দেড়শো লেখাকে গুলি করে মেরে গ্যাব্রিয়েল সুমনের একটি হলুদ বই

সাক্ষাৎকার, শিল্প-সাহিত্য

রোজেন হাসান, অ্যাসিস্ট্যান্ট ফিচার এডিটর | 2023-09-01 23:33:37

অমর একুশে গ্রন্থমেলা ২০২০-এ চৈতন্য প্রকাশ করেছে গ্যাব্রিয়েল সুমনের তৃতীয় কবিতার বই লাস্ট নাইট অ্যাট প্যাগোডা। মেলায় সোহরাওয়ার্দী উদ্যান অংশে চৈতন্যের ২৫০-২৫১ নং স্টলে বইটি পাওয়া যাচ্ছে।

গ্যাব্রিয়েল সুমনের প্রথম কবিতার বই হাওয়া কাঠের ঘোড়া ২০১৩ সালে প্রকাশিত হয়। এরপর ২০১৮ সালে বেরিয়েছিল দ্বিতীয় কবিতার বই ফ্লপ অডিয়েন্স। নতুন প্রকাশিত তাঁর তৃতীয় বইটি, লেখালেখি ও নিজস্ব পরীক্ষা নিরীক্ষা নিয়ে সম্প্রতি বার্তা২৪.কমের মুখোমুখি হন গ্যাব্রিয়েল সুমন


বার্তা২৪: লাস্ট নাইট অ্যাট প্যাগোডা বইটি নিয়ে জানতে চাইব।
গ্যাব্রিয়েল সুমন: ‘লাস্ট নাইট অ্যাট প্যাগোডা’র লেখাগুলি তো বটেই আমার সব লেখাই আসলে আমার মনোজগতের ইনসাইট, অন্তর দৃষ্টি কিংবা বলতে পারেন আমার মনোজগতের প্রেস রিলিজ, যেটা প্রকাশিত হয় আমার নিজের ভাষায়। এখন বলতে পারেন এই ভাষা কে তৈরি করল। এই ভাষা তৈরি করেছে আমার কবিতাযাপন, আমি যে জীবনটি যাপন করছি, পৃথিবীর সাথে, প্রকৃতির সাথে আমার যে রিলেশন; সেখান থেকে এসেছে এই ভাষা, এইসব কথা, চিন্তা ইত্যাদি।

বার্তা২৪: কবিতাগুলো নিয়ে নিজের ভাষা নিয়ে কোথায় যেতে চেয়েছেন এ যাত্রায়?
গ্যাব্রিয়েল সুমন: এইখানে আমি কিংবা আমার ভাষা আসলে শূন্য ও শূন্যতার দিকে যেতে চেয়েছে। “১টা ডিমের গায়ে বিষপিপড়ের ছবি একে দেখতে চেয়েছি বিষাদ ঠিক কোন পথে হেটে হেটে আনন্দের দিকে যায়”—ভূমিকায় আমি যেমন বলতে চেয়েছি। এ এক পরিভ্রমণ বলতে পারেন আমার মনোজগতের সাথে আমার নিজের। এইখানে আসলে একটা পুরো সিনেমা আছে, মনের দিক দিয়ে স্থির ও নিবিষ্ট পাঠকের কাছে এই সিনেমা ধীরে ধীরে দৃশ্যমান হবে। প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় পাঠে সেটি হয়তো ঘটবে না বা পুরোপুরি প্রকাশিত হবে না, এটা নিশ্চিত করে বলা যায়।

বার্তা২৪: আপনার কবিতার পাঠক কারা?
গ্যাব্রিয়েল সুমন: আমার দুয়েকজন পাঠক আছেন বলে আমার মনে হয়েছে বিভিন্ন সময়ে, যাদেরকে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি না। এই সময়ে যারা কবিতা লিখতে এসেছেন, তারা এদের বাইরে। বা, আমার ব্যক্তিগতভাবে পরিচিত মানুষজন, বন্ধু বা প্রেমিকা বা পরিবারের মানুষজন নন। তাদের জন্যই আসলে আমার এই বইটি।

বার্তা২৪: আপনার আগের বই দুটির চেয়ে এটিকে কী কী কারণে আলাদা বলবেন?
গ্যাব্রিয়েল সুমন: আমি ব্যক্তিগতভাবে বিশ্বাস করি আমার কোনো প্রতিদ্বন্দ্বি নেই। আমি একক ও অদ্বিতীয়। প্রতিবার বই প্রকাশের মাধ্যমে আমি নিজেকে টপকাবার একটা খেলা খেলি নিজের সাথে। কতটা পারছি সেই বিবেচনায় আমি যাই না কখনো। খেলাটা যে খেলি, সেই আনন্দটা গুনে গুনে পুরোটা উপভোগ করি। আমার প্রথম বইয়ের যে ভাষা সেখান থেকে আমি কিছুটা সচেতনভাবে এবং কিছুটা প্রকৃতিগতভাবে সরে এসেছি। আমার নিজের বানানো অনেক শব্দ পাঠক পাবেন প্রথম বইয়ে। সেই জায়গা থেকে সরে এসেছি সচেতনভাবে। আবার, কবিতা থেকে মেদ পুরোপুরি ঝরাতে চেয়েছি। মূল ভাষাটা ঠিকই আছে, শুধু মেলোডি থেকে রকের দিকে চলে গিয়েছে। আমার জীবনে বিগত অর্ধযুগে যে ব্যাপারগুলি যোগ হয়েছে, সেইগুলির সাথেও পাঠক প্রথমবারের মতো পরিচিত হবেন। একটা সময়ে এসে আমার মনে হয়েছে, আমার জীবনে প্রচুর ক্লাইমেক্স, রহস্য আর নাটকীয়তা। তার একটা রেশ এখানে একইসাথে প্রকাশিত ও গুপ্ত। গুপ্ত এইজন্য বলছি যে, এটি সময়ের সাথে সাথে দৃশ্যমান হবে।

বার্তা২৪: কবিতায় আপনি কি পরীক্ষা-নিরীক্ষায় বিশ্বাস করেন?
গ্যাব্রিয়েল সুমন: ২০১৩ সালে আমার প্রথম কবিতাপুস্তক ‘হাওয়াকাঠের ঘোড়া’ প্রকাশিত হবার পরপরই আমি একসাথে একাধিক কবিতাসংক্রান্ত ভাবনার রাস্তা তৈরি করি। এটা একধরনের এক্সপেরিমেন্ট আপনি বলতে পারেন, আবার একটা পথের সন্ধান পেয়েছি এটাও ভাবতে পারেন। তখন একাধিক চিন্তাসূত্র ধরে আমি লিখতে থাকি। জীবনের আরো যে ব্যাপারগুলি আছে সেখান থেকে আমি নিজেকে বিচ্ছিন্ন করে শুধু কবিতার মধ্যেই আনন্দলাভের একটা স্টেজে চলে যাই। যেমন ধরুন একটা এজেন্সিতে কাজ করতাম, শুধুই কবিতা লিখব বলে কাজটা ছেড়ে দিয়ে সাভারের দিকে চলে গেলাম। সেখান থেকে শুরু করে এই ডিসেম্বর পর্যন্ত একটা বিশেষ ফোল্ডারে এই লেখাগুলি জমা হয়। সেখান থেকে গুটিকয়েক লেখা রেখে বাকি দেড়শো লেখা গুলি করে মেরে ফেলার পর এই হলুদ বই।

বার্তা২৪: বইটির প্রচ্ছদ নিজেই করেছেন।
গ্যাব্রিয়েল সুমন: প্রচ্ছদ হচ্ছে বইয়ের প্রবেশপথ, মানে আমার মনোজগতে পাঠক ঢুকছেন তার সদর দরজা। এইখানে পাঠককে আমিও ভেংচি কাটতে চাইনি। একরাতে ছবি আঁকছিলাম, এও এক্সপেরিমেন্ট। কাছাকাছি টোনের দুটি ছবি দেখে মনে হলো এখান থেকে প্রচ্ছদ হতে পারে। আমার আর্টিস্ট বন্ধুদের সাথে কথা বললাম, তারা বলল মিলেছে জিনিসটা। এভাবে প্রচ্ছদ হয়ে গেল। আমার প্রিয় এক বড়ভাই নির্ঝর নৈঃশব্দ্য নামলিপি লিখে দিলেন এভাবেই হয়ে গেল প্রচ্ছদ।

বার্তা২৪: কবিতা লেখার পাশাপাশি তাহলে ছবিও আঁকেন, ছবি এঁকে কেমন আনন্দ পান?
গ্যাব্রিয়েল সুমন: আমার জীবনে কিছু চর্চা আছে। এখন তো আর গোপন করে লাভ নেই। বলে ফেলি, ওয়াটার কালার করতে আমার ভালো লাগে। আমার মায়ের কাছে আমার ছবি আঁকা শেখার শুরু। চার, পাঁচ, ছয় এই বছরের বয়সগুলিতে। আমার আব্বা আমাকে দুই টাকা দিতেন হাত খরচের জন্য, সেখান থেকে এক টাকা জমিয়ে এক তা পাকশী কাগজ কিনে ভাঁজ করে ছোট্ট একটা খাতা বানিয়ে দিতেন আমার মা। আমি সেখানে ছবি আঁকতাম। আলাদাভাবে বিভিন্ন সময়ে ছবি এঁকেছি। কিন্তু তীব্র আনন্দলাভের ঘটনা ঘটে নাই। জাস্ট পছন্দ করতাম। ২০১৭ তে কিছুকাল সারাদিন সারারাত ছবি এঁকেছি। তখন থেকে জলরঙে আঁকার ব্যাপারটা একটা তীব্র ভালোলাগার দিকে গড়াতে থাকে। কিন্তু এখানে পূর্বসূত্র ধরেই বলি, ছবি আঁকার আনন্দ থাকলেও— প্রচ্ছদ করব কখনোই ভাবিনি, বলতে পারেন, বাধ্য হয়েছি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর