বিভাগ একীভূতকরণের দ্বন্দ্বে সেশনজটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

বিবিধ, ক্যাম্পাস

সাইফ সাইফুল্লাহ, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪ | 2023-09-01 17:54:52

বিভাগ একীভূতকরণকে কেন্দ্র করে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে (রাবি) ইলেক্ট্রিক্যাল অ্যান্ড ইলেকট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (ইইই) বিভাগের সঙ্গে ফলিত পদার্থবিজ্ঞান ও ইলেক্ট্রনিক ইঞ্জিনিয়ারিং (এপিইই) বিভাগের সৃষ্ট দ্বন্দ্বের ফলে ভয়াবহ সেশন জটের শঙ্কায় পড়েছেন বিভাগ দুটির প্রায় সাড়ে তিনশ শিক্ষার্থী।

প্রায় এক মাস ধরে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে অবস্থান কর্মসূচি, স্মারকলিপি প্রদান, মানববন্ধন পালন ও দুই বিভাগে পক্ষে-বিপক্ষে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদের সিন্ধান্তে অনড় থাকার ফলে এখনও পর্যন্ত বিষয়টি সুরাহা করতে পারে নি বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। ফলে প্রায় ছয়মাসের সেশন জটের শঙ্কায় রয়েছেন দুই বিভাগের শিক্ষার্থীরা।

এদিকে, দাবি আদায়ের জন্য প্রথম বিজ্ঞান ভবনের সামনে আজ সোমবার (৩ ডিসেম্বর) সকাল থেকে আমরণ অনশন শুরু করে এপিইই’র শতাধিক শিক্ষার্থী। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত অনশন চালিয়ে যাওয়ার ঘোষণা দেন তারা।

এপিইই বিভাগ সূত্রে জানা যায়, অধিকাংশ চাকরির বিজ্ঞপ্তিতে এপিইই বিভাগের কোন কোড থাকে না এমন কারণ দেখিয়ে বিভাগটিকে ট্রিপল-ই বিভাগের সঙ্গে একীভূত করার দাবি তোলেন এপিইই’র শিক্ষার্থীরা।

তাদের দাবির প্রেক্ষিতে গত ১৫ নভেম্বর বিভাগের একাডেমিক কমিটি প্রকৌশল অনুষদের কাছে একটি প্রস্তাব পাঠায়। কিন্তু ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষকদের বিরোধিতার কারণে ২৯ নভেম্বর অনুষ্ঠিত অনুষদের সভায় প্রস্তাবটি বাতিল করা হয় বলে সভায় উপস্থিত এক সদস্য জানান। পরে এপিইই’র শিক্ষার্থীরা অনুষদের সিদ্ধান্তকে বর্জন করে। আগামী বুধবার (৫ ডিসেম্বর) বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কমিটির সভায় আবারও বিষয়টি উত্থাপিত হবে।

বিশ্ববিদ্যালয় সূত্রে জানা যায়, কর্মসূচির অংশ হিসেবে এপিইই’র শিক্ষার্থীরা ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করে মানববন্ধন, অবস্থান কর্মসূচি ও বিক্ষোভ মিছিল করে। বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনকে স্মারকলিপিও দেয় তারা। এই আন্দোলনের প্রেক্ষিতে গত ১৬ নভেম্বর বিভাগ দুটিকে এক না করার দাবি তোলেন ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষার্থীরা। পরদিন থেকে তারাও অবস্থান কর্মসূচি শুরু করেন।

বিভাগ সূত্রে জানা যায়, এপিইই বিভাগে প্রথম বর্ষ থেকে মাস্টার্স পর্যন্ত প্রায় আড়াইশ এবং ট্রিপল-ই বিভাগের তিনটি বর্ষে প্রায় একশ জনের মতো শিক্ষার্থী অধ্যয়নরত আছেন। দুটি বিভাগেরই সেমিস্টার পদ্ধতিতে পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়। চলতি বর্ষের দ্বিতীয় সেমিস্টার পরীক্ষা ডিসেম্বর থেকে জানুয়ারির মধ্যে অনুষ্ঠিত হওয়ার কথা ছিলো। কিন্তু ক্লাস বর্জন করে শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের কারণে কোর্স সম্পন্ন না হওয়ায় সময়মত পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে বিভাগ কর্তৃপক্ষ। এতে করে দুই বিভাগের শিক্ষার্থীদেরই কমপক্ষে ছয় মাস সেশন জটে পড়ার আশঙ্কা রয়েছে।

এপিইই’র শিক্ষার্থীরা জানান, বিভাগ এক করার আন্দোলন এই প্রথম নয়। দুই বিভাগেরই সিলেবাসের মিল থাকায় ২০১৫ সালে ট্রিপল-ই বিভাগ চালুর সময় শিক্ষার্থীরা এপিইই বিভাগকে ট্রিপল-ই করার দাবি জানায়। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয় দাবিটি মেনে নেয়নি।

শিক্ষার্থীরা আরও জানান, বর্তমানে অধিকাংশ চাকরিতে এপিইই’র কোন সাবজেক্ট কোড থাকে না। তাই আবেদন করাও সম্ভব হয় না। আমরা ইঞ্জিনিয়ারিং সার্টিফিকেট পেলেও চাকুরির ক্ষেত্রে ট্রিপল-ই কেই অগ্রাধিকার দেওয়া হয়। তাই ভবিষ্যতের এ কথা চিন্তা করেই সেশন জটকে মুখ্য হিসেবে দেখছেন তারা।

ট্রিপল-ই বিভাগের শিক্ষার্থীরা জানান, দুটি বিভাগের সিলেবাসে সামান্য মিল রয়েছে। এ ছাড়াও বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতিষ্ঠিত দুটি বিভাগকে এক করার কোন নজির নেই। বিভাগ এক হলে ট্রিপল-ই’র শিক্ষার্থীরা তাদের সুযোগ-সুবিধা থেকে বঞ্চিত হবে এবং বিভাগের স্বকীয়তা হারাবে।

এপিইই বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক আরিফুল ইসলাম নাহিদ বার্তা২৪-কে বলেন, ‘এভাবে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করায় জানুয়ারিতে অনুষ্ঠেয় সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে না। ক্লাসে ফিরলে আবার কবে নাগাদ পরীক্ষা নেওয়া সম্ভব হবে সে বিষয়েও নিশ্চিতভাবে বলা যাচ্ছে না।’

তিনি আরও বলেন, ‘শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের প্রেক্ষিতে আমরা অনুষদের কাছে প্রস্তাব পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু অনুষদ তা বাতিল করে দিয়েছে।’

ট্র্রিপল-ই বিভাগের সভাপতি আবু জাফর মু. তৌহিদুল ইসলাম বার্তা২৪-কে বলেন, ‘অনুষদের সিদ্ধান্তের পরও শিক্ষার্থীরা কেন আন্দোলন করছে তা আমার বোধগম্য নয়। এ ছাড়া আন্দোলনের কারণে শিক্ষার্থীদেরও পড়ালেখায় যেমন ক্ষতি হচ্ছে তেমনি সেশনজটে পড়ার সম্ভাবনাও বেড়ে যাচ্ছে।’

এ ব্যাপারে প্রকৌশল অনুষদের অধিকর্তা অধ্যাপক একরামুল হামিদ বার্তা২৪-কে বলেন, ‘বিভাগ দুটি এক করতে হলে দুই বিভাগেরই সম্মতি দরকার। সেটা না থাকায়, ফলিত পদার্থবিজ্ঞান বিভাগটি নিজ নামেই থাকছে।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বার্তা২৪-কে বলেন, ‘যেহেতু একটা সমস্যা তৈরি হয়েছে সেহেতু এর সমাধান অবশ্যই করতে হবে। সামনে বিশ্ববিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের সভায় বিষয়টি নিয়ে আলোচনা করা হবে।’

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর