সেই বাড়িটা

গল্প, শিল্প-সাহিত্য

তানিয়া চক্রবর্তী | 2023-08-31 05:11:33

নেহা আর অনামিকা দুজনেই প্রাণের বন্ধু। ছোটবেলা থেকে একসঙ্গে বড় হওয়া। এখন ওরা একটা বাড়িতে পেয়িংগেস্ট হয়ে থাকে। যে বাড়িটায় থাকে সেখানে নীচের তলায় বাড়ির মালিক থাকেন। ওপরতলায় ওরা দুই বন্ধু। নেহা বিয়ে করবে না বলে বাড়ি থেকে পালিয়ে এসেছে আর অনামিকা মডেলিং করবে বলে পালিয়ে এসেছে।

দুজনের বয়সই আঠারো থেকে কুড়ির মধ্যে। ওরা দুজনে একটা কলসেন্টারে পার্টটাইম কাজ করছে। দুজনের ভালোই কাটছে কলকাতা শহরে। ইদানিং নেহার একটা সমস্যা হচ্ছে নীচে মাঝবয়সি যে ভদ্রলোক থাকেন তার হাবভাব নেহার ভাল লাগছে না। কথাটা নেহা অনামিকাকে জানিয়েছে। অনামিকা বলেছে “আমার তো সেরকম মনে হয় না। যদি হয়েও থাকে পাত্তা দিস না”। লোকটি ছাদে যাওয়ার নাম করে মাঝে মাঝে ওপরতলার বাথরুমের ওপরের ছোট্ট জানলাটায় উঁকি দেয়। নেহা সেকথা অবশ্য ঘুণাক্ষরেও টের পায় না। এর মাঝে একদিন নেহা তাড়াতাড়ি বাড়ি ফেরে। আর অনামিকা নেহাকে জানায় রাতে নাইট ডিউটি থাকায় সে রাতে একটু দেরীতে ফিরবে। নীচে যে কাজের মহিলা রান্না করে, সে রান্না করেই চলে যায়। রাতে ওদের নীচে গিয়ে খাবার নিয়ে আসতে হয়। অনামিকা নেই বলে নেহা আর নীচে নামে না কারণ লোকটার মুখোমুখি হতে নেহার ইচ্ছে করে না। অনামিকার জন্য অপেক্ষা করে। হঠাৎ দরজায় আওয়াজ হয়। নেহা খুলে দেখে বাড়িওয়ালা ভদ্রলোক হাতে ট্রে করে খাবার নিয়ে  এসেছে। নেহার ভাল লাগে না তবু ভদ্রতা করে ভেতরে আসতে বলে।


নেহা খাবার নিয়ে রান্নাঘরে গেলে লোকটা আচমকা নেহাকে পেছন থেকে অশ্লীলভাবে জড়িয়ে ধরে । ইতিমধ্যে ধস্তাধস্তি শুরু হলে অনামিকা এসে ঢোকে, এই দৃশ্য দেখে হতচকিত অনামিকা হাতের ছাতা দিয়ে লোকটার মাথায় মারে; মদ্যপ উত্তেজিত লোকটি অনামিকাকে ঠেলে ফেলে নেহাকে আবার আক্রমণ করে। এবার অনামিকা বড় একটা রড নিয়ে এসে লোকটকা মারতেই লোকটা রক্তে ভিজে মাটিতে পড়ে যায়। নেহা অনামিকা কেউ এই পরিস্থিতি তৈরী করতে চায় নি। লোকটার শ্বাস বন্ধ, হার্টবিটও শোনা যায়না। ওরা বুঝতে পারে অজান্তে একটা খুন হয়ে গেছে। নেহা বলে ওঠে এখন পালাতেই হবে, নেহা আর অনামিকা ওদের দরকারী জিনিস গুছিয়ে ব্যাগ নিয়ে বেরিয়ে পড়ে।


পথে ওরা একটা ট্যাক্সি ডাকে । কিন্তু কোথায় যাবে ঠিক নেই । তাই সামনের একটা স্টপেজ বলে উঠে পড়ে। ড্রাইভার লোকটা বলে “দিদিমণিরা একটু বসুন বাথরুম করে আসছি।

অনামিকা নেহা কে বলে “তুই গাড়ি চালাতে জানিস তো?  

নেহা বলে ”হ্যাঁ”।

অনামিকা বলে “ তবে ড্রাইভারের দরকার নেই আর, গাড়ি ছোটা, কোথাও গিয়ে এই গাড়ি ফেলে অন্য পথ খুঁজে নেব”


নেহা উঠে স্টিয়ারিং –হাত রাখে, চাবি ঘোরায় ,ট্যাক্সি ছুটতে থাকে। ভয়ে , আতঙ্কে তারা কোথায় এসেছে এই রাতের অন্ধকারে তারা জানে না। হঠাৎ একটা আওয়াজ করে একটা শুনশান রাস্তায় গাড়ি দাঁড়িয়ে যায়। সম্ভবত গাড়ির তেল শেষ। ওরা দুজনে গাড়ি থেকে নামে।দূরদূরান্তে কোনো বাড়ি নেই রাত দেড়টা থেকে দুটো হবে ,ঘড়িটা দেখে নেহা। হঠাৎ খেয়াল করে সামনেই একটা একতলা মতো ভাঙাচোরা বাড়ি আছে। ওরা গাড়ি থেকে নামে , ব্যাগ হাতে নিয়ে মোবাইল জ্বালাতে জ্বালাতে বাড়িটার ভেতরে ঢোকে।

(চলবে... প্রতি রোববার)

এ সম্পর্কিত আরও খবর