জাবিতে চারুকলায় চলছে বর্ষবরণের নানা প্রস্তুতি

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-30 05:54:23

জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ে (জাবি) চলছে বাংলা নববর্ষ বরণের সর্বশেষ প্রস্তুতি। বিশ্ববিদ্যালয়ের চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজনে রঙ-তুলির শেষ আঁচড় দিচ্ছেন শিল্পীরা। নববর্ষ বরণে এবারে মূল প্রতিপাদ্য রাখা হয়েছে ‘বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি’।

এবারে মঙ্গল শোভাযাত্রায় মুখোশ পরে অংশগ্রহণ করা না গেলেও মুখোশ হাতে নেওয়া যাবে। এ ছাড়াও রঙ ছিটাতে নিষেধ করা হয়েছে। কেউ রঙ ছিটালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানানো হয়েছে। এ ছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানের সঙ্গে সামঞ্জস্যতা রেখে বিভিন্ন অনুষদ ও বিভাগ নিজ নিজ উদ্যোগে নানা আয়োজন হাতে নিয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের পুরাতন কলা ভবনের সামনে পুরোদমে চলছে বর্ষবরণের প্রস্তুতি। সেখানে ঘুরে দেখা যায়, শিক্ষার্থীরা ব্যস্ত মঙ্গল শোভাযাত্রার আয়োজন নিয়ে। এবার বিশ্ববিদ্যালয়ের মঙ্গল শোভাযাত্রার তিনটি 'মোটিফ' রাখা হয়েছে। এর মধ্যে একটি পায়রা এবং অন্য দুটি হলো টেপা পুতুল।

মোটিফের ব্যাপারে জিজ্ঞাস করলে চারুকলা বিভাগের শিক্ষার্থী রিফাত হোসেন রাব্বি বলেন, "কবুতর শান্তির প্রতীক। দেশে দেশে যে হানাহানি, যুদ্ধ-বিগ্রহ, দারিদ্রতা, অসাম্য এসব বন্ধের লক্ষ্যে পায়রাকে শান্তির প্রতীক হিসেবে দেখানো হয়েছে। আমরা মাটিতেই বড় হয়েছি। আমাদের সঙ্গে এই মাটির অনেক যোগসূত্র আছে। মোটিফ হিসেবে পোড়া মাটির টেপা পুতুল দুটোকে বাংলা লোকশিল্পের ঐতিহ্য হিসেবে তুলে ধরা হয়েছে।"

এবার মঙ্গল শোভাযাত্রার সাজ-সজ্জা কমিটির আহ্বায়ক হিসেবে থাকা চারুকলা বিভাগের সভাপতি ফারহানা তাবাসসুম বলেন,'পহেলা বৈশাখের আয়োজন মূলত বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ থেকে করা হয়েছে। চারুকলা বিভাগ সেখানে মঙ্গল শোভাযাত্রার সাজ-সজ্জার দায়িত্ব নিয়েছে। আমাদের কাজ প্রায় শেষ; শিক্ষার্থী ও শিক্ষকরা প্রচুর পরিশ্রম করেছেন। বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধের মধ্যেও পহেলা বৈশাখ উৎযাপন হবে এটা ভেবে আমরা আনন্দিত।'

সরেজমিন দেখা যায়, পরিকল্পনা অনুযায়ী নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছেন শিক্ষার্থীরা। প্রতিপাদ্যের সঙ্গে মিল রেখে পুরাতন কলা ভবনের সামনের জায়গাটিতে অনেকে মিলে বাঁশ ও কাঠ দিয়ে তৈরি করছেন শান্তির প্রতীক ‘পায়রা’। ভবনের অনেকেই ব্যস্ত টেপা পুতুল তৈরিতে। আবার চারুশিল্পীদের মধ্যে কেউ গভীর মনোযোগ দিয়ে আঁকছেন জলরঙের ছবি, কেউ নকশা করছেন মাটির সরায়। এছাড়া কাগজ কেটে ফুল, প্যাঁচা, পাখপাখালি তৈরি করছেন শিক্ষার্থীরা।

চারুকলা বিভাগের ৪৮ তম ব্যাচের শিক্ষার্থী সাজিয়া শারমিন শ্রাবণী বলেন, 'আমরা প্রতিবছর পহেলা বৈশাখের এ আয়োজনের জন্য অপেক্ষার প্রহর গুনি। এবার রমজান হওয়ায় আয়োজন কিছুটা স্তমিত হয়ে পড়েছে। আয়োজন কম হলেও রমজানে পহেলা বৈশাখ ভিন্ন রকম আমেজ ছড়াচ্ছে। এবারের নববর্ষের শোভাযাত্রা সুন্দর হবে বলে প্রত্যাশা রাখছি।'

বাংলা বর্ষবরণকে ঘিরে চারুকলা বিভাগের উদ্যোগে পুরাতন কলা ভবনের ফটক সামনে ‘বৈশাখী হাট ১৪৩০' নামক একটি অস্থায়ী দোকান বসানো হয়েছে। দোকানটিতে শিক্ষার্থীদের তৈরি বিভিন্ন বস্তুর মুখোশ সংবলিত ভাস্কর্য, চিত্র, শোপিস পাওয়া যাচ্ছে।


চারুকলা বিভাগের সহকারী অধ্যাপক শামীম রেজা বলেন, "এবারের প্রতিপাদ্য বরিষ ধরা-মাঝে শান্তির বারি এর সঙ্গে মিল রেখে এবারের আমরা শান্তির প্রতীক পায়রা তৈরি করেছি। শোলাশিল্পের সূক্ষ্ম কাজের আদলে পায়রাটি তৈরি করা হয়েছে। আমাদের ঐতিহ্য মৃৎশিল্পের নিদর্শন হিসেবে দুটি টেপা পুতুল তৈরি করা হয়েছে। সেইসঙ্গে তৈরি করা হয়েছে পেঁচা, বাঘ, হাতি, ঘোড়ার আদলে মুখোশ। তিনি আরও বলেন, ‘এবার বিভাগ থেকে আলাদা কোনো অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হবে না। বিশ্ববিদ্যালয়ের আয়োজনের সঙ্গে সামঞ্জস্য রেখে মঙ্গল শোভাযাত্রা, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানগুলো করা হবে। "

বিশ্ববিদ্যালয়ের চুক্তিভিত্তিক রেজিস্ট্রার রহিমা কানিজ স্বাক্ষরিত বর্ষবরণ ও পহেলা বৈশাখ ১৪৩০ উৎযাপন সংক্রান্ত এক বিজ্ঞপ্তিতে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করার কথা উল্লেখ করা হয়েছে।

শুক্রবার সকাল পৌনে ১০ টায় কর্তৃপক্ষের উদ্যোগে বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, অফিস, হল, বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল ও কলেজের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং মহিলা ক্লাব ও ক্যাম্পাসের সকলের অংশগ্রহণে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজনেস স্টাডিজ অনুষদ ভবন থেকে মঙ্গল শোভাযাত্রা শুরু হয়ে ছাত্র-শিক্ষক কেন্দ্রে গিয়ে শেষ হবে।

এর পুর্বে সকাল সোয়া ৮টা থেকে সোয়া ৯টা পর্যন্ত থাকছে বিশ্ববিদ্যালয় ক্লাবে উপাচার্য অধ্যাপক নূরুল আলমের সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের শুভেচ্ছা বিনিমিয় হবে।

কর্তৃপক্ষের নির্দেশনা: 

এবারের পহেলা বৈশাখে কিছু নির্দেশনা রাখা হয়েছে। এর মধ্যে-
পহেলা বৈশাখের দিন দাপ্তরিক কাজে নিয়োজিত ব্যক্তিরা ক্যাম্পাসে মোটরসাইকেল নিয়ে আসতে পাবেন না। ওই দিন বহিরাগত প্রাইভেট গাড়ি চলাচল সীমিত রাখা হবে এবং কেন্দ্রীয় মসজিদের পশ্চিমে ও বিশ্ববিদ্যালয়ের স্কুল ও কলেজের মাঠে গাড়ি পার্কিংয়ের ব্যবস্থা রাখা হবে। এ বছর নববর্ষের মঙ্গল শোভাযাত্রার একটি মাত্র ব্যানার থাকবে। পহেলা বৈশাখে কোনো রং ছিটানো যাবে না। কেউ রং ছিটালে তার বিরুদ্ধে শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। মুখোশ পরে মঙ্গল শোভাযাত্রায় অংশগ্রহণ করা যাবে না, তবে মুখোশ হাতে নেওয়া যাবে। বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মসূচির সাথে সমন্বয় করে বিভিন্ন অনুষদ, বিভাগ, হল ও অফিস নিজ নিজ উদ্যোগে পহেলা বৈশাখ উৎযাপনের কর্মসূচি পালন করবে। ঢাকা শহরে অবস্থানরত শিক্ষক-শিক্ষার্থী, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য ক্যাম্পাসে আসা যাওয়ার জন্য যানবাহনের ব্যবস্থা করা হবে। বাস প্রচলিত রুটে ছেড়ে আসবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর