাছ গুলোর প্রয়োজনীয়তা। সৌন্দর্য বর্ধন করতে নাকি এই গাছ গুলো অনেক আগেই কাটা হয়েছিল। সৌন্দর্য কতটুকু প্রকাশিত হয়েছে তা বুঝতে ব্যর্থ হলেও প্রচন্ড রোধের তীব্রতায় গাছ গুলোর প্রয়োজনীয়তা সকল শিক্ষার্থীরা অনুভব করছে।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষক বলেন,আমাদের ক্যাম্পাসে ইন্জিনিয়ারিং বিভাগ সঠিক পরিকল্পনা করতে অনেক ক্ষেত্রেই ব্যর্থ হয়। আর সঠিক পরিকল্পনার অভাবে সুন্দর সব কাজগুলোও অসুন্দর হয়ে যায়।

সৌন্দর্য বর্ধন কমিটির প্রধান অধ্যাপক ড. মো. রফিকুল ইসলাম বলেন, ক্যাম্পাসে বেশ কিছু গাছ কাটা হয়েছিল করোনা কালীন সময়ের আগে। শিক্ষার্থীরা ক্ষুদ্ধ হয়েছিল। এখন কিন্তু কোনো গাছ কাটা হচ্ছে না বা হবেও না। তবে তখনকার সেই গাছগুলো কাটার পেছনে কারণ ছিল। অপরিকল্পিতভাবে সারি সারি দেবদারু গাছ ক্যাম্পাসে লাগানো হয়েছিল পরিকল্পনামাফিক কাজ করা হয় নি বলেই আমাদেরকে গাছগুলো কাটতে হয়েছিল।ক্যাম্পাসে এখন প্রচুর গাছ লাগানো হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য বিভিন্ন জায়গা উন্মুক্তকরণ, কংক্রিটের টবে গাছ লাগানোসহ বেশ কিছু প্রকল্প বাস্তবায়ন করা হয়েছে।

পরবর্তীতে আর গাছ কাটা হবে কিনা এমন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, আমি এতটুকু নিশ্চিত করতে পারি জরুরি প্রয়োজন ব্যতীত ক্যাম্পাসের আর একটা গাছও এখন কাটা হবে না।

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. শহীদুর রশিদ ভূঁইয়া বলেন, ক্যাম্পাসে গাছ কাটার প্রচলন শুরু হয়েছে আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার আগে। তবে অনিয়মিত ও অপরিকল্পিতভাবে লাগানো গাছ গুলোই কাটা হয়েছে। সৌন্দর্য বর্ধনের জন্য নিয়মতান্ত্রিক ও পরিকল্পিত পদ্ধতিতে গাছ লাগানোর প্রয়োজন ছিল যা এর আগে হয়নি বলেই গাছগুলো কাটতে হয়েছিল।তবে আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়ার পরে ঝুকিপূর্ণ কয়েকটি গাছ যেগুলো ভেঙে যাওয়ার সম্ভাবনা ছিল এবং জায়গা উন্মুক্তকরণে কিছু গাছ কাটা হয়েছে।এগুলো ব্যতীত আমি দায়িত্বপ্রাপ্ত হওয়া অবস্থায় গাছ কাটা হয়নি। একজন উপাচার্য ব্যতীত ক্যাম্পাসের একজন হিসেবে প্রিয় এ ক্যাম্পাসকে আমিও সবুজ দেখতে চাই। সবুজের নির্মলতা বৃদ্ধি করার লক্ষ্যে আমরা কিন্তু নতুন করে গাছ লাগিয়েছি এক হাজারেও বেশি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর