অরবিন্দ চক্রবর্তীর গুচ্ছকবিতা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

অরবিন্দ চক্রবর্তী | 2023-08-31 21:33:17

কস্টিউম বনাম শরীর অথবা কাঠামো সমাচার

শরীর ধরে মারো টান—শব্দ হবে মাড়াই মাড়াই।

এবার বলি, আমাদের মুগ্ধতা ধানবাচক হলে
কী এমন ক্ষতি হতো রে লখাই?

শোনরে বিধান, যার ঘরে মহিষ আছে, ইঁদুর নাই—
সে কেমনে জানবে গোলাঘরের মহিমা কুটকুট?

তুইও শরীর, সাথী সয়ম্ভরের, দেহস্বরে জানতিস যদি,
ঘরে এনেছে যারা গান্ধারধ্বনি—নাচ কেন মোহন পরিচয়?

ও মন, পাপড়ির কাঠামো তোর, জানে সর্বজনা—
আরো চিত্রল ইতিহাস লিখেছিস আয়ুর বিবিধ খৎনায়—

ফলে, তোর জিভে আরজ নিশ্চয়, আমিষ জাতের ট্যাটু আঁকা
যে কল্পনায়, একই ঘরে শুয়েবসে কিভাবে হয় পৃথক পর্বে হৃদয়চাষ?

জীবন, বেঁচে থাকা কলিগ আমার, ভাবতেই এক পরিখা রহমত—
এই দুরাশয় নাট্টমে এলিয়েন বোধহয়
মানুষের, শরীরের, হৃদয়ের পোশাকধোয়া ব্যবহারিক লোগো-পরিচয়!

সন্তান

থির হয়ে দেখা গেল একজনের পায়ে হেলান করে
দাঁড়িয়ে আছে কারো দীপের জনম।

চক্রদার তুমি, ভরসার প্রতি আস্থা রাখো
একদিন উপমিত হবে তোমার বীজের কর্মধারয়।

ভাবছো শুধু
পায়ের নিচে মাটি নেই অথবা মাথার পরে ছাতা।

বলি, খুঁজছো কেন? আকাশের গায়ে তো পোশাক থাকে না!
যা থাকে সবই অসমাপিকা, লুম্বিনি গতির টলটলে অর্বুদ।

অধিকার হে, জেনে রাখো আদিম, নিয়তি সবার বাটোয়ারা আছে
জলের সহনামে অভাগারা পেয়েছে তার তিনভাগ।

সুযোগে, আমিও চুক্তির সঙ্গে হয়েছি গোমস্তা
বিন্দুগণ কোনো দিন প্রবাহী হবে, মৈনাকধাম হবে নিশান-মোহানা।

প্রমাণসত্য

এও সত্য, তুমি বহুমাঠ শস্যের মালিক।

খেতের আলে কেউ বাঁশি বাজায় আর ফুল-প্রজাপতি
পরাগায়ণ দেখে।

বিধুর দৃশ্য, একটা তাগড়া ছিঁড়ে এসেছে গোয়ালের শেকল।

মাত্র ভুলে গেলে যে, তুমি ঘাগু মিউজিক জাগলার;
আপন তছনছ সইতে না পেরে ষাঁড়ের উদ্দাম তুলে এলে খোঁয়াড়ে।

এখন কি ইচ্ছে আমার জানো? তোমার সকল কণ্ঠ্যৌষ্ঠ্য খুলে ফেলি
ক্লিওর দফতরে সাহস ঠুকে আরজ করি, এ কণ্ঠ বিনোদিয়ার।

দাঁত

লুকিয়ে ফেলেছি মুখ, হেতুসর্বস্ব অভিরামে।

হাসলে যার দাঁত দেখা যায়—ধারালো অথবা চকচকা
এ পরিপাটি আমাদের দরকার কি খুব?

তোমাকে বলি, সূর্যমুখী বনে পরিচর্যা হয় মুখমণ্ডল—
একটা আবর্ত-আদল ঋণ করে চাহিদাপত্র দাখিল করি
বুকের অন্দরের কোনো এক সাবর্ণের হাতে।

চলো, আড়ালে যাই, পোস্টারের পেছনে—প্রয়োজনে ছিঁড়ে ফেলি যূথ।

টুথপেস্ট বিক্রির জন্য যারা বিজ্ঞাপন করছে
বন্ধ করে দিই তাদের তৈরিখানা।

আমি একা, জ্ঞানত হাঘর—নিঃসঙ্গ মানুষ হাসলে শিল্প লাগে।
এরচে সাপ যদি হাসে, দেখবে ছোবলের পূর্বে ট্যাবুখচিত উচ্ছ্বাস।

সম্পর্কসুর

নদীতে চিরুনি করে খোঁজা হচ্ছে—কোথায় দক্ষিণদ্বার।

তোমাকে যারা লাশ বলেছে দেহের ভেতরে তারা রেখে এসেছে জন্মকবর।
মিথ্যা নয়, অভিজ্ঞতাই জন্ম দেয় একেকটা অশ্লীল।

আসুন ভ্রমিক, উত্তরজাতক পূর্তি চাচ্ছে এখন
আর পূর্ণিমামুখ করতে চাইছে শুধু আরেক রঙের সোমপ্রহরে।
বৈতরণী আরো দূর, শেষ হয়ে এলো গণিত
সাঁকো গুটিয়ে গেল অথচ মানুষের রগ ফুরাল না।

আমার কী যে লুপ্ত লাগছে, কী যে বিলাস লাগছে
সকল উল্লাস মেদ হয়ে যাচ্ছে ব্যবহারিক রোহিতে, নদীতে।

একে একে উঠে আসছে ঘটমান সিংহ, প্রবাহবার্ষিক, অপিনিহিতি দক্ষিণ।
আমি গাইছি গান বিথারি ইমনে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর