আন্নির গুচ্ছকবিতা

কবিতা, শিল্প-সাহিত্য

আন্নি | 2023-08-25 12:23:27

লবণ গলানোর উষ্ণতা আমি চাই

আমার চোখগুলো আরো ছোট হয়ে যাবে
গোশত বা গোশতের ভিতরে থাকা লবণের ভারে
লবণগুলো চাক ধরে থাকবে
এই লবণ গলানোর মতো উষ্ণতা আমি চাই
সঞ্চয় করে রাখতে চাই
আমি জমিয়ে রাখতে চাই সময়
সময়ের স্মৃতি হৃদয়ে আগুনের মতো জ্বলবে
আর চাক থেকে একটু করে লবণ গলবে

লোনা পানিতে আমার গালে
জমে থাকা ব্যাকটেরিয়া মরে যাবে
সাতদিন ধরে লবণ গলবে
আমি দুই স্কেল সাদা হব
তবে হাত দুটো কালোই থাকবে
কালো হাতের মাঝে
মরিচীকা হবে সাদা হাত
সাদা হাতের স্মৃতি লবণ গলাবে

গ্লোবাল ওয়ার্মিংয়েও উষ্ণতারই খালি চাহিদা
শীতল তাই শীতলতা হয় না
তাই তবুও কিছু উষ্ণতা আমি চাইব
এই অর্থিহীন পৃথিবীতে
কিছু পাব আর কিছু লবণ জমবে
আর আমার চোখগুলো ছোট হবে
এই লবণ গলানোর উষ্ণতা আমি চাই।

ওহে বুঝদার

কলের কাছে যে সাদাফুল বর্ষায়
মিচকি হাসি মেরে ফুটে থাকে
এই সকালে লাল ইটের ওপর
বৃষ্টির ফোঁটায় তা আমার চোখ মনে করে।
যেন ইটগুলো ভীষণ অসহায়
সাদাফুলের স্মৃতির অভাব তার।
তুমিও তো দেখো নি মাটির ওপর কল
আর কলের জলে পিছলা আমার শরীর
ঝড়ের তোড়ে মাত্র মৃত ফিঙেপাখি
যাদের দাফন সেরে মোনাজাতে বসতাম আমি।
সবুজ ব্যাঙগুলার পিছনে আমাকে দৌড়াতে দেখেছিলে কি?
ওগুলোকে আমি ডাঙাছাড়া করেছি
ডিঙিটার ওপরে শুয়ে নিজেরে একটু নায়িকাও বানিয়েছি
তোমাকে তো তখন দেখি নাই
দেখেছি মাঝনদী আর তারার ময়দান
পাটাতনের ওপর যেন এক চোখেই
পানি আর আলো মিশে গেল।
অপ্রাণের এ সৌন্দর্য
আমাকে মৃত্যুর লোভ দিয়েছে।
পাড়িতে তুমি ছিলে না যে!
প্রতি সকালেই  নতুন একটা করে সূর্য উঠল
এবং আমার এ জীবনের চারপাশ আর ক্যালেন্ডারের ডেটগুলো
একে অপরকে ভেঙে সরিয়ে আমাকে যে বানাল
তুমি কি তা বুঝেছিলে?
আমার সকল আমি হবার সময়ে
তোমারে তো পাই নাই একটুও,
তথাপি আমারেই তুমি
সর্বোচ্চ বুঝে ফেলার ভ্রমে
অমানব হয়ে না হেঁটে চলে যাও
রাস্তায় তো অবরোধ হয়।

বাসনা

একদিন আমরা আলোয় নামব
অজস্র আবর্জনা রোদে পুড়িয়ে
আমাদের এই অসহায় শহর ছেড়ে
হয়তো রাতের জোৎস্নায় বা দিনের কড়া রোদে
সকাল-বিকালের নরম আলোয়
কিংবা গোধূলির আবছা আলোয়
আমি তোমার সাথে মিশে
গভীর আলোয় ডুবে যাব।
আমাদের পিছে কোনো হাহাকার নেই
সামনে কোনো বাহুডোর নেই
যেন খালি পরস্পর পরস্পরের শরীরে
লতাগুল্মের মতো পেঁচিয়ে উঠব।
আমার এ অন্ধকার প্রেমী চোখ
গভীর আলোয় কেবলই
তোমার শরীরের জ্যোতি শুষে নেবে
নিস্তব্ধ মাতৃ জরায়ুর মতো
আলোর বলয়ে আমরা ধীরে ধীরে চলে যাব।
এ কি শুরু না শেষ
তা ভাবার সময় পাবে না প্রিয়,
শুধু আমাকে দেখো
এ আমার সেই রূপ যা আমার সৃষ্ট
আমার কল্পনার আমি আর
তোমার কাছে যেভাবে ভেবেছি।
তোমার শরীরের প্রতিটি বিন্দু
আমার চোখের প্রতি কণায়
ধেয়ে আসা ধ্রুবশক্তির আলোতে
ডুবে একাকার হয়ে যায়
তোমার স্পর্শ আমার প্রতি লোমের কণায়
আমার স্পর্শ তোমার মনে
কী ছিলাম কই আছি সব ভুলে
সব প্রকারবিহীন হয়ে
কেবল দুটো মানব রূপে
এই অতীব সময়বিহীন অন্তিম সময়ে, আসো
তবে বিলিন হই আমাদের মাঝে।

ধূধূ ধুলা

কাদাভরা এই শহরে যেন
সবই ধুলা
ফুঁ দিলে মিলিয়ে যাবে
আশেপাশের ঘর, অল্প গাছ
অতি নিকটের মানুষটাও।
এ কেমন চেহারা তোমাদের
যেন খালি আকৃতি
ত্রিভুজ, চতুর্ভুজ, গোল, চ্যাপ্টা
কেউ কারো মতো না
কেউ কারো না।
যেন অহেতুক তোমরা চলো
বসো, আলাপ আর গান গাও
হুজুগে পড়ে আবার শালিক হও
চ্যাঁ  চ্যাঁ করো একত্রে মিলে।
এখানে থাকো ওখানে ঘুরো
পরম স্থিতি ছাড়া তোমরা থামো না
আলো আর ক্লান্তি ভরা মুখ সব
আঁধার নেই কোথাও
আমার এ চোখ জ্বলে যায়।
ব্যস্ত রাস্তায় আমি দেখি
তোমরা ধুলা
ভাবি এই বুঝি
তোমরা মিলিয়ে গেলা
আমি ঠায় দাঁড়িয়ে
মানব প্রতীক
এক সহজ কারুকাজ শরীর
কোনো ভাঁজে যার
কোনো লুকানো কথা নেই।
ছুটছি, কোনো মানা নেই
শৈশব থেকে বর্তমান
বর্তমান থেকে শৈশব
সময় আমার পিছে
অনুভূতির বোঝাগুলো আর নেই।
দূর আকাশ থেকে সাগর
আমি উড়ি, সাঁতরাই, দৌঁড়াই
অন্তহীন ঘুম দেই
আমারে ঘিরে দিনরাত হয়
সময় পিছেই রয়ে যায়
কোথাও কোনো প্যারা নাই।

নিশাচর

বহু রাত কেটে যাবার পর আমি জেনেছি
স্বপ্নের আকাঙ্ক্ষা কেমন হয়
যে স্বপ্ন কেবলই অবিচল শান্তির
যা আমাকে এই অবাস্তব বাস্তবতা মিশ্রণ থেকে
যেন গভীর সাগরের সুন্দর আকৃতির
কোনো হাইড্রার গায়ে বালি হয়ে ছুঁয়ে দেবে
একটু দুলে এপাশ থেকে পরপাশে
আমি আবার মাছের পাখনার তলে হারিয়ে যাব।

আমি সময়ের হিসাব না মেনে জন্মান্ধ বাদুড় হয়ে
ইলেক্ট্রিক তার ফেলে নারিকেলের শুকনা পাতায় ঝুলে রব
ফোঁটায় ফোঁটায় জোৎস্না মেখে এ অন্তহীন আঁধারের জোনাকি হব আমি
আরো কিছু রজনী এ ভ্রান্তির আলোতেই কাটবে
কোনো কোনো রাতে অবশ্য কিছু কোকিলও ডাকে।

বিশ্বস্ততার মৃত্যুকাল আমি হিসেব করেছি
দেখি রাস্তার কোলে কুকুরের পালে আমি আর মৃত্যুর জয়গান
চেতনার অভাব সময়ে রেস্তোরাঁর বাসি পুরানো হাড়ে
আমি আরো দুইটা বেলা পার করে দেব
কতক অসহনীয় রাতে সমাজহীন কিছু শব্দের বাক্সে
নিশাচর অদ্ভুত কিছু মুখ শহরের গলিতে গলিতে বিরচনে মগ্ন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর