দুর্নিবার সুজনের গুচ্ছকবিতা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

দুর্নিবার সুজন | 2023-09-01 19:09:40

পৃথিবীর পিঠে বসে

চুম্বকীয় আকর্ষণ বিকর্ষণেই অভিকর্ষ-বল আমাকে নক্ষত্রদের দিকে
টানে না। পৃথিবী একটা বর্তুলাকার চুম্বক হয়ে প্রদক্ষিণ করে তোমাকে
নিয়ে। পৃথিবীর পিঠে বসে, তুমি আমিও জড়িয়ে থেকে কিংবা দূরত্ব
নিয়ে ঘুরি একই কক্ষপথে। পিঁপড়েদের কক্ষপথ একই হলেও কে কার
ভাষা বোঝে বলো! সকালের ব্রেকফাস্টে ব্ল্যাক কফি বানাতে গেলে
দেখি, চিনির বয়ামে হাজারো পিঁপড়া তাদের খাবার নিয়ে মত্ত।

ডাস্টবিন থেকে ছয়জন পিঁপড়া একটা ভাত নিয়ে উঠে যাচ্ছে পাইপ
বেয়ে। তাদের প্রতি আমার মায়া লাগে। তাদের যুথবদ্ধ চলাচল দেখি,
তাদের চুরি দেখি, ঘুষ দেওয়া দেখি, দুর্বলের প্রতি অত্যাচার দেখি
কর্মী পিঁপড়েদের নিরন্তর সংগ্রাম দেখি, পুরুষ পিঁপড়েদের অলস
বসে থাকা দেখি। ঘোর নিয়ে দেখি তাদের আন্তঃপ্রজাতি সংগ্রাম।
অতঃপর আমি, আমি হয়ে যাই; খুনী হয়ে যাই! ব্ল্যাক কফি বানানোর
সংগ্রামে শত পিঁপড়েকে ভাসিয়ে দেই পানিতে। মৃত পিঁপড়েদের শরীর
ড্রেন বেয়ে চলে যায় তাদের নিজস্ব কবরে, সৎকারহীন!

তাদের সন্মিলিত শোকের ভাষা আমার বোঝা হয় না। তাদের সন্মিলিত গালি
মানুষ জাতের প্রতি আমি বুঝতে পারি না। তারাও কি একে অন্যকে
ধর্ষণ করে, খুন করে বলে‘আহা, কী মানবিক অত্যাচার!’

মৌমাছি, উঁইপোকা, মশা, ছারপোকা, ভীমরুল, তেলাপোকাদের সাথে
সহবাসে আমি প্রায়ই খুনি হয়ে যাই, আশরাফুল মাখলুকাত হয়ে যাই।
সবার উপরে মানুষ সত্য হয়ে যাই! আমার প্রবৃত্তিতে আছে নিজেকে
শ্রেষ্ঠ বলার প্রবণতা। তাই আমি আর সব প্রাণীদের ভালোবাসার মহত্ত্ব
দেখাই; ভালোবেসে খেয়ে ফেলি হাঁস, মুরগি, গরু, ছাগল সব। ঘৃণায়
মেরে ফেলি ছারপোকা, তেলাপোকা! তারপর আমি অহিংসবাদী হয়ে যাই!
আমি মহত্ত্বকে ছুঁতে চাই। মুরগি না খেলে আমাকে পাঙ্গাস, রুই খেতে হয়
তার চেয়ে বেশি অহিংস হলে কচকচে পুঁই ডাঁটাদের, লাউ ডাঁটাদের
সন্মিলিত ক্রন্দনে, বিরহে জগদীশ বসু উদ্ভিদের প্রাণে সংগীতের খোঁজ পায়।
তাদের ড্যান্স-ফেস্টে যে সংগীত বাজে তার ভাষা না বুঝে
পার করে দিচ্ছি একটা জীবন!

প্রিয় মাকড়সা,
তোর অদ্ভুত ঘরের মতো আমার ঘরও কি তোর কাছে অদ্ভুত লাগে?
এতসব অট্টালিকায় তুই সবখানে শুনতে পাশ কি মানুষদের শীৎকার,
চিৎকার? লোভ, ঘৃণা, হিংসা, ভয়? তুই আমার সব কথা বুঝিস?
বুঝিস, আমার দ্বিচারি চরিত্র? আমি মানুষ; আমি এরকমই। আমি আমার
প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য কারাগারে বন্দী! আমি বুঝতে পারি,
চুম্বকীয় আকর্ষণ বিকর্ষণেই অভিকর্ষ-বল আমাকে নক্ষত্রদের দিকে টানে না!

কোলাজ গল্প - ৪

তুমি আমাকে পাত্তা না দিলে একটা নিরুদ্দেশের নিঃসঙ্গ বিবাগী নৌকায়
বেড়িয়ে পড়ব। পরিবারকে, সমাজকে, দলকে, দেশকে ভালোবেসেছি
অনেক। সময়ে এরা সকলেই পরিচয়ের হিংস্রতায় উগ্র হয়ে ওঠে দ্বেষ যেন
মানব-প্রবৃত্তির মজ্জায়, এসবে রাজনীতি নির্মোহ, নির্লিপ্ত, নিশ্চল;
ফ্রয়েড আইনস্টাইনকে চিঠি লিখল অসহায়ত্বের। বিবেকহীন প্রবৃত্তির
প্রতিষেধক নেই; যুদ্ধ অনিবার্য; জাতি সাম্রাজ্যের ভেদ রেখার লাগাম
কে টানবে! তাই যুদ্ধ তোমার আমারও; সহবাসে, মতবাদে-মতভেদে
আইডেন্টিটিকে ছুড়ে ফেলে অহিংসার গঙ্গাস্নান নিই চলো।

আহা, বীর্যময় গঙ্গা। আহা, মহাভারত! গঙ্গাকেও বিয়ে করলো শিব!
কপোতাক্ষ আর ব্রহ্মপুত্র নদ গঙ্গার মানবায়নে ক্ষেপে ওঠেনি কি?
ব্রহ্মপুত্রের ক্রাশ ছিল গঙ্গা? সেই থেকে নদী ও মানুষের দ্বন্দ্ব?
পাড়ভাঙ্গা মানুষের আহাজারিতে শিবের লাম্পট্যের বিরুদ্ধে লড়াই নেই!
অবিবাহে-বিবাহের পুনঃপৌনকিতায় শিব জড়িয়েছেন প্রফেটাইজ কবি যিশু মুহাম্মদে
তিনি যাচ্ছেন কুম্ভমেলায়; নাঙ্গাসাধুর ঘামের ঘ্রাণেই মোদিজির
আতর কারখানার স্বপ্ন বাস্তবায়ন করবে রিলায়েন্স! গুজরাট ছড়িয়ে পড়ছে
কানেকটিকাটে। উন্মাদ তরুণের মুহুর্মুহু গুলিতে নিউটাউন স্কুলের
অর্ধশত শিশু নিহত। ওবামা গেছেন সান্ত্বনার মণ্ডা নিয়ে। পাশেই গুজরাটি
গ্রোসারিতে গান্ধীজির নিকুচি করছেন মোদির বেনিয়া সাঙ্গত। অহিংসার
পক্ষ নিলে হিংস্রভাবে আমার মুসলমানিত্বে আঘাত দিলেন। সেদিন খৎনা
শিশ্নের শিরদাঁড়া কেঁপে কেঁপে উঠলে ড্যানভারি যুদ্ধের গাজী হয়ে সিরিয়ায়
হিজরত করতাম। আইসিস ভাইদের গনিমতে ঝাল মিটত লাফাঙ্গা শিশ্নের।
আহা আইডেন্টিটি!

দেশকে ভালোবসি; তবু দেশগুলো সব উগ্র স্বাদেশিক।
গ্রামকে ভালোবাসি; তবু গ্রামান্ধ মারামারি ছাপ্পান্ন হাজার বর্গমাইল জুড়ে।
ধর্মকে ভালোবাসি; তথাপি ধর্মান্ধ হিংস্র নখর মানুষকে বাস্তুচ্যুত করে চলেছে
এ শতাব্দীতেও! দলকে ভালোবাসি; তবু আন্তঃদলীয় দ্বন্দ্বের অন্তর্ঘাত বধ
করে রাজনীতির মূলমন্ত্র। মানুষকে ভালোবাসি; যদিও মানবিক হিংস্রতা আর
অহং ভড়ংয়ের ‘পাশবিক’ গালিতে লজ্জা পাই। পৃথিবীকে ভালোবাসি;
তিনিও ছায়াপথ-চ্যুতিতে চুর্ণ বিচুর্ণ মানুষের ইমারতের মণ্ড নিয়ে পৌঁছে যাবেন
কৃষ্ণগহব্বরে।

কেয়ামত সে কেয়ামত!
তুমিই আমার সাধনভজন প্রিয়,
চলো নৌকায় উঠি, নুহের নৌকা বাঁধা রাখা ঘাটে।

মুহূর্ত

মুহূর্তবাদী হতে হলে মুহূর্তকে কামড়ে কামড়ে আস্বাদন নিতে হবে।
খেতে হবে মুহূর্তের নীল গরল কামড়!
ভাবো, মুহূর্তের জন্য বাঁঁচছো তুমি। এরপর হয়তো কিছু থাকবে না;
কোনো কল্পিত স্বর্গ কি নরক। নীল সাগরের কুয়াশা মিলিয়ে যাবে দিগন্তে।
ভাবো, মানুষের প্রবৃত্তির অবিচ্ছেদ্য কারাগার ভেঙে দেবে মনোবিজ্ঞানের
কোনো আবিষ্কার। লোভ, ঘৃণা, হিংসা থাকবে না কোথাও। ভেদাভেদ
থাকবে না ধর্ম,বর্ণ, ভাষা, পেশা, ধনী, গরিব, উচ্চ, নীচ কোনো কিছুরই।
সম্পত্তি-লিপ্সা, ক্ষমতানুরাগ, খ্যাতিলিপ্সা, প্রতিদ্বন্দ্বিতা কিছুই থাকবে না।
পরিচয়ের হিংসা থেকে, জীবনের ক্ষুধা থেকে খাদ্য আহরণে অপরাপর
প্রাণী ও উদ্ভিদের অনিবার্য হত্যার পাপ থেকে নিস্তার পাবে মানুষ। ভাবো;
যা ঈশ্বরও ভাবেনি, সে মুহূর্তটির কল্পনা কত সুন্দর! ভাবো প্রিয়তম
তুমি আমার চেয়েও অনেক বেশি পৃথিবীর ছিলে!

তোমার অনুভুতিগুলি দিয়ে তালপিঠা, ঝালপিঠা আর ফ্রুট কেক বানিয়ে
খেয়ে ফেলতে পারি। তোমার নিশানাকে নিশিন্দা তিতার মতো লাগছে!
পৃথিবীর নিশীথে মুহূর্ত থেমে গেলে একটা কালো শূন্যতার গর্তে পড়ে যাবে
তুমিও! এত বৃষ্টি এই অন্ধকারে অনেক জীবনের শব্দ এখানে বৃষ্টির মতো
পড়ে যাচ্ছে, স্রোত হয়ে ভেসে যাচ্ছে সমুদ্রে।
পৃথিবীর সূর্যকে কোন কক্ষপথে পাঠালে ভিন্ন ছায়াপথের সূর্যদের সাথে
হলুদ প্রেমের ঘষাঘষি করবে না! হে সূর্য, জ্বলে যাচ্ছো তুমি।
জ্বালিয়ে যাচ্ছো লোকালয়, বিরাণ প্রান্তর। তোমার তেজ আরেকটু
বাড়িয়ে এন্টার্কটিকা, হিমালয় আর আল্পস গলিয়ে সব নদীকে এক করে
সব সমুদ্রকে এক করে একক জলজ পৃথিবী বানিয়ে থৈ থৈ ঢেউয়ে
ঢেউয়ে সব প্রাণীদের ঘুম পাড়িয়ে দিতে পারো; অনন্ত নির্বাণের ঘুম।

ডেড সি’র মতো একটা একক মৃত সাগর পড়ে থাকবে পৃথিবী হয়ে!
একটা পৃথিবীময় বজ্রপাতের আলো দিনের আলোর চেয়েও বেশি
আলো দিতে পারে। ভিন্ন নক্ষত্রের ভিন্ন গ্রহে চলে যেতে পারলে ৩৬০
ডিগ্রি ক্যামেরার সিনেমাটোগ্রাফার হয়ে ছেড়ে আসা একটা ব্যর্থ
খেয়োখেয়ি পৃথিবীর সিনেমা বানিয়ে একটা করুণ সুর জড়িয়ে দিতাম!
যে মুহূর্তে এই কল্পনা, স্বপ্ন, উদগ্র প্রত্যাশায় মেতে থাকছি এটিই আমার
সেরা মুহুর্ত। আমি মুহুর্তবাদী।

আমার মতে নিমিষেই শেষ হয়ে যেতে পারে মানুষের সব প্রত্যাশা, চেষ্টা, সব।
অতএব কল্লনা করে হলেও মুহূর্তের জন্য বাঁচো।

বৃক্ষদের কনসার্টে

পৃথিবীই প্রবাসক্ষেত্র। সকলেই
অভিবাসী। অভিযোজনের বেগে বেড়ে উঠি।
হাওয়ার তালে পাল টেনে রাখি। তবুও
প্রবল ঝড়ে উলটে যায় নৌকা। ধানের
সোনালি ক্ষেত ভিজে বেঁকে দোলে..
নদীর কিনারায় সোনালু গাছে ফিঙ্গে
কেঁপে যায়। আহা শীত! আষাঢ়ের ভিজে
বিকেলের টুপটুপ ঝরে পড়া শীত।

এমন ঘটনাও ঘটে যাবে; পুরাঘটিত
কালের ইতিহাসে, যাইতেছির কালে
প্রবাহিত বাতাসের স্রোতে হৈ হৈ
আনন্দরবে তুমিরাও ছিলে। চরমপুলকের
ঘোরে অপার্থিব স্বর্গকে ডেকে আনি
সমাজের সংসদে। ধর্মঘোরের শব্দরে
সংগীতে নামাই। হু হু বাতাস বইছে
হাওয়ার রাতে। ঝিলপাড়ের বৃক্ষদের
কর্নসাট বসিয়ে দিই এক্সপেরিমেন্টাল
কিংবা ক্লাসিকাল ড্যান্স-ফেস্টে।

সেখানে পাতা-প্রপাতাদের নৃত্যমুদ্রার
পুরস্কারে মোহর তুলে দেবেন
বিশেষ অতিথি আবুল মাল!

এতসব ইনভিজিবল সিনেমাটোগ্রাফির
রেকর্ড বর্জ্যে ব্ল্যাকহোল ভরে গেলে
নতুন গ্রহ নক্ষত্রের সিনেমার কাজে
নেমে নিজেকে দেউলিয়া ঘোষণাকারী
আমিই আগামী পার্লামেন্টে স্বতন্ত্র
প্রধানমন্ত্রী প্রার্থী।

হঠাৎ শেখ হাসিনা বুঝলেন পরম্পরায়
মহামানবদেরই প্রধানমন্ত্রী হতে হয়!
তিনি তাঁর প্রার্থীতা প্রত্যাহার করে
আমাকে সমর্থন জানালেন।

পড়ে দেখবেন। ‘আমার ইস্তেহার’
আসছে বাজারে!

প্রধানমন্ত্রীর ট্রাডিশনাল শপথের
সাথে সংগোপন শপথ হবে
‘আমি শপথ করিতেছি যে,
আমি বিশ্বসরকার আর বিশ্বনাগরিক গঠন
আন্দোলনে সারা পৃথিবীকে কমরেড
বানিয়ে তুলব আর পৃথিবীর
নাম দেব মাইগ্রেন্টল্যান্ড।

পরবর্তী শপথানুষ্ঠানে প্যালেস্টাইন, রোহিঙ্গা
আর সিরিয়ানদের সাথে হুগো, টুটসি,
জিউস, সাঁওতালি, মুরংদেরদের
মার্চপাস্টে আমাকে অভিবাদন জানাবে
রাশান, চাইনিজ, ব্রিটিশ, আমেরিকান
কিংবা জানাতে বাধ্য হবে নব্য আর্যরাও।
আই হ্যাভ এ ড্রিম, আই হেভ অডাসিটি!
প্লিজ ভোট ফর মি...

গাছগুলো সব রাগি চোখে তাকিয়ে আছে

হও, হয়ে যাও। গাও, গেয়ে ওঠো। হাসো উল্লাস করো। কড়া তামাকের
মিষ্টি ঘোর নাও হেসে ওঠো।

জ্যাক, ড্যানিয়েলকেও আসতে বলো। মার্গারিটার ককটেল পাওয়া গেলে
নিউজক্যাফের সংবাদ নিউজ হয়ে যায়। কফি হাউজে ধর্মঘট, কাটলেট
আর ফিস ফিঙ্গারের দাম দু টাকা বেড়েছে। ওয়েস্টগেটে বোমাহামলায়
দুজন ইন্ডিয়ান কেনিয়ান নিহত গাছগুলো সব রাগী চোখে তাকিয়ে আছে
মানুষগুলোর কামড়াকামড়ি আর পিঁপড়েমি একইরকম লাগছে।

সে দাঁড়িয়ে থাকে স্থির। কে যেন তাকে ভাবাচ্ছে তার শাখা-প্রশাখায়
পাতা-প্রপাতায় নৃতকম্পনের দোলা যৌনসাফল্যের স্বপ্ন তারও আছে।
নিন্দার কামিনী, নন্দনে নরম হয়ে ঘ্রাণের গভীর চেতনাটি দিয়ে যায়
মগজে। তোমার সমস্ত দ্যুতির আলোয় মাখামাখি হয়ে হাঁড়িয়া নাচন
দিই চা বাগানের হোলিতে।
ভালোবাসি।
তোমার লম্পঝম্প কোলে ওঠা শৃঙ্গারের অভিনয় কিংবা গভীর গোপন
মমতা দেখে ফ্যালে আকাশমণি। বৃক্ষতলে থাকা না থাকা সাপেদের ভয়ে
ভাই ভাই বলে হাঁক দিলে চুদিয়াপাতা ফণা তুলে লজ্জাবতীর বাগানে
হামলা করে। দশজন মল্লিকবংশীয় লজ্জা নিহত হন। সংঘর্ষ ছড়িয়ে
পড়লে ইমানুয়েল ম্যাক্রোকে ফোন দেয় জাস্টিন ট্রুডো।

লজ্জা চৌধুরী বংশের অধিকারের বিল পাশ করে ওবামা প্রশাসন। ওদিকে
সুন্দরবন আন্দোলনের নেতারা লজ্জা বংশের লজ্জাকে রোগ বলে ফতোয়া
দ্যায়। বনের ভারসাম্য নষ্টের অপরাধে ফরহাদ মজহার রক্তাত্ব সংগ্রামের
ডাক দিলে ওহাবিয়া বংশের সব কুড়াল, গ্রেনেড, ককটেল ক্ষেপে ওঠে
৫৩ জেলার বিস্ফোরণে মতিঝিল কেঁপে ওঠে
পুড়ে যায়, ফলত লুই আইকানের অনিন্দ্যসুন্দর বাস্টার্ড চাইল্ড একা হয়ে যায়!

‘মাই আর্কিটেক্ট’
উত্তরপাড়ায় ক্যাপিটাল চলে গেল!

তবুও; যা তাই হও, গাও, হাসো, উল্লাস করো
ভিজিবল, ইনভিজিবল সব মৌল-মিলিটারি শাসন ধ্বসে যাবে কালে।

সবকিছু বোঝা যাচ্ছে

চারদিক থেকে শব্দ আসছে নগরের বারান্দায়। কানকুহরের পথে মগজ কাঁপানো
ঝিরঝির। কথা বলে যাচ্ছে সবাই, গেয়ে যাচ্ছে সবাই; মানুষ, বৃক্ষ, কীটপতঙ্গ সবাই।
শব্দকে বাক্য বানিয়ে সুরেলা হাওয়ার তালে কারা যে কোরাস গায়! একটা গভীর
স্তরে যেয়ে ভাবা যায়; তুমি কে? আমি কে? একটা অন্যরকম বাস্তব পৃথিবীতে
আমাদের লেনদেন।

তাই, ‘হাতে নাইরে কড়াকড়ি’ গায় তারা। সবকিছু বুঝে ফেলি আমি; বুঝতেও কষ্ট
হয় মাঝেমাঝে। হাসাহাসির চিলেকোঠা ছেড়ে গম্ভীর হয়ে চলে যাওয়া যায় বাহিরের
পৃথিবীতে। সেখানেও অনেক বৃক্ষদের দাঁড়িয়ে থাকায়, অনেক পিঁপড়েদের চলাচলে
অনেক মশাদের ওড়াউড়িতে আছে হাসাহাসি, বিরহ রোদন।

যদিও পৃথিবীর গতির মতো নয় কারো গতি। সবকিছু এত ধীরভাবে চলে। ধীর হয়ে
গেলে তাড়াহুড়ো থাকে না। দোকানি সিগারেট না দিয়ে অনেকক্ষণ দাঁড়িয়ে রাখলেও
রাগ লাগে না। একটা পাঁচশো সত্তর সাবান চাচ্ছে লোকটা ৪৩ বছর ধরে!

একজন জাতির পিতার শোক বয়ে বেড়াচ্ছে একজন দিনমজুর। ভিক্ষুক রমিজার
স্বামী হাসমত আলীও বঙ্গবন্ধু কন্যার নামে জমি কিনে মরে যায়!
এখনো উদাসীন মানুষেরা হাওয়ায় পুরনো প্রেমিকার প্রেত হয়ে ওড়া দেখে হাসে
রমেশের মতো। রমেশের ভালোবাসার বৃক্ষটি তার জন্য কাঁদে, মানুষের জন্য কাঁদে।
আর বাকি মানুষেরা বৃক্ষটিকে কেটে নিয়ে করাতে দেবে একদিন! কার ঘরের
আসবাব হবে সে কে জানে! আসবাবকে কেউ কি ভালোবাসে প্রেমিকার মতো?

শুনেছি, একটা ট্রাককে ভালোবাসে একজন কবি। ট্রাক দেখলেই নাকি তার শিশ্ন
উত্থিত হয়! বটগাছ দেখলেই আরেকজনের বিশ্বচরাচর লুপ্ত হয়ে ঘোরপ্রেম আসে।
পৃথিবীর মানুষেরা তাদের অন্ধরাহুর মতো ভাবে। কোনো নর নরকেও ভালোবাসে
কোনো নারী নারীকে। কোনো ক্লীব সমান্তরাল জীবনের ক্লেদ নিয়ে ইশ্বরকে ছুঁড়ে
দ্যায় প্রশ্নবাণ!

তবু তারা তো এরকমই! প্রচল ভাবনার বাইরের মানুষেরা, প্রাণীরা, বৃক্ষেরাও বেঁচে
বেঁচে মরে যায়! চর-ভৈরবী ঘাটে কত কত ইলিশ শেষ কান্না কেঁদে মরে গেছে, দেখেছি।
পৃথিবীর কোন গুদারাঘাটে, কোন বন্দরে যাচ্ছো তুমি? এডেন, মোম্বাসা, হেরাক্লিয়ন
না আলেকজান্দ্রিয়ায়? সবাই সবার মতো জীবন চালিয়ে যাচ্ছে, তবু সবাই সবাইকে
টিটকারি দিচ্ছে! যুগ যুগ ধরে এরকমই চিরায়ত জীবন!

পৃথিবী একটা মহাশূন্য-যানের মতো প্রবল গতিতে ভেসে যাচ্ছে। প্রতিদিন একবার
প্রদক্ষিণ করছে সে সূর্যকে। একটা বিশাল গোল মহাশূন্য-যান উড়ছে; যার চতুর্দিকে
মানুষ অন্যান্য প্রাণীকুল ও তৃণ-বৃক্ষেরা।

এত গতির মধ্যে মানুষেরাও নিজস্ব গতিতে কিলবিল করে কেঁচোদের মতো।
জানে না কেঁচোরাও গান করে নেচেনেচে তাদের সংসারে। কি সুন্দর পৃথিবী!
অদৃশ্য চিত্রগ্রাহক হয়ে তুমি এর সব মুহূর্ত রেকর্ড করে রাখতে পারো৷ মুহূর্ত
এগিয়ে যাচ্ছে, দৌড়াচ্ছে। মানুষের মনে কত কত মুহূর্ত গেঁথে যাচ্ছে। পৃথিবীর
গঞ্জগুলো অনেক বাতি জ্বালাতে জ্বালাতে শহর থেকে নগর মহানগর হয়ে
গেছে, যাচ্ছে, চারদিক থেকে শব্দ আসছে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর