মুজিববর্ষে আলো জ্বলবে চর সোনারামপুরে

ব্রাহ্মণবাড়িয়া, দেশের খবর

আল মামুন, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, ব্রাহ্মণবাড়িয়া | 2023-09-01 06:41:52

ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর বুক চিরে জন্ম নেয়া বিচ্ছিন্ন একটি চরের নাম চর সোনারামপুর। আশুগঞ্জ বন্দর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে এর অবস্থান।

এটি আশুগঞ্জ সদর ইউনিয়ন পরিষদের (ইউপি) দুই নম্বর ওয়ার্ডের অন্তর্ভুক্ত। এই চরে চার হাজার মানুষের বসবাস। প্রধানত মাছ বিক্রি ও নৌকা চালিয়ে তারা জীবিকা নির্বাহ করেন। নাগরিক সুযোগ-সুবিধাসহ অনেক কিছু থেকেই যুগ যুগ ধরে বঞ্চিত এই চরের মানুষ।

চরটির পূর্ব পাশে অবস্থিত ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বন্দর ও শিল্প নগরী আশুগঞ্জ। সন্ধ্যা ঘনিয়ে আসার সঙ্গে সঙ্গে দু-এক কিলোমিটার ব্যাসার্ধে মেঘনার উভয়পাড়ে জ্বলে ওঠে হাজারো বাতি। অথচ যুগের পর যুগ ধরে বৈদ্যুতিক সুবিধাবঞ্চিত রয়েছে আশুগঞ্জের এ চরবাসী।

চরের বাসিন্দাদের প্রায় এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়া হবে

শতবর্ষ পর মুজিববর্ষের প্রথমদিকেই ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ উপজেলার চর সোনারামপুরের বাসিন্দারা পেতে যাচ্ছে বিদ্যুতের সুফল। এরই ধারাবাহিকতায় চরের চারপাশে বসছে বিদ্যুতের খুঁটি। আর এসব দেখে আনন্দে আত্মহারা চরের বাসিন্দারা।

জানা যায়, প্রায় ২০০ বছর আগে আশুগঞ্জে মেঘনা নদীর বুকে জেগে ওঠে চর সোনারামপুর। পরে সেখানে বসতি গড়ে ওঠে। চরের পশ্চিম তীরে কিশোরগঞ্জের ভৈরব বন্দর। দক্ষিণে মেঘনার ওপর নির্মিত দুটি রেল ও একটি সড়ক সেতু ব্রাহ্মণবাড়িয়ার বন্দর ও ভৈরব বন্দরকে যুক্ত করেছে। আর উত্তরে চরের বুক চিরে রয়েছে জাতীয় গ্রিডে বিদ্যুৎ সরবরাহের ২৩০ কেবি বিশাল সঞ্চালন টাওয়ার। নিজ উপজেলায় (আশুগঞ্জ বন্দরের মাত্র এক কিলোমিটার দূরত্বে) অবস্থিত দেশের বৃহত্তম বিদ্যুৎ উৎপাদন কেন্দ্র থেকে জাতীয় গ্রিডে সরবরাহ করা হয় বিদ্যুৎ। চারিদিকে হাজারো বাতির আলোর ঝলকানি থাকলেও তাদের চোট্ট দীপটিও একদিন বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত হবে এতদিন এমন স্বপ্ন দেখে যাচ্ছিল অবহেলিত চরটির অধিবাসীরা।

মুজিববর্ষ উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রীর ঘরে ঘরে বিদ্যুতের আলো পৌঁছে দেয়ার ঘোষণায় চরবাসীর দীর্ঘদিনের স্বপ্ন বাস্তবে রূপ নিচ্ছে। ভৌগলিক কারণে চরটিতে বিদ্যুতায়ন কঠিন হলেও মুজিববর্ষেই বিদ্যুতের আলো জ্বলবে চর সোনারামপুরে। সাবমেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে সেখানে পৌঁছে যাবে ১১ কেভি লাইন। প্রায় এক মেগাওয়াট বিদ্যুৎ দেয়া হবে সেখানে।

আশুগঞ্জ বন্দর থেকে আধা কিলোমিটার দূরে চর সোনারামপুরের অবস্থান 

বিদ্যুৎ বিতরণ বিভাগ সূত্রে জানা যায়, কুমিল্লার ১৩ উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের সক্ষমতা বাড়াতে এ নতুন প্রকল্প হাতে নিয়েছে বিদ্যুৎ জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়। এতে খরচ হবে এক হাজার ৪৫৫ কোটি ৯৫ লাখ টাকা। ২০২১ সালের মধ্যে প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করবে বাংলাদেশ বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড।

প্রকল্পের আওতায় কুমিল্লা জেলার কুমিল্লা সদর উপজেলা, চৌদ্দগ্রাম, লাকসাম ও বুড়িচং উপজেলা; ব্রাক্ষণবাড়িয়া জেলার সদর উপজেলা, আশুগঞ্জ ও সরাইল উপজেলা; চাঁদপুর জেলার চাঁদপুর সদর উপজেলা; নোয়াখালী জেলার মাইজদি উপজেলা, বেগমগঞ্জ ও কোম্পানীগঞ্জ উপজেলা; ফেনী জেলার ফেনী সদর উপজেলা এবং লক্ষীপুর জেলার লক্ষীপুর সদর উপজেলায় বিদ্যুৎ বিতরণের অবকাঠামো উন্নয়নের কাজ হবে।

বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ডের (বিতরণ বিভাগ) আশুগঞ্জের নির্বাহী প্রকৌশলী মো. রিয়াজুল হক বার্তা২৪.কমকে জানান, কুমিল্লা বিদ্যুৎ প্রকল্পের আওতায় সাব মেরিন ক্যাবলের মাধ্যমে নদীর নিচে দিয়ে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়া হবে চরটিতে। ইতোমধ্যে নদীর পাড়ে টাওয়ার স্থাপন করে সাবস্টেশন থেকে তার টানা হচ্ছে। চরে বসানো হচ্ছে বৈদ্যুতিক খুঁটি। মুজিববর্ষে চরে বিদ্যুৎ সংযোগ দেয়ার টার্গেট নিয়ে কাজ চলছে বলেও জানান তিনি।

এ বিষয়ে প্রকল্পটির দায়িত্বপ্রাপ্ত পরিকল্পনা কমিশনের শিল্প ও শক্তি বিভাগের সদস্য শামীমা নার্গিস জানান, প্রকল্পটি বাস্তবায়িত হলে ২০৩০ সাল পর্যন্ত চাহিদা অনুযায়ী কুমিল্লার ৬টি জেলার ১৩টি উপজেলায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ বিতরণ করতে প্রয়োজনীয় সহায়ক অবকাঠামো উন্নয়নের মাধ্যমে আর্থ-সামাজিক অবস্থার উন্নয়ন হবে।

এ ব্যাপারে আশুগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মো. নাজিমুল হায়দার বার্তা২৪.কমকে বলেন, আশুগঞ্জ উপজেলা একটি বিদ্যুৎ জোন। অথচ দীর্ঘদিন বিদ্যুৎ সেবা থেকে বঞ্চিত ছিল চরের লোকজন। মুজিববর্ষ উপলক্ষে তাদের এ দাবি পূরণ হতে যাচ্ছে- এটা ইতিবাচক। এতে করে আশুগঞ্জ উপজেলা শতভাগ বিদ্যুতের আওতায় চলে আসবে।

 

এ সম্পর্কিত আরও খবর