ঢাবির হলে দ্বিগুণ খাবারের দাম, বাড়েনি মান

, ক্যাম্পাস

আরিফ জাওয়াদ, ঢাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ঢাকা | 2023-09-01 00:00:31

রমজান’কে পূঁজি করে বেশি মুনাফা লাভের আশায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের (ঢাবি) হলগুলোতে পূর্বের তুলনায় দ্বিগুণ খাবারের দাম বাড়ানো হলেও, বাড়ে নি খাবারের মান। সেই সঙ্গে প্যাকেজ করে খাওয়ানোর মাধ্যমে বেশি টাকা নেওয়ারও অভিযোগ রয়েছে। এদিকে খাবার দাম বৃদ্ধি পাওয়ায় বিপাকে পড়েছেন শিক্ষার্থীরা। কম টাকায় সেহরি খেতে ভোরে এক হল থেকে আরেক হলে ছুটতে হয়েছে অনেক শিক্ষার্থী’কে।

এমনই তিক্ত অভিজ্ঞতার কথা বলছিলেন মাস্টারদা’ সূর্য হলের আবাসিক শিক্ষার্থী আরিফুল ইসলাম। তিনি খোলা কাগজ’কে জানান, সেহরি খেতে হলে গুণতে হচ্ছে ৮০-১০০ টাকার মত। যেখানে সেহরির এক বেলার টাকাতে রমজান ব্যতীত অন্য সময়ে একদিনের খাবার খাওয়া হয়ে যেত। সেহরির খাবারের পেছনেই এমন ব্যয় হওয়াতে ইফতারি ও রাতের খাবার খেতে হিমশিম খেতে হচ্ছে বলে জানান তিনি।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক এক শিক্ষার্থী প্রশাসনের অবহেলা’কে দায়ী করে বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ক্যান্টিন ও দোকানগুলোতে প্যাকেজ করে খাবারের দাম দ্বিগুণ বাড়িয়ে দিয়েছে। বলা চলে জোর করে খাবার খাইয়ে টাকা নিচ্ছে। যেখানে মাংস খেতে ৪৫-৫৫ টাকা লাগত সেখানে একটা ডিম (পুরো ডিমের এক তৃতীয়াংশ), ডাল (যেটির মূল্য রমজান আসার আগে যুক্ত ছিল না) দিয়ে খেতে ৮০ টাকা লাগছে।

ওই শিক্ষার্থী প্যাকেজে খাবার বিক্রি বন্ধ করার দাবি জানিয়ে বলেন, খাবারের পৃথক পৃথক মূল্য রাখা হোক। যাঁর যেটি প্রয়োজন হবে, সে সেটি খাবে। অহেতুক ডিম, সবজি এসব দিয়ে অতিরিক্ত অর্থ নেয়ার মানে হয় না।

খোঁজ নিয়ে দেখা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়টির হাজী মুহম্মদ মুহসীন হল, মাস্টার’দা সূর্য সেন হল,কবি জসীম উদ্দিন হল, জাতির জনক বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হল, বিজয় একাত্তর হল, মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউর রহমান হল, সলিমুল্লাহ মুসলিম হলে প্রায় সব খাবারের দাম আগের থেকে প্রায় ২০ থেকে ৩০ টাকা পর্যন্ত বেড়ে গেছে। খাসির মাংস ও ভাত ৬০ টাকা থেকে বেড়ে ৯০ টাকা,গরুর মাংস ও ভাত ৫৫ টাকা থেকে ৮০ টাকা, মুরগির মাংসের ভূনা ও ভাত ৪০ টাকা থেকে বেড়ে ৭০ টাকা, মাছ ৪০ টাকা থেকে বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৬০ টাকায়।

এদিকে ক্যান্টিন ও দোকানের খাবারের মালিকদের দাবি জিনিস পত্রের দাম বেড়েছে, তাই খাবারের মূল্যও বেড়েছে। কেন প্যাকেজ করে খাবারের মূল্য বেশি রাখার চেষ্টা চালানো হচ্ছে এমন প্রশ্নের জবাবে অধিকাংশ ক্যান্টিন ও দোকান মালিকরাই বলেন, ‘অন্যরা তো এভাবেই খাওয়াচ্ছে, তাই আমরাও খাওয়াচ্ছি। তাছাড়া রোজা-রমজান মাস ; ভাল মন্দ তো খাওয়া উচিত।’

ডাকসুর সলিমুল্লাহ মুসলিম হল ছাত্র সংসদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক (জিএস) জুলিয়াস সিজার তালুকদার সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুক লিখেছেন, খাবারের নূন্যতম মানও রক্ষা করছে না ক্যান্টিন৷ রোজার মাসে অন্তত এই স্বেচ্ছাচারীতা বন্ধ থাকতে পারতো৷ আর এ বিষয়ে প্রশাসন বরাবরই নিস্পৃহ, নিষ্প্রভ, নীরব। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়কে দিয়ে কিছু আশা করলে আগে খাবার ঠিক করতে হবে৷ খাবার ভালো হলে আমরা সুস্থ থাকবো৷ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় সুস্থ থাকলেই, সুস্থ থাকবে বাংলাদেশ।

এ ব্যাপারে প্রভোস্ট স্ট্যান্ডিং কমিটির সভাপতি ও কলা অনুষদের ডিন অধ্যাপক ড. আব্দুল বাছির বার্তা২৪.কম’কে বলেন, ৫ তারিখে প্রভোস্ট কমিটির মিটিং আছে। আমরা সেখানে এই বিষয়গুলো নিয়ে আলোচনা করব।

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়টির উপাচার্য অধ্যাপক ড. মো. আখতারুজ্জামানের সঙ্গে মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করার চেষ্টা করা হলে তাঁকে পাওয়া সম্ভব হয় নি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর