মুক্তিযুদ্ধের জনযোদ্ধা

, শিল্প-সাহিত্য

কনক জ্যোতি, কন্ট্রিবিউটিং করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম | 2023-08-31 11:12:34

 

লে. কর্নেল আবদুর রউফ, বীরবিক্রম পিএসসি(অব.) জীবনের পরন্ত বেলায় মুক্তিযুদ্ধ নিয়ে লেখার চ্যালেঞ্জিং কাজটি সম্পন্ন করেছেন। একাত্তর সালে সংগঠিত যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী তাঁর অধীনস্থ জনযোদ্ধা এবং যুদ্ধের সংঙ্গে সংশ্লিষ্ট ব্যাক্তিদের নির্ভুল তথ্যসমূহ সংগ্রহ করতে ১৫ বৎসরের অধিক সময় ব্যয় করেন তিনি, যা ছিল আরেকটি যুদ্ধ।

লেখকের মুক্তিযুদ্ধে যোগদানের ঘটনাটি রোমাঞ্চকর।  তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রাবস্থায় মুক্তিযুদ্ধে যোগদান করেন। ৯ অক্টোবর সেনাবাহিনীতে সেকেন্ড লেফটেন্যান্ট পদে কমিশন লাভ করেন এবং ৫ নম্বর সেক্টরে একটি জনযোদ্ধা কোম্পনীর কমান্ডার নিযুক্ত হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন। তাঁর কোম্পানিটির নাম ছিল পাইওনিয়ার কোম্পানি।

লে. কর্নেল আবদুর রউফ, বীরবিক্রম পিএসসি(অব.)-এর নেতৃত্বে পাইওনিয়ার কোম্পানি (যা শুধুমাত্র ছাত্র-শ্রমিক-কৃষক দ্বারা গঠিত) ৩টি পরিকল্পিত গেরিলাযুদ্ধে অংশ নেয় এবং বিজয় লাভ করে। মূলত: উক্ত ৩টি যুদ্ধে অংশগ্রহণকারী জনযোদ্ধাদের বীরত্ব গাথা এবং সংশ্লিষ্ট সকলের অবদান নিয়েই বইটি রচিত।

অভিযান ৩টি হলো:

(ক) ১২ নভেম্বর ৭১: সিলেট-সুনামগঞ্জ রাস্তার উপর অবস্থিত ডাবরফেরী ও জাউয়া বাজার  সড়কসেতু দখল ও ধ্বংস করা।

(খ) ২৯ নভেম্বর ৭১: সিলেট-ছাতক রাস্তার উপর অবস্থিত সড়ক ও রেলসেতু এক সঙ্গে দখলও ধ্বংস করা।

(গ) ৩ ডিসেম্ব ৭১: বুরকী গ্রামে যুদ্ধ। এ যুদ্ধে শতাধিক পাকসৈন্য হতাহত হয়।

সুনামগঞ্জ থেকে প্রকাশিত ৪টি বইয়ে সংক্ষিপ্তাকারে উক্ত ৩টি যুদ্ধের ঘটনা উল্লেখ আছে। বই ৪টি হলো: (ক) মুক্তিযুদ্ধের সুনামগঞ্জ (খ) রক্তাক্ত ৭১-সুনামগঞ্জ (গ) একাত্তরে সুনামগঞ্জ (ঘ) শ্রাবণ রাজার দেশে।

বলার অপেক্ষা রাখে না যে, মুক্তিযুদ্ধ ছিল এক বিশাল জনযুদ্ধ, যাতে অপুর্ব সমন্বয় ঘটেছিলো মুক্তি পাগল বাঙালি জাতি এবং বিভিন্ন শ্রেণি ও পেশা থেকে আসা গরীব, নিম্নবিত্ত ও নিম্ন মধ্যবিত্ত পরিবারের স্বেচ্ছাব্রতী জনযোদ্ধাদের। তাঁদের বীরত্বগাথা ও সংশ্লিষ্ট সকলের অবদানের কথা গৌরবময় ঘটনা।

লেখক জানান, আমার অধীনস্থ জনযোদ্ধাদের অমেয় ত্যাগ ও বীরত্বগাথা লেখার দায়বোধ থেকেই আমার এই রচনা। শত ভাগ সত্য, সঠিক, নির্ভুল ও বস্তুনিষ্ঠ তথ্যের উপর ভিত্তি করে বইটি রচিত। এটি মুক্তিযুদ্ধের একটি প্রকৃত চিত্র, যাতে জনযুদ্ধ বা গেরিলাযুদ্ধের সকল উপাদান বা বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান।

স্টুডেন্ট ওয়েজ-এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মাশফিকউল্লাহ অত্যন্ত আগ্রহ সহকারে অধিক গুরুত্ব দিয়ে বইটি প্রকাশ করছেন। লেখক বলেন, অদূর ভাবিষ্যতে ৩টি যুদ্ধের উপর তথ্য চিত্র নির্মাণের ইচ্ছে আমার রয়েছে। বইটি মাননীয় প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু কন্যা শেখ হাসিনাকে উৎসর্গ করা হয়েছে।

প্রসঙ্গত লেখক প্রধানমন্ত্রী এবং মুক্তিযুদ্ধ মন্ত্রণালয়ের নিকট কয়েকটি দাবী পেশ করেন:

(ক) যুদ্ধস্থান সমূহ যথা, ডাবরফেরী,জাউয়া বাজার সড়কসেতু, জাওয়া সড়ক ও রেল সেতু এবং বুরকী গ্রামে স্মৃতিফলক নির্মাণ।

(খ) যুদ্ধে অংশ গ্রহণকারী বা সহায়তাকারী গ্রামসমূহ যথা- শ্রীপুর ,রনশী, চাঁদপুর এবং বুরকীতে স্মৃতিস্তম্ভ নির্মাণ।

(গ) বুরকীর যুদ্ধে নিহত শহীদ আবদুল লতিফের কবরটি পাকা করা ও স্থায়ীভাবে রক্ষণাবেক্ষনের ব্যবস্থা করা।

উল্লেখ্য, 'স্বাধীনতা ‘৭১-মুক্তিযুদ্ধে জনযোদ্ধা' বইটির প্রকাশনা উপলক্ষে ২৬শে ডিসেম্বর সকালে ঢাকা রিপোটার্স ইউনিটি মিলনায়তনে এক সংবাদ সম্মেলনের আয়োজন করা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন প্রকাশনা প্রতিষ্ঠান ‘স্টুডেন্ট ওয়েজ’ এর স্বত্বাধিকারী মোহাম্মদ মাশফিকউল্লাহ, লেখক বীর মুক্তিযোদ্ধা লে. কর্নেল আবদুর রউফ, বীর বিক্রম, পিএসসি (অব.), বীর মুক্তিযোদ্ধা মেজর ওয়াকার হাসান,  বীর প্রতীক, পিএসসি (অব.), বীর মুক্তিযোদ্ধা মিজানুর রহমান খান, বীর প্রতীক।

এ সম্পর্কিত আরও খবর