ইবিতে নামমাত্র অনলাইন ক্লাস, সেশনজটের শঙ্কায় শিক্ষার্থীরা

, ক্যাম্পাস

ইবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, কুষ্টিয়া | 2023-08-29 03:56:28

করোনা পরিস্থিতিতে গত ২১ জানুয়ারি থেকে ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয়ে (ইবি) সশরীরে ক্লাস বন্ধ রয়েছে। অনলাইনে যথারীতি ক্লাস চলবে এমন ঘোষণা দেয় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ। কিন্তু খোঁজ নিয়ে জানা যায়, বেশিরভাগ বিভাগ অনলাইন ক্লাসের বাইরে রয়েছে। অল্প কয়েকটি বিভাগ তাদের ক্লাস কার্যক্রম অনলাইনে পরিচালনা করলেও তা অনিয়মিত। বেশিরভাগ বিভাগেই অনলাইনে ক্লাস পরিচালনা করতে শিক্ষকদের রয়েছে অনীহা। এতে করে সেশন জটের দুশ্চিন্তায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ফিন্যান্স এন্ড ব্যাংকিং বিভাগের ১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের এক শিক্ষার্থী বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনলাইনে ক্লাস চলবে এমন ঘোষণা দেওয়ার পরেও আমাদের এখনও পর্যন্ত অনলাইনে কোন ক্লাস হয়নি। অনলাইনে নিয়মিত ক্লাস চলমান থাকলে আমরা কিছুটা হলেও এগিয়ে থাকতে পারতাম।’

এদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বশেষ বিজ্ঞপ্তি অনুসারে শুধুমাত্র চলতি ও পূর্বঘোষিত পরীক্ষা নেওয়ার অনুমতি দেয়া হয়েছে। ফলে অনেক বিভাগের শিক্ষার্থীরা তাদের ক্লাস কার্যক্রম শেষ করার পরও পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে পারছে না।

আইন বিভাগের শিক্ষার্থী সুমন গাজী দ্রুত পরীক্ষা নেওয়ার দাবি জানিয়ে বলেন, ‘সেই দেড় বছর আতিবাহিত হচ্ছে আমরা দ্বিতীয় বর্ষ দ্বিতীয় সেমিস্টারের ক্লাস সম্পন্ন করেছি। দীর্ঘ ছুটির পর সকল দুরাশা কাটিয়ে যখন দ্বিতীয় বর্ষ প্রথম সেমিস্টার পরীক্ষা দিলাম তখন সবাই আনন্দে উচ্ছ্বাসিত ছিলাম। তবে করোনার ঊর্ধ্বমুখী সংক্রমণে পুনরায় বন্ধ হয়ে যায় ক্লাস পরীক্ষার কার্যক্রম। এখন সকল কোর্সের ক্লাস শেষ করেও যদি পরীক্ষা দিতে না পারি এবং এভাবে যদি সময় বিলম্বিত হতে থাকে তবে আমাদের স্বপ্ন, পিতা-মাতার আশা-আকাঙ্ক্ষা সব ব্যর্থতায় পর্যবসিত হবে। প্রশাসনের কাছে আকুল আবেদন স্বাস্থ্যবিধি মেনে আমাদের পরীক্ষা নেওয়ার ব্যাবস্থা করুন, আমরা চরম হতাশায় ভুগছি।’

এছাড়াও খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশ্ববিদ্যালয়ের আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের ২য় বর্ষে গত দুই বছরেও কোনো পরীক্ষা গ্রহণ করেতে পারেনি কর্তৃপক্ষ। এ নিয়ে শিক্ষার্থীদের মধ্যে রয়েছে চরম ক্ষোভ। পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে আন্দোলনও করে বিভাগটির শিক্ষার্থীরা। আল ফিকহ এন্ড লিগ্যাল স্টাডিজ বিভাগের শিক্ষার্থী শাফায়েত হোসেন জানান,‘গত দুই বছর যাবত ২য় বর্ষের ছাত্র হিসেবে নিজের পরিচয় দিচ্ছি। আরো কত বছর যে দেওয়া লাগবে সেটা অনিশ্চিত। করোনার প্রথম পর্যায়ে দীর্ঘদিন ছুটির পর পরীক্ষা নেওয়ার সুযোগ থাকলেও স্যারদের কর্তব্যহীনতা আমাদের এখনও ভুগাচ্ছে। কখন যে পরীক্ষা হবে সেটা প্রায় অনিশ্চিত। আমাদের অনেক সহপাঠী এই সেশনজটে অতিষ্ঠ হয়ে পড়াশোনা ছেড়ে সংসারের ভার মাথায় তুলে নিয়েছে। সবাই আমরা ডিপ্রেশনে ভুগছি। এখন আমাদের অনার্স শেষ করতে আরো কত বছর যে লাগে এটা নির্দিষ্ট করে বলা যাবে না। এমনটা যদি চলতে থাকে তাহলে অনেকের পক্ষেই পড়াশোনা চালিয়ে যাওয়াটা অসম্ভব হয়ে পড়বে। যে আশা আকাঙ্ক্ষা নিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিলাম তা অপূর্ণ থেকে যাবে।’

এ বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক ড. শেলিনা নাসরিন বলেন, ‘কোভিড পরিস্থিতিতে সরকারি নির্দেশনা অনুসারে আমাদের বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষার্থী বান্ধব সিদ্ধান্তই নিয়েছে। সশরীরে ক্লাস বন্ধ থাকলেও বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন অনলাইনে ক্লাস নিতে বলেছে। এমন নির্দেশনার পরও যে বিভাগগুলো অনলাইনে ক্লাস নিচ্ছে না এটা তো আসলে ঠিক হচ্ছে না। তাহলে আমরা সিদ্ধান্ত কতটুকু মানলাম। অনলাইন ক্লাস যদি তারা না নেয় তাহলে তো তারা এই সিদ্ধান্তের বিরুদ্ধাচারণ করল এবং শিক্ষার্থীদের কথা তারা ভাবলো না। অবশ্যই তাদের নির্দেশনা অনুসারে ক্লাস নেওয়া উচিত।

এ বিষয়ে শিক্ষার্থীদের প্রতি আমার পরামর্শ হলো তারা তাদের ক্লাস প্রতিনিধিদের মাধ্যমে বিভাগের সভাপতির সাথে যোগাযোগ করতে পারে। আর আমরা দেখছি যে করোনা সংক্রমণ কমতে শুরু করেছে আমরা আশাবাদী ২০ তারিখের পর সব কিছুই স্বাভাবিক হয়ে যাবে।’

শিক্ষাজীবন দীর্ঘায়িত হলেও বাড়ছে না সরকারি ও সুনির্দিষ্ট বেসরকারি চাকরিতে যোগদানের সময়সীমা। এমন অবস্থায় দুশ্চিন্তায় সময় পার করতে হচ্ছে শিক্ষার্থীদের। নিয়মিত অনলাইন ক্লাসের ব্যবস্থা নেওয়ার পাশাপাশি যথাযথ পদক্ষেপের মাধ্যমে সেশনজট নিরসনে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।

এ সম্পর্কিত আরও খবর