চবি ক্যাম্পাসে 'হাতিয়া দ্বীপ প্রেমিক' মাইন উদ্দিন

বিবিধ, ক্যাম্পাস

স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-26 23:38:50

দেশ-বিদেশের হাজার হাজার হাতিয়া দ্বীপবাসীকে সাইবার জগতে টেনে এনেছেন তিনি। বিচ্ছিন্ন দ্বীপটিকে ঘিরে গড়েছেন বিশাল ভার্চুয়াল কমিউনিটি। চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় (চবি) ক্যাম্পাসের সকলেই তাকে চেনে 'হাতিয়া দ্বীপ প্রেমিক' পরিচয়ে। মো. মাইন উদ্দিন নামের এই তরুণ শিক্ষার্থী পাহাড় ও অরণ্যের চবি ক্যাম্পাস মুখরিত করেন বুকে একখণ্ড হাতিয়া দ্বীপ নিয়ে।

কোনও রাজনীতি বা দলীয় পদের আকর্ষণ তার নেই। প্রত্যাশা করেন অবহেলিত হাতিয়া দ্বীপের পশ্চাৎপদতার অবসান। বৃহত্তর নোয়াখালী ও ভোলার দক্ষিণে যে দ্বীপ অথৈই সাগরের জলরাশিতে একাকী ভাসছে, সেখানে উন্নয়ন, আধুনিকায়ন, স্বাস্থ্য ও যোগাযোগের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করতে চান তিনি। এজন্য জনসচেতনের পথে হাঁটছেন এই তরুণ।

মো. মাইন উদ্দিন প্রতিক্ষণ তৎপর থাকেন হাতিয়ার স্বার্থ সংশ্লিষ্ট নানা বিষয়ে। কোন রাস্তা খারাপ, কোথায় বিদ্যুৎ বা ডাক্তার নেই, কোথায় যৌতুক বা অজ্ঞতা রয়েছে, তাই নিয়ে সচেতনতা বাড়াতে কাজ করেন তিনি। চট্টগ্রাম থেকে হাতিয়া যাওয়া-আসার স্টিমার সার্ভিসের সমস্যা ও অব্যবস্থা নিয়ে দেন-দরবার করে নজর কাড়েন সংশ্লিষ্ট কতৃর্পক্ষের।

বার্তা২৪.কমকে মো. মাইন উদ্দিন বলেন, ‘বিশাল বঙ্গোপসাগরের প্রচণ্ড প্রাকৃতিক আঘাত বাংলাদেশের শরীরে লাগার আগেই বুক পেতে প্রতিহত করে হাতিয়া দ্বীপ। হাতিয়া দ্বীপবাসীর উপর দিয়ে নিত্য বয়ে যায় দুর্যোগের ঝাপ্টা। গভীর জলের মাঝখানে হাতিয়া, মনপুরা, ছেঁড়াদ্বীপ নিঃসঙ্গ ভেসে আছে। এই জলবেষ্টিত জনপদ ও মানুষকে দেখার যেন কেউ নেই।’

‘আমরা সরকারের পাশাপাশি হাতিয়াবাসীকে আত্মসচেতন করতে চাই’ বলেন মো. মাইন উদ্দিন, ‘কারণ হাতিয়ার বহুজন দেশ-বিদেশে উচ্চ পদে ও ক্ষমতায় আছেন। কিন্তু হাতিয়া ছেড়ে যাওয়ার পর আর কেউ এখানে ফিরেও আসে না, এলাকার মাটি ও মানুষের খোঁজ-খবরও নেন না। ফলে কিছু সংগ্রামী মানুষ ছাড়া হাতিয়ায় বিশেষ কেউ থাকেন না। এদের দুঃখ-কষ্ট-বিপদ নিয়ে কেউ ভাবেন না।’

বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা হাতিয়াবাসীর সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যয়নরত হাতিয়ার শিক্ষার্থীদের নেটওয়ার্কিং করে মো. মাইন উদ্দিন সামাজিক নিরাপত্তা বলয় এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কিছু বিষয় সকলের সামনে নিয়ে এসেছেন। হাতিয়ার অপার সৌন্দর্য, পর্যটন সম্ভাবনা, মৎস্য ও প্রাকৃতিক সম্পদের সর্বোচ্চ ব্যবহারের দিকগুলোকেও বিজ্ঞানভিত্তিক ও অত্যাধুনিক করার মাধ্যমে পরিবেশ-বান্ধব ও টেকসই করার বিষয়গুলো তিনি নীতিপ্রণেতা ও স্থানীয় জনসমাজের সামনে আনতে চেষ্টা করছেন।

‘চরম অবহেলিত ও সুবিধা বঞ্চিত হাতিয়া দ্বীপাঞ্চল অনেকগুলো অনিন্দ্য সুন্দর দ্বীপের সমাহার। কিন্তু যোগাযোগ ও ‍নিরাপত্তা ব্যবস্থার স্বল্পতা কারণে এ অঞ্চল বিশ্ব থেকে দৃশ্যত বিচ্ছিন্ন ও পশ্চাৎপদ। অথচ বিশ্বে এর চেয়েও সঙ্কুল স্থানকে মানুষ নিরাপদ ও আর্থিক লাভজনক করেছে। সকলের সম্মিলিত চেষ্টায় হাতিয়া দ্বীপাঞ্চলকেও বাংলাদেশের মুক্তা হিসাবে গড়ে তোলা সম্ভব’, বলে বিশ্বাস করেন মো. মাইন উদ্দিন।

চিন্তা, চেতনা, কর্ম ও প্রচেষ্টার সব কিছুতেই হাতিয়ার ইস্যু এতো বেশি প্রোজ্জ্বল যে রাজনীতি বিজ্ঞান বিভাগের স্নাতকোত্তর ছাত্র মো. মাইন উদ্দিন ‘হাতিয়া দ্বীপ প্রেমিক’ মর্মে বিশেষ পরিচিতি পেয়েছেন। এজন্য আনন্দিত মাইন উদ্দিন বলেন, ‘যে পেশায় বা যে স্থানেই থাকি না কেন, জীবনের সব সময় হাতিয়া দ্বীপবাসীর ঐক্য ও এলাকার উন্নয়নে কাজ করে যাবো। চবি ক্যাম্পাস ছেড়ে যাওয়ার সময়ও এখানে রেখে যাবো হাতিয়ার স্বর্ণালী স্মৃতিচিহ্ন।’ 

প্রতিষ্ঠার অর্ধ শতবর্ষে চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয়ের হাজার হাজার শিক্ষার্থীর মিছিলে ‘হাতিয়া দ্বীপ প্রেমিক’ মো. মাইন উদ্দিনের কথা নিশ্চয় আলাদাভাবে মনে রাখবে তার সহপাঠী ও সমকালের ছাত্র-ছাত্রীরা। চবি ক্যাম্পাসের পার্বত্যময় প্রকৃতি ও নিসর্গে মিশে থাকবে দ্বীপ থেকে আসা এই অন্য রকম একজন মাইন উদ্দিনের স্মৃতি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর