রাবি’র ৪ আবাসিক হলসহ ১৯ ভবনে ঝুঁকিপূর্ণ বসবাস

বিবিধ, ক্যাম্পাস

সাইফ সাইফুল্লাহ, রাবি করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-09-01 22:13:44

দীর্ঘদিন সংস্কার না করার কারণে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের (রাবি) ৪টি আবাসিক হলসহ ১৯টি ভবন বসবাসের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ১৯টি ভবনের মধ্যে অধিকাংশ ভবনের ছাদ থেকে পলেস্তারা খসে পড়ে ইট-সুরকি ও রড বেরিয়ে গেছে। এছাড়া, ফাটল ধরেছে প্রায় সবকটি ভবনে। এতে যেকোনো সময় বড় ধরণের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশ্ববিদ্যালয় সংশ্লিষ্টরা।

আবাসিক ভবনগুলোর মধ্যে নবাব আব্দুল লতিফ হলের পূর্ব পাশের ছাদ, মাদার বখশ হলের দক্ষিণ ব্লক, সৈয়দ আমীর আলী হলের পশ্চিম ব্লক, শাহ মখদুম হল, প্রশাসনিক ভবন-১, রবীন্দ্র ভবন, প্রথম বিজ্ঞান ভবন, শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের জন্য নির্ধারিত কোয়ার্টারের ৬৪, ৬৬, পূর্ব-৯, ৩৬, ৩৭, ৪১ থেকে ৪৪, পশ্চিম-৫২, ৫৩ (এফ) ও ৫৪ (এফ) ভবনগুলোকে গত বছর ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করা হয়েছে।

জানা যায়, বাংলাদেশ প্রকৌশল ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি বিশেষজ্ঞ প্রতিনিধি দল ১৯৯২ সালে হলটি পরিদর্শন করেন এবং দ্রুত সংস্কারের জন্য কর্তৃপক্ষকে অবহিত করেন। তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন, বর্তমান হল প্রশাসন ও প্রকৌশল দপ্তর জানান, তারা এ বিষয়ে অবহিত নন।

এদিকে প্রকৌশল দপ্তরকে বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক সংস্কার কাজের জন্য বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরী কমিশনের (ইউজিসি) কাছে একটি বাজেট পাঠাতে বলা হয়েছে বলে উপাচার্যের পক্ষ থেকে জানানো হলেও প্রকৌশল দপ্তর বলছে তারা এ বিষয়ে কোন নির্দেশনা পাননি।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, চারটি আবাসিক হলের ঝুঁকিপূর্ণ অংশগুলোতে প্রায় এক হাজার শিক্ষার্থী থাকেন। তিন তলা বিশিষ্ট কোয়ার্টারের বাসাগুলোতে আট থেকে ১২টি করে পরিবার থাকার ব্যবস্থা রয়েছে। কিছু বাসার অবস্থা অত্যাধিক ঝুঁকিপূর্ণ হওয়ায় সেগুলোর তৃতীয় ও দ্বিতীয় তলায় কেউ না থাকলেও নিচতলায় কয়েকটি পরিবার থাকে। এছাড়া ৪৪ নম্বর বাসার পেছনের দেয়ালের উপরের অংশে বেড়ে পাকিয়ে উঠেছে গাছ।

৪১ নম্বর বাসার তৃতীয় তলার বাসিন্দা নীরধ কুমার বলেন, ‘সামান্য ঝড়েই মনে হয় ছাদ এখন ভেঙে পড়বে। এ ছাড়া বৃষ্টি আসলেই ছাদ চুয়ে পানি পড়া তো নিত্যদিনের ঘটনা।’

প্রকৌশল দপ্তর সূত্রে জানা যায়, ভবনগুলোর ঝুঁকির প্রধান কারণ হলো উপরের ছাদ। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়া, নিয়মিত পরিষ্কার না করায় ছাদগুলো ঝুঁকিপূর্ণ হয়ে পড়েছে। ছাদ ভেঙে নতুন ছাদ করা প্রয়োজন।

দ্রুত সংস্কার করা না গেলে যেকোনো সময় ছোট-খাটো ভূমিকম্পেই প্রায় দুইশো কোটি টাকা ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে। সম্পূর্ণ কাজের জন্য কমপক্ষে ২৫ কোটি টাকা প্রয়োজন হলেও কিছুদিন আগে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাত্র চার কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে তাদের। টাকার পরিমাণ বাজেটের তুলনায় সামান্য হওয়ায় কাজ শুরু করা সম্ভব হয়নি।

নাম প্রকাশ না করার শর্তে বিশ্ববিদ্যালয়ের এক শিক্ষক বলেন, ‘আবাসিক ভবনগুলোর অধিকাংশই ঝুঁকিপূর্ণ। কয়েকদিন আগে আমার বাসার ভেতর ছাদের একটি অংশ থেকে প্লাস্টার খসে পড়েছে। সৌভাগ্যবশত কেউ আহত হয়নি। আমরা ঝুঁকি নিয়ে বাস করছি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের পরিকল্পনা ও উন্নয়ন দপ্তরের ভারপ্রাপ্ত উপ-পরিচালক মো. মশিউর রহমান বলেন, প্রায় এক বছর আগে ভবনগুলো সংস্কারের জন্য টাকা চেয়ে ইউজিসির কাছে একটি প্রস্তাবনা পাঠিয়েছিলাম। কিন্তু ইউজিসি তা গ্রহণ করেনি। পরে এ বিষয়ে আমাদেরকে আর কোন কিছু জানানোও হয়নি।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের সদ্য সাবেক প্রধান প্রকৌশলী সিরাজুম মুনির বলেন, ‘অর্থনৈতিক সংকটের ফলে ভবনগুলো সংস্কারে কাজ করতে পারছি না।’

এ বিষয়ে জানতে চাইলে উপাচার্য অধ্যাপক আব্দুস সোবহান বার্তা২৪.কমকে বলেন, ‘সার্বিক সংস্কার কাজের জন্য প্রকৌশল দপ্তরকে একটি বাজেট তৈরি করে ইউজিসিতে পাঠানোর নির্দেশ দিয়েছি। যতো শীঘ্রই সম্ভব কাজ শুরু হবে।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর