মধ্যরাতে কুবির দুই হলে ছাত্রলীগের সংঘর্ষ, আহত ১৫

, ক্যাম্পাস

কুবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুমিল্লা | 2023-08-24 09:28:01

পূর্ব ঘটনার জেরে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের ছাত্রলীগ নেতা-কর্মীদের মধ্যে ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় প্রায় ১৫ জন আহত হয়েছে। শনিবার (১০ সেপ্টেম্বর) রাত ১২ টা থেকেই দুই হলের মধ্যবর্তী রাস্তায় এ ঘটনা ঘটে।

সরেজমিনে দেখা যায়, দুই হলেরই নেতা-কর্মীরা মধ্যবর্তী ঐ রাস্তায় বাঁশ, গাছের ডাল, রড নিয়ে তেড়ে যায় ও ইট ছুঁড়তে থাকে। প্রায় দেড় ঘণ্টার বেশি সময় যাবৎ এমন ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ার পরিস্থিতি চলমান থাকে। একপর্যায়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম, শেখ হাসিনা হলের প্রভোস্ট সাহেদুর রহমান, অর্থনীতি বিভাগের সহকারী অধ্যাপক নাসির হোসেইন এসে প্রথমে বঙ্গবন্ধু হলের শিক্ষার্থীদের ভেতরে নিয়ে হলের মূল ফটক বন্ধ করেন। এরপর তারা কাজী নজরুল ইসলাম হলে গিয়ে কথা বলে পরিস্থিতি শান্ত করেন। তবে এ ঘটনায় কাজী নজরুল ইসলাম হল সংশ্লিষ্ট প্রশাসনের কাউকে দেখা যায়নি। শেষ পর্যায়ে হলের হাউজ টিউটর মো: এনামুল হক এসে উপস্থিত হন। এ নিয়ে ক্ষোভও প্রকাশ করেছেন শিক্ষার্থীরা।

কাজী নজরুল ইসলাম হলের প্রভোস্ট মিহির লাল ভৌমিককে ফোনে যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তিনি ফোন রিসিভ করেননি। ঘটনাস্থলে থাকা নজরুল হলের হাউজ টিউটর মো: এনামুল হক বলেন, ঘটনা সম্পর্কে জানতে পেরে দ্রুত ঘটনাস্থলে উপস্থিত হই। নজরুল হলের ছেলেদের সাথে কথা বলেছি। প্রক্টরিয়াল বডির সাথে সমন্বয় করে পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এর আগে শুক্রবার (৯ সেপ্টেম্বর) দুপুরে জুম্মার নামাজে যাওয়ার পথে 'সাইড' চাওয়াকে কেন্দ্র করে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল ও কাজী নজরুল ইসলাম হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি ও উত্তেজনা সৃষ্টি হয়।তখন নজরুল হলের আবাসিক শিক্ষার্থী ও ব্যবস্থাপনা শিক্ষা বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের আশরাফুল রায়হান নামাজে যাওয়ার পথে বঙ্গবন্ধু হল গেইটের সামনে লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের একই হলের আবাসিক শিক্ষার্থী সেলিম আহমেদকে সাইড দেওয়ার কথা বলে। এসময় সেলিম আহমেদের কাঁধে ধাক্কা লাগার অভিযোগ ওঠে। নামাজ শেষে এ নিয়ে এক পর্যায়ে সেলিম, সেলিমের বন্ধু মাহবুব ও রায়হান একে অপরের প্রতি উত্তেজিত হয় যা থেকে ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীসহ দুই হলের শিক্ষার্থীদের মধ্যে হাতাহাতি বেঁধে যায়।

ঘটনার রেশে একই দিন সন্ধ্যা ৭টায় বিশ্ববিদ্যালয়ের মুক্তমঞ্চের সামনে নজরুল হলের ছাত্রলীগ কর্মী ফাহিম আবরারের উপর অতর্কিত হামলা করে বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ কর্মী ও বাংলা বিভাগের শিক্ষার্থী আকরাম হোসেন, সালাউদ্দিন আহমেদসহ আরো কয়েকজন।

এরপর রাত ১২ টার দিকে বঙ্গবন্ধু হল সংলগ্ন একটি দোকানে নজরুল হলের প্রায় ৭-৮ জন ছাত্রলীগ কর্মী গিয়ে বঙ্গবন্ধু হলের এক ছাত্রলীগ কর্মীকে মারধর করে। সেই থেকে হওয়া ধাওয়া-পাল্টা ধাওয়ায় বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক আবু সাদাৎ মো সায়েম, বঙ্গবন্ধু হলের ছাত্রলীগ কর্মী ইকবাল হোসাইন, মবিনুল বারি রাকিব, অনুপ দাস, নজরুল হলের সাকিব হাসান দীপ, আশরাফুল রায়হানসহ দুইপক্ষের প্রায় পনেরো জন আহত হওয়ার খবর পাওয়া যায়। বিশ্ববিদ্যালয়ের মেডিক্যাল বন্ধ থাকায় প্রাথমিক চিকিৎসার জন্য কুমিল্লা মেডিকেলে পাঠানো হয়। পরবর্তীতে তারা হলে ফিরে আসে।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট ড. মোকাদ্দেস-উল-ইসলাম বলেন, ঘটনার সাথে সাথে আমরা হল প্রশাসন উপস্থিত হয়েছি। বর্তমানে পরিস্থিতি শান্ত আছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত কী নেয়া হবে তার জন্য সকালে আমরা সবাই মিলে আবার বসবো।

বিশ্ববিদ্যালয়ের শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক মো: রেজাউল ইসলাম মাজেদ বলেন, আমি ঘটনাটা দেখেছি। দুই হলের শিক্ষার্থীদের নিজ নিজ হলে পাঠিয়েছি। যেহেতু দুই হলের শিক্ষার্থীরা ঘটনার সাথে জড়িয়ে গিয়েছে তাই প্রেসিডেন্টসহ বসে আমরা পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেব।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক (ভারপ্রাপ্ত) খায়রুল বাসার সাকিব বলেন, আমি ঘটনার সময় বাড়িতে থাকায় ঘটনাস্থলে ছিলাম না। যতটুকু শুনেছি দুই হল শিক্ষার্থীরা ঘটনায় জড়িয়ে পড়েছে। পরবর্তী সিদ্ধান্ত সংগঠন থেকে নেয়া হবে।

এ ব্যাপারে কাজী নজরুল হল ছাত্রলীগের সভাপতি (ভারপ্রাপ্ত) নাজমুল হাসান পলাশ বলেন, বঙ্গবন্ধুর হলের পোলাপাইন আমাদের হলে এসে হামলা চালায়। আমি হলের সবাইকে ভিতরে রাখার চেষ্টা করেছি। এরকম নৃশংস হামলার বিচার চাই।

বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর কাজী ওমর সিদ্দিকী এ বিষয়ে বলেন, আমরা প্রক্টরিয়াল বডি ঘটনাস্থলে এসে পরিবেশ শান্ত করেছি। পরবর্তীতে হল প্রশাসনের সাথে বসে এ ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর