সেলিম আল দীনের জন্মজয়ন্তী, জাবিতে পাঁচদিনব্যাপী নাট্যোৎসব

, ক্যাম্পাস

জাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 19:13:05

রবীন্দ্রত্তোর কালের শ্রেষ্ঠ নাট্যকার জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের, নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের প্রতিষ্ঠাতা নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের ৭৩তম জন্মতিথিতে পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসব আয়োজন করেছে বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ।

বৃহস্পতিবার (১৮ আগস্ট) সকাল ১০টায় জন্মলগ্নকাল উদযাপন নিমিত্ত পুষ্প অভিযাত্রা বের করে জাবি নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ।

পুষ্প অভিযাত্রায় অংশ নেন জাবি উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. নূরুল আলম, নাট্যব্যক্তিত্ব ও ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু, জাবি নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইস্রাফিল আহমেদ সহ বিভাগের অন্যান্য শিক্ষক ও শিক্ষার্থীরা।

পুষ্প অভিযাত্রাটি বিশ্ববিদ্যালয়ের মৃৎ মঞ্চ থেকে শুরু হয়ে বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ স্থান প্রদক্ষিণ করে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় মসজিদের পাশে সেলিম আল দীনের সমাধিস্থলে এসে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে শেষ হয়।

এরপর সমাধিতে ফুল দিয়ে শ্রদ্ধা জানায় নাট্যদল জাহাঙ্গীরনগর থিয়েটার, ঢাকা থিয়েটার, নাট্যস্নাতক মঞ্চ, স্বপ্নদল, বাংলাদেশ গ্রাম থিয়েটার, বাংলদেশের পুতুল নাট্য গবেষণা ও উন্নয়ন কেন্দ্র, থিয়েটার এন্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়, তালুকনগর থিয়েটারসহ বিভিন্ন নাট্য সংগঠন।

সমাধিতে শ্রদ্ধা নিবেদন শেষে সংক্ষিপ্ত সভায় নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগের সভাপতি অধ্যাপক ড. ইস্রাফিল আহমেদ বলেন, ‘সেলিম আল দীনের ৭৩ তম জন্মজয়ন্তীতে আমরা তাকে গভীর শ্রদ্ধায় স্মরণ করছি। পাঁচ দিনব্যাপী নাট্যোৎসবের এ আয়োজনে আপনারা সবাই আমন্ত্রিত। এ নাট্যোৎসবের মাধ্যমে সেলিম আল দীনের নাট্যদর্শন আরো বেশি মানুষের মাঝে পৌছে দিতে পারবো বলে আমাদের বিশ্বাস।’

নাট্যব্যক্তিত্ব ও ঢাকা থিয়েটারের অন্যতম প্রতিষ্ঠাতা বীর মুক্তিযোদ্ধা নাসির উদ্দিন ইউসুফ বাচ্চু বলেন, ‘সেলিম আল দীন শুধু একজন নাট্যকার নন, সেলিম একটি ঘটনা। ভারতবর্ষে হাজার বছরের শাসনের পরও সংস্কৃতি কিন্তু হারিয়ে যায়নি। নতুন ধর্মপ্রচার হলেও ভাষা-সংস্কৃতি হারিয়ে যায়নি। এখানকার জাতিগোষ্ঠীর ধর্মের ভাষা আর সংস্কৃতির ভাষা এক ছিল না। এজন্যেই ইংরেজরা সব কিছু ইংরেজিতে চালু করলেও বাংলার আধিপত্য নষ্ট হয়ে যায়নি। আমরা আমাদের ঐতিহ্যকে ধরে রাখতে পেরেছি। আমাদের এ চেতনা ধরে রাখতে পেরেছি।’

পাশ্চাত্য শিল্পের সব বিভাজনকে বাঙালির সহস্র বছরের নন্দনতত্ত্বের আলোকে অস্বীকার করে এক নবতর শিল্পরীতি প্রবর্তন করেন সেলিম আল দীন, যার নাম দেন 'দ্বৈতাদ্বৈতবাদী শিল্পতত্ত্ব'। দ্বৈতাদ্বৈতবাদী রীতিতে লেখা তার নাটকগুলোতে নিচুতলার মানুষের সামাজিক নৃতাত্ত্বিক পটে তাদের বহুস্তরিক বাস্তবতাই উঠে আসে।

পাঁচ দিনব্যাপী "সেলিম আল দীন নাট্যোৎসব ২০২২"এর প্রথমদিন বৃহস্পতিবার সন্ধ্যা সাতটায় জহির রায়হান মিলনায়তনে প্রদর্শিত হবে নাটক ‘প্রাচ্য’। এরপর ১৯ আগস্ট থেকে ২২ আগস্ট প্রদর্শিত হবে নাটক ‘কিত্তনখোলা’, ‘বনপাংশুল’, ‘কেরামতমঙ্গল’ ও ‘পুত্র’।

নাট্যাচার্য সেলিম আল দীনের জন্ম ১৮ আগস্ট ১৯৪৯ সালে, ফেনীর সোনাগাজী উপজেলায়। ১৯৯৫ সালে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে পিএইচডি ডিগ্রি লাভ করেন তিনি। পরে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের নাটক ও নাট্যতত্ত্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন।বাংলার মাটিতে, বাংলার জলহাওয়ায় বাংলার প্রাণের ভাষাতেই জন্ম নেওয়া তার নাটকগুলো বাংলা নাটকের সব উপাদানকে ছুঁয়ে যায় আধুনিকের মন নিয়ে।নাট্য-সাহিত্য অঙ্গনে অবিস্মরণীয় ভূমিকা রাখায় বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার(১৯৮৪), একুশে পদক (২০০৭), জাতীয় চলচ্চিত্র পুরস্কার (১৯৯৩,১৯৯৪) সহ বিভিন্ন পুরস্কারে তাকে ভূষিত করা হয়।

এ সম্পর্কিত আরও খবর