বিদায় তোমায় তিষ্ঠ ক্ষণকাল!

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

রাশিক আল ইয়ামীন মাহিব | 2023-09-01 01:01:34

*

এইবার ছিঁড়ে ফেলব জীবন
এইবারে গ্রহণ করব কালঘুম পরম আনন্দে

তোমারে দেখতে দেখতে ক্লান্ত আমি
তবু তোমারে দেখতে কাতর!
অথচ আমারেই দেখলে না তুমি কোনোদিন
শুধু শরীরের ওই মাংসটুকুই না
আমি তো চেয়েছিলাম ওই শরীরের চালিকাকেও
আমি এক ভ্রমর, প্রিয়
ফুলকে খাই না, ফুলের মধুকে খাই
ছুড়ে ফেলব এই মাংসমোহ
অন্য এক অথবা একাধিক মাংসপিণ্ডের দিকে
কিন্তু তোমার প্রতি মোহ আমার কাটবে না চির-অন্ধকারেও

**

আমি মারা গেলে
আমায় কবর দিও না প্লিজ!
কারণ মাই ডিয়ার
শুনেছি কবরের ভেতর অনেক অন্ধকার, ভেরি ভেরি ডার্ক
আমি ভয় পাব (আর আমি ভয় পেতে ভীষণ অপছন্দ করি)
তাই যদি জেগে উঠি ভয় পেয়ে
এমন সাধের মরণ বৃথা হয়ে যাবে
আর আমার মৃত্যু বৃথা হোক আমি চাই না, কারণ আমি
‘জীবন হোক যথা তথা মৃত্যু হোক ভালো’য় বিশ্বাসী

তারচেয়ে বরং আমার দেহ ভস্ম করে
অবশিষ্টাংশ ফেলে দিও বঙ্গোপসাগরে
অথবা ফেলে দিতে পারো পদ্মায়, মেঘনায়
নয়তো কালো ব্রহ্মপুত্রে
অথবা অন্য কোনো নদী যদি থাকে
আরো সুন্দর ও সুন্দরী, দৈর্ঘ্যে ও প্রস্থে
যে নদী নয় খরস্রোতা কিন্তু অনায়াসে
ভেঙে ফেলতে পারে এপার ওপার, আর তার
উপর ঠায় দাঁড়িয়ে থাকে যেসব ঘরবাড়ি, আমায়
মিশিয়ে দিও সেই নদীতেই
তবে অবশ্যই শীতকালে নয়! উফ্ শীতে কী ঠান্ডা রে বাবা!
সেই ঠান্ডায় মরেও শান্তি পাব না আমি
আর মরেও যদি শান্তি না পাই লাভ কী মরে?
এমনকি বর্ষাকালেও নয়, কারণ শুনেছি এই কালে
সুরমারও নাকি তেজ বেড়ে যায় বৃষ্টির ছোঁয়া পেলে
তাই বলি সিজনটা সুবিধের হলেই বরং আমায় মিশিয়ো নদীতে
তার আগে নয়, কারণ আমি নদীতে ভাসতে চাই না, ডুবতে চাই

আর সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ যে অঙ্গের স্থান গুরুদণ্ডের পর:
আমার চক্ষুদ্বয় দান করে দিও কোনো জন্মান্ধরে
তবে খেয়াল রেখো জন্মান্ধ যেন থাকে জীবিত আর আমি মৃত, নই নিহত
তবেই, কারণ নিহতের চোখ আহত পরিধান করুক আমি চাই না

আর কথা বাড়াব না প্রিয়
পাঠক ও পাঠিকাগণ, ভাই ও প্রেমিকাবৃন্দ, বন্ধু ও যৌনসঙ্গিনী
আর মাত্র দুটি কথা বলে, এই উইল কাব্য শেষ করে আমি যেতে চাই চলে
প্রকৃতির নির্মম ভুলে, আমার ভাগ্য আমায় আপনাদের হাতে দিয়েছিল তুলে
তবু মৃত্যুর পর যেন আমি ধুলায় না মিশি
সেই খেয়াল আপনারা রাখবেন এই আশা ব্যক্ত করছি পাঠক সমীপে
আর, আমার, শ্রদ্ধেয় ভাবি ও ভাই
একটি ছোট্ট আবদার, আমার চল্লিশতম জন্মদিনে
পৃথিবীর এক নম্বর আফিম উপহার চাই।

***

সময়ের পাখি দেয় বসন্ত আভাস, বুক চিরে কেটে যাবে বারুদ উদ্ভাস
আর চুপিচুপি চারপাশে তাকিয়ে
আমি হয়ে যাব চিরকাল।
তবু নির্লজ্জের মতো আবার জোছনা
ঠাঁই চাবে তোমার সমস্ত আকাশ, আর
কালো মেঘগুলো লুকিয়ে থেকে, দেবে ডাক
হবে কালো কাক, বলে জোছনা তুমি ক্ষণস্থায়ী
আমি হব চিরকাল
আর রোদে পোড়া রেললাইনে যারা দাঁড়িয়ে থাকে
শুধু তারাই জানে সময়ের মূল্য
অপেক্ষার অবকাশ
আমার কোনো মাথাব্যথা নেই, কারণ রোদে না পুড়লেও
আমি জানি, আমি হব চিরকাল
তাই নদীর স্রোতের মতো যদি কখনো আবার
মাটি ফুঁড়ে উঠে আসে কালো সূর্য, বলে দিও
আমি নেই
নেই আগের মতো
আমি নেই আর দলীয় মুখোশ
কিংবা কোনো চিত্র প্রদর্শনীর গ্যালারিতে
বলে দিও, আমি হয়ে গেছি চিরকাল।

আমি হয়ে গেছি চিরকাল
এই চিরকাল কেটে সেই কাল কখনো আসবে না যখন
আমি তোমাদের মতো মানুষ হয়ে টুকিটাকি স্বপ্ন কিংবা দৈনন্দিন
কাজ করার হিসাবে ডুবে থেকে অমানুষ হয়ে করব মৃত্যুবরণ
এবং হাট বাজার, অট্টালিকা কিংবা নির্বাচনী পোস্টারে ছেপে যাওয়া
তিন দেয়ালের ঘরে ঢুকে নামাজ আদায় আর যুবতী ধর্ষণ করে
যাবতীয় সত্যের গায়ে মিথ্যার প্রলেপ লেপে
কোনো পার্থিব অগ্নি পরীক্ষার হলে হাজিরা দিয়ে দিয়ে
ক্লান্ত হওয়ার মতো দুঃসাহসিক কাজের চাকরির বিজ্ঞাপন
আমার দেয়ালে সাঁটা থাকবে
আমি নেই, আমি থাকব না, এই ক্ষণকালের যৌনপল্লীতে।

তাই, গোলাপ জবা দিবে দিক বারুদ আভাস
পড়ে থাক শাপলা নীল হয়ে তোমাদের জাতীয় পরিচয়পত্র আর
প্রথম শ্রেণির বাংলা বইএর নিচে, তোমাদের অগোচরে
কালো জোছনা আর সাদা কাক মিলে গাক
অন্তর্বাসের গান, আমার আর কোনোই প্রয়োজন নেই
তাই সবকিছু সৃষ্টি করে ধ্বংস হওয়ার উপায় বাতলিয়ে
আমি হয়ে গেছি চিরকাল, বিদায় তোমায়
তিষ্ঠ ক্ষণকাল!

****

শোনো আরতি, পথে বের হও
চলো দূরে যাই, খুব সুদূরে
যেখানে, কোনো কিছু নেই
আছে সূর্যের ভেজা কংকাল
চলো চলো যাই, সেই পাহাড়ে।
কি যে দিনকাল! শুধু বৃষ্টি
পথঘাট সব, ভিজে চুপসে
পাতা ফুল ফল ভিজে একাকার
চোখে জল নেই, তবু পাখিদের
আর তুমি আমি, সেই শুকনোই!
অনেক হেঁটেছি, চলো বসে যাই
খুব ক্লান্ত, পা চলে না
গলা চলবে, চলো গান গাই
কিছু শব্দ হবে কবিতা
আর তাল-লয়-সুর মিশিয়ে
চলো আজীবন, শুধু গেয়ে যাই।
খিদে পেয়েছে? নাও চানাচুর
আর পিপাসা? খাও রঙ চা
সাথে সিগারেট, না হলে চলে কি!
আহা শান্তি! কি যে শান্তি!
কেউই থাকে না, সবাই অস্থির
যেখানেই যাই শুধু জটলা
শুধু তুমি আমি, এইখানেতেই
একমনে বসে দেখি তামাশা।
আকাশটা কত ফ্যাকাশে
তবু পাখিরা তাতে উড়ে যায়
সাদা মেঘরাও চায় ছুটতে
তাই আরতি, আমি বলে যাই
করো হাহাকার, মাতো কান্নায়।

*****

দিক-কূল চিনে রওনা হয়েছি মহানির্বাণ খোঁজে
জলভরা মাটি নৌকার নিচে ঢেউ নেই কোনো ভাঁজে
মাটি সরে যায় জল পড়ে যায় নৌকা তো ডুবে নাকো
লাফ দিতে গেলে সামনে আসে তিতুমীর, নিয়ে সাঁকো।
ছায়া নিভে যায় কার বাড়িতে, বেড়া চার সীমানায়
আলেয়ার কাঁধ কার কথা ভেবে ভারে নীচু হয়ে যায়
বয়স বেড়েছে, যদিও বাড়েনি যতটুকু প্রয়োজন
কার হতে যেয়ে কার হয়ে যায়, কাকে দিয়ে ফেলে মন

এ সম্পর্কিত আরও খবর