শহীদ মিনারে তোয়াব খানকে গার্ড অব অনার

, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-31 21:42:50

কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে সর্বস্তরের মানুষের ফুলেল শ্রদ্ধায় সিক্ত হলেন দৈনিক বাংলার সম্পাদক ও একুশে পদকপ্রাপ্ত বর্ষীয়ান সাংবাদিক তোয়াব খানের মরদেহ। সেই সঙ্গে ঢাকা জেলা প্রশাসনের উদ্যেগে শহীদ মিনারে রাষ্ট্রীয় শ্রদ্ধা ‘গার্ড অব অনার’ প্রদান করা দেশ বরেণ্য প্রয়াত এ সাংবাদিককে। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৮৭ বছর।

সোমবার (৩ অক্টোবর) সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোটের আয়োজনে সর্বস্তরের মানুষের শ্রদ্ধা নিবেদনের জন্য বেলা সাড়ে ১১টা থেকে সাড়ে ১২টা পর্যন্ত কফিন রাখা হয়।

প্রথমে রাষ্ট্রপতির পক্ষে তার সহকারী সামরিক সচিব মেজর লে. কর্নেল সৈয়দ মুহাম্মদ জাহাঙ্গীর আলম শ্রদ্ধা নিবেদন করেন। এরপর প্রধানমন্ত্রীর পক্ষে সহকারী সামরিক সচিব লে. কর্নেল জি. এম. রাজীব আহমেদ সম্মান প্রদর্শন করেন।

এছাড়াও তোয়াব খানের মরদেহে শ্রদ্ধা নিবেদন করেন বাংলাদেশ আওয়ামীলীগ, সম্মিলিত সাংস্কৃতিক জোট, একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মুল কমিটি, বঙ্গবন্ধু সাংস্কৃতিক জোটসহ দেশের বিভিন্ন সামাজিক, রাজনৈতিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক এবং সড়ক পরিবহন ও সেতুমন্ত্রী ওবায়দুল কাদের বলেন, তোয়াব খানের মৃত্যুতে সাংবাদ জগতের যে শূন্যতা তা কখনোই পূরণ হবার না। তিনি সবসময় নীরবে-নিভৃতে কাজ করে গেছেন দেশের এ প্রতিথযশা সাংবাদিক। ভাষা সৈনিক, শব্দ সৈনিক ও সাংবাদিক তোয়াব খানের মৃত্যুতে আমরা তাঁর বিদেহী আত্মার মাগফেরাত কামনা করছি।

এর আগে সকাল ১০টায় তেজগাঁওয়ে নিউজবাংলা ও দৈনিক বাংলা কার্যালয়ে নেয়ার পর সেখানে প্রথম জানাজা অনুষ্ঠিত হয়। কেন্দ্রীয় শহীদ মিনারে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে নেয়া হবে জাতীয় প্রেস ক্লাবে। সেখানে তাকে রাখা হবে বেলা ১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত। ওই সময় তার দ্বিতীয় জানাজা হবে। জাতীয় প্রেস ক্লাব থেকে মরদেহ নেয়া হবে গুলশানে তার নিজ বাসভবনে। বাদ আসর গুলশান আজাদ মসজিদে তৃতীয় জানাজা শেষে সর্বজনশ্রদ্ধেয় এই সাংবাদিককে দাফন করা হবে বনানী কবরস্থানে।

উল্লেখ্য, গেল শনিবার (১ অক্টোবর) বার্ধক্যজনিত জটিলতায় রাজধানীর একটি হাসপাতালে বেলা সাড়ে ১২টার দিকে পরলোক গমন করেন দেচের এই প্রথিতযশা সাংবাদিক।

তোয়াব খানের মৃত্যুতে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা শোক জানিয়েছেন। এক শোকবার্তায় রাষ্ট্রপতি বলেন, তোয়াব খান ছিলেন বাংলাদেশের সাংবাদিকতাজগতের পথিকৃৎ। তার মৃত্যুতে দেশের গণমাধ্যমজগতে যে শূন্যতার সৃষ্টি হলো, তা কখনো পূরণ হওয়ার নয়।

প্রধানমন্ত্রী তার শোকবার্তায় বলেন, মুক্তিযুদ্ধের সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্রের শব্দসৈনিকের ভূমিকা পালন করেন তোয়াব খান।

১৯৩৪ সালের ২৪ এপ্রিল সাতক্ষীরা জেলার রসুলপুর গ্রামে জন্মগ্রহণ করেন তোয়াব খান। ছাত্রজীবন থেকেই তিনি তৎকালীন বিভিন্ন পত্রিকায় সমকালীন ইস্যু নিয়ে লেখালেখি করতেন। সাপ্তাহিক জনতার মাধ্যমে ১৯৫৩ সালে তোয়াব খানের সাংবাদিকতা জীবন শুরু।

এরপর ১৯৫৫ সালে তিনি দৈনিক সংবাদ পত্রিকায় যোগ দেন। ১৯৬১ সালে তিনি পত্রিকাটির বার্তা সম্পাদক হন। এর তিন বছর পর ১৯৬৪ সালে দৈনিক পাকিস্তানে যোগ দেন। মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি শব্দ সৈনিক হিসেবে ভূমিকা রেখেছিলেন। সে সময় তার আকর্ষণীয় উপস্থাপনায় নিয়মিত প্রচারিত হয় ‘পিণ্ডির প্রলাপ’ নামের অনুষ্ঠান। স্বাধীনতার পর দৈনিক পাকিস্তান থেকে বদলে যাওয়া দৈনিক বাংলার প্রধান সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন তোয়াব খান।

১৯৭৩ থেকে ১৯৭৫ সাল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রেস সচিব ছিলেন তোয়াব খান। দেশের প্রধান তথ্য কর্মকর্তা ও প্রেস ইনস্টিটিউট অফ বাংলাদেশের মহাপরিচালকের দায়িত্বও পালন করেন এ সাংবাদিক। প্রেসিডেন্ট এইচএম এরশাদের প্রেস সচিবের দায়িত্বও পালন করেছিলেন তোয়াব খান। এরশাদের পতনের পর ১৯৯১ সালে অস্থায়ী সরকারের প্রেসিডেন্ট বিচারপতি সাহাবুদ্দীন আহমদের প্রেস সচিবও ছিলেন তিনি।

দৈনিক জনকণ্ঠের শুরু থেকে গত বছরের অক্টোবর পর্যন্ত পত্রিকাটির উপদেষ্টা সম্পাদক ছিলেন তিনি। এরপর নতুন আঙ্গিক ও ব্যবস্থাপনায় প্রকাশিত দৈনিক বাংলার সম্পাদকের দায়িত্ব নেন তিনি।

২০১৬ সালে সাংবাদিকতায় বিশেষ অবদানের জন্য একুশে পদকে ভূষিত হন তোয়াব খান। একই বছর তাকে বাংলা একাডেমি সম্মানীত ফেলো নির্বাচিত করে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর