রেলের অব্যবস্থাপনা নিয়ে এবার শাহবাগে অবস্থান রনির

, ক্যাম্পাস

ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-08-30 08:52:19

 

বাংলাদেশ রেলওয়ের অব্যবস্থাপনা ও দুর্নীতি নিরসনে আন্দোলনরত ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের থিয়েটার অ্যান্ড পারফরম্যান্স স্টাডিজ বিভাগের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী মহিউদ্দিন রনি এবার শাহবাগে অবস্থান গ্রহণ করেছেন।

শুক্রবার (২২ জুলাই) থেকে কমলাপুরেই ৬ দফাসহ আজকে আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী কর্তৃক আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীদের হেনস্তা করার ঘটনায় তদন্ত সাপেক্ষে উপযুক্ত শাস্তির দাবিতে কর্মসূচি যথারীতি চলবে। এমন একটি ঘোষণা দিয়ে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে পোস্ট করেছেন রনি।

এর আগে গত ১৯ জুলাই লংমার্চ করে রেলওয়ে ভবনে গিয়ে মহাপরিচালক বরাবর স্মারকলিপি প্রদান করেন। সেসময় এই ছয় দফা দাবি মেনে নেওয়া নিতে ৪৮ ঘন্টার আলটিমেটাম দেন এবং প্রধানমন্ত্রীর হস্তক্ষেপ কামনা করেন। বৃহস্পতিবার সে ৪৮ ঘণ্টা পার হয়ে যাওয়ায় বিকেল চারটায় কমলাপুর রেলস্টেশনে আবার যায় মহিউদ্দিন রনি। সেসময় তার সঙ্গে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেখা যায়৷

সেখানে ঢুকতে গেলে রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনীর সঙ্গে হাতাহাতি, ধাক্কাধাক্কি হয়। এ ঘটনাকে হামলা ও নৈরাজ্য বলে অভিযোগ করেন তারা। ওই ঘটনার পর প্ল্যাটফর্মে প্রবেশের ফটকের সামনে অবস্থান নেন রনিরা। পরে রাজধানীর শাহবাগে এসে অবস্থান নেন রনি, তার সহপাঠী-বন্ধু ও অন্যান্য শিক্ষার্থীরা।

এ ঘটনায় মহিউদ্দীন রনি বলেন, ৪৮ ঘণ্টা আল্টিমেটাম দিয়েছিলাম রেলওয়ে কর্তৃপক্ষকে। তারা যা যা বলেছেন তাই মেনে নিয়েছি। নির্দিষ্ট সময় পার হওয়ার পর সাংবাদিকদের সাথে প্রেস ব্রিফিং শেষে রেলওয়েতে প্রবেশ করতে গেলে আনসার বাহিনী, পুলিশ বাহিনী ও রেলওয়ের কর্মকর্তারা মিলে আমাদেরকে বাঁধা প্রদান করে। একপর্যায়ে তারা লাঠি চার্জ করে বলেও দাবি করেন তিনি।

রনি আরো বলেন, যে বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে আমার মা-বোনদের সম্ভ্রম রক্ষা করার জন্য সেখানে রাজাকার, হানাদেররা যে রক্ত বীজ বপন করেছিলো সেই অন্যায়ের হাত আমার ভাই-বোনদের উপর উঠেছে। এতদিন শান্তিপূর্ণভাবে আন্দোলন করে আসছি। কিন্তু আমার মা-বোনদের উপর হামলার প্রতিবাদ ও তাদের শাস্তি আদায় করে ছাড়বো। একবিন্দু পরিমাণও অন্যায় দুর্নীতিকারীদের ছাড় দেয়া হবে না।

এ সময় তিনি দেশের সকল জনগণকে তার সাথে সংহতি জানানোর জন্য আহ্বান করে বলেন, এতোদিন একা লড়েছি এবার আপনাদের সহযোগিতা কামনা করছি।

এর আগে, টিকিট না দিয়ে টাকা কেটে নেওয়ায় সহজ ডটকমের বিরুদ্ধে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তরে অভিযোগ করেন রনি। পরে, অভিযোগের প্রমাণ পাওয়ায় বুধবার (২০ জুলাই) এক শুনানিতে ভোক্তা অধিদপ্তরের কার্যালয়ে সহজ ডটকমকে তলব করা হয়। সেখানে অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায় প্রতিষ্ঠানটিকে দুই লাখ টাকা জরিমানা করে জাতীয় ভোক্তা অধিকার সংরক্ষণ অধিদপ্তর। প্রতিষ্ঠানের নিয়মানুযায়ী জরিমানার ২৫ শতাংশ অর্থ পাবেন ভুক্তভোগী রনি।

এদিকে, তার বিষয়ে জানতে চেয়েছেন হাইকোর্ট। দুদক তার দাবির বিষয়ে জানে কিনা; জানলে কী ব্যবস্থা নিয়েছে তাও জানতে চান হাইকোর্ট। একই দিনে লংমার্চ করে রেলপথ অধিদপ্তরে স্মারকলিপি দেন রনি।

রনির আন্দোলন শুরুতে তার একক হলেও পরবর্তীতে এটি ছড়িয়েছে দেশের বিভিন্ন প্রান্তে। চট্টগ্রাম, জামালপুর, নোয়াখালী রেলস্টেশনে তার দাবীর সঙ্গে একাত্মতা জানিয়ে আন্দোলন করছে শিক্ষার্থীরা।

মহিউদ্দিন রনির ছয় দফা দাবি গুলো হলো:

১. টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সহজ.কম কর্তৃক যাত্রী হয়রানি অবিলম্বে বন্ধ করতে হবে। হয়রানির ঘটনায় তদন্তপূর্বক ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে।

২. যথোপযুক্ত পদক্ষেপ গ্রহণের মাধ্যমে টিকেট কালোবাজারি প্রতিরোধ করতে হবে।

৩. অনলাইনে কোটায় টিকেট ব্লক করা বা বুক করা বন্ধ করতে হবে সেই সাথে অনলাইন-অফলাইনে টিকেট ক্রয়ের ক্ষেত্রে সর্ব সাধারণের সমান সুযোগ সুবিধা নিশ্চিত করতে হবে।

৪. যাত্রী চাহিদার সাথে সংগতি রেখে ট্রেনের সংখ্যা বৃদ্ধিসহ রেলের অবকাঠামো উন্নয়নে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হবে।

৫. ট্রেনের টিকেট পরীক্ষক ও তত্ত্বাবধায়ক সহ অন্যান্য দায়িত্বশীলদের কর্মকান্ড সার্বক্ষণিক মনিটর, শক্তিশালী তথ্য সরবরাহ ব্যবস্থা গড়ে তোলার মাধ্যমে রেলসেবার মান বৃদ্ধি করতে হবে।

৬. ট্রেনে ন্যায্য দামে খাবার বিক্রি, বিনামূল্যে বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ ও স্বাস্থ্যসম্মত স্যানিটেশন ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে।

প্রসঙ্গত, গত ১৩ জুন রাজশাহী ভ্রমণের জন্য বাংলাদেশ রেলওয়ের ওয়েবসাইটে ঢাকা-রাজশাহীর টিকিট কাটার চেষ্টা করেন মহিউদ্দিন রনি। তার অভিযোগ টাকা কেটে নেওয়া হলেও তিনি তার চার টিকিটের ২ হাজার ৬৮০ টাকাও ফেরত পাননি।

তিনি আরও অভিযোগ করেন, তিনি যখন রেলওয়ের টিকিটিং পার্টনার সহজ সিনেসিস ভিনসেন জেভি এর কাছে অভিযোগ করতে যান। তখন তার সামনে কোম্পানিটির কর্মীদের বেশি দামে টিকিট বিক্রির দৃশ্য দেখতে পান।

এ সম্পর্কিত আরও খবর