আঁধারে ঝরে আছে পারস্য গোলাপ

, শিল্প-সাহিত্য

পাপিয়া জেরীন | 2023-08-24 22:27:24

যৌগপদ্য

সুগন্ধি কাঠ ভিজে আছে শ্মশানের মাঠে
কাটাখালি থেকে শ্যামতলিবাজার—
কবন্ধ ধোঁয়াশায় ঘেমে আছে মড়ার অদগ্ধ চিবুক
রসায়নের যৌগপদ্যে
আজ পুড়বে না কেউ;

সুগন্ধি কাঠ ভিজে আছে,
হিম হোম—
মেহগনি বনে জেগে আছে স্বপ্নোত্থিত করাতকল
কবোষ্ণ চিতায় প্রোদ্যত নীল
উদগ্র চন্দন!

রসায়নের যৌগপদ্যে আজ পুড়বে না কেউ,
বর্ষার জলে জ্বলে যাবে...


ঘোর

এইখানে আমি আর আমার ভ্রমের সংসার
পৃথিবীর সবকিছু এসে
আমারে দিয়ে গেছে ভোগ,
শিশুর কোমল হাত—
তার ঠোঁটের নরম চাপে
গড়ায়ে পড়েছে বোঁটার চিকন দুধ;

আরো আছে ঘোরের ভিতর
নীল হয়ে থাকা শীতে
জামের মতো কালো চোখ নিয়ে ধূসর শিশু,
তীব্র কালো ঠোঁটে ছোঁয়ায় স্তনের বাঁট—
গাল বেয়ে নামে শ্বেতশুভ্র নদী;
সে নদীতে বসে দেখি দারকিনা মাছ
মাছরাঙা এসে ছোঁ মারে তারে,
তুমিও কি একদিন প্রবলবেগে...
নিয়ে যাবে আমারে!


শোক

সারি সারি সুপারি পাতার ছায়ায়
তোমাকে পাব ভেবেছি—
বিলের শামুকে রেখে আসা রক্তের দাগে

তোমার পৌরুষে তাক লেগে যাওয়া
হরবোলা
ফেরিওয়ালা
কিশোরের চোখ

সারি সারি পাতায়
জলে জঙ্গলে
তোমার চুইয়ে পড়া রোমে
বন-তিতির
আহত শুওরের শ্রবণাতীত আর্তরবে
শুনতে পাব তোমাকে

অনিদ্র সন্ধ্যায়
তোমার বুকে ঢলে পড়বে
শতবর্ষী নারীর শোক
সারি সারি সুপারির বন

তোমার পিঠে জেগে থাকা অনীশ্বর তারার মতন নীল ঘামাচি
সেইখানে আমার নখ,
চেপে ধরব অস্খলনযোগ্য দুধগঙ্গা!

জলে জঙ্গলে
তোমার চুইয়ে পড়া রোমে
বন-তিতির
আহত শুওরের আর্তরবে
ভেবেছি শুনতে পাব তোমাকে

তোমার পিঠে জেগে থাকা অনীশ্বর তারার মতন নীল ঘামাচি—সেইখানে আমার নখ!

নাহ, আর হলো না...


অসঙ্গত

মৃত্যু
পাশে আসে
পিঠে মৃদু শ্বাস
পথে পড়ে থাকে
সবুজ নোটের মতো
তোমার মতো প্রেম নিয়ে
আসে
হাসে
আমি দেখি
মৃত্যু আসে
রেখে যায় কাছে
যা ছিল সব
অথবা দূরে নেয়
যেন অগ্রহায়ণ
যেন ধান চলে গেছে বাড়ি বাড়ি
মাটিতে গেঁথে আছে
তবু নেই কিছু
যেমন অসঙ্গত বিকেল
তুমি অপেক্ষায়
শরীর আছে
প্রেমহীন
তবু অপেক্ষায়
আসি বারবার
চলে যাব বলে
কিংবা আসিনি কোনোদিন
তবু আসার পথে
ঝরে আছো তুমি
ম্লান
পাতার নীলে
মৃত্যু আসে
প্রসবিতার কাছে
জন্মাতে একবার
বুকে রাখে মুখ
ক্ষুধার কথা বলে
মৃত্যুর মতো তুমি আসো
তোমার মতো আসে
মৃত্যুর ডাক
সব আছে পাশে
তবু মোহনিয়া ডাক
তুলে নিয়ে যায়
শেষে
ঝুলায়ে রাখে
শোয়ায়ে রাখে
বসায়ে রাখে
নিসাড়!


এই জ্বর ঘোর লাগা রাতে

এই জ্বর ঘোর লাগা রাতে
তোমার শরীরে গজাই
কয়েকশো একর কাগজিলেবু বন,
দুধে ভেজা রুটির মতো
শুষে নিতে থাকি অধরান্ত জিভ
আঙুল ডুবায়ে রাখি অতলান্ত গহ্বরে
অপাঙ্গ-জল, জলের আঘাত
রোমে রোমে মন্থিত শ্বেত পারিজাত!

ফের অতিক্রান্ত কালোয়
আবেস্তার পাতায় পাতায় খুঁজি—
শিফা-ই-গুল;

এই জ্বর ঘোর লাগা রাতে
কেন আহরিমান খুলে রাখে বুক!
আমি সত্য-শিব ভুলে খুলে দিই গোপন দেরাজ

এই ঘোর লাগা রাতে কুয়াশার হোমকুণ্ড ভাঙে
নামে ধুন্ধুকার পীড়ন,
জন্মান্ধ চোখ নিয়ে দেখি—
আঁধারে ঝরে আছে পারস্য গোলাপ!

এ সম্পর্কিত আরও খবর