জীবনের সাথে এক পায়ে যুদ্ধ আলী হোসেনের

ঢাকা, দেশের খবর

মাহিদুল মাহিদ, স্টাফ করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সাভার (ঢাকা) | 2023-08-09 11:40:03

সাভারের বিরুলিয়া। লালের শোভায় শোভিত পুরো ইউনিয়ন। লাল গোলাপের সমাহার সত্যিই নজরকাড়ে স্থানীয়সহ দূর-দূরান্ত থেকে আসা মানুষদের। গোলাপ চাষি, কৃষি কর্মকর্তা ও গোলাপের বাগানে কাজ করা শ্রমিকের ঘাম ও শ্রমের ফসল আজকের এই গোলাপ গ্রাম। যেখানে জড়িয়ে আছে অনেক গোলাপ শ্রমিকের জীবনের কথা।

এই গোলাপ চাষ করে যেমন লাভবান হচ্ছেন চাষিরা তেমনি কর্মসংস্থান হয়েছে এখানকার অনেক দরিদ্র ও অসহায় শ্রমিকের। দুঃখ ঘোচাতে গোলাপ বাগানে কাজ করে আসছেন অনেকেই। এদের মধ্যে একজন আলী হোসেন। শিশু বয়সেই পা হারানো আলী হোসেন তার স্ত্রীকে সঙ্গে নিয়ে এখানেই স্বপ্ন বুনেছেন। একটু ভালভাবে বেঁচে থাকার স্বপ্নে প্রতিদিন সকাল থেকে বিকেল পর্যন্ত এসব গোলাপের বাগানে আপন মনে কাজ করে চলেছেন এই দম্পতি।

জন্মের পরে খুব অল্প সময়ই দু পায়ে হাঁটার সৌভাগ্য হয়েছিল আলী হোসেনের। এক দুর্ঘটনায় হারিয়ে ফেলেন একটি পা।

গোলাপ বাগানে কাজ করছেন আলী হ্যোসেন দম্পতি

সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) সকালে গোলাপের বাগানে গিয়ে দেখা মেলে আলী হোসেনের। সাথে ছিলেন স্ত্রী আরজিনা বেগমও। পা হারানোর বর্ণনায় আলী হোসেন বলেন বলেন, ' ৭ বছর বয়সে ট্রাক্টরের নিচে পড়ে আমার পা ছিন্নভিন্ন হয়ে যায়। বিভিন্ন জায়গা থেকে সাহায্য সহযোগিতা নিয়ে মা আমার চিকিৎসা করেন। আমি একটু বড় হতেই বিভিন্ন জায়গায় বাজারে ভিক্ষা করতাম যখন বড় হলাম তখন হাত পাততে লজ্জা পাচ্ছিলাম। ভিক্ষাবৃত্তি ছেড়ে পরে কৃষিকাজে মনোনিবেশ করলাম।

আলী হোসেনের স্ত্রী আরজিনা বার্তা২৪.কমকে বলেন, আমি দেখেছিলাম আমার স্বামীর পা ছিল না। বিয়ের পর থেকে তার সেবা যত্নের পাশাপাশি ৩শ টাকা মজুরিতে স্বামীর সাথেই কাজ করছি। দুই জন মিলে প্রতিদিন কাজ করতে পারলে মোট ৬শ টাকা আয় হয়। এই টাকা দিয়েই চলে সংসার। স্বামী স্ত্রী, ৩ সন্তান ও তার মাসহ ৬ জনের সংসার চলে সাভারের বিরুলিয়ার শ্যামপুরের কুমারখুদা আবাসনের একটি ঘরে।

দুই জন মিলে কাজ করে প্রতিদিন ৬শ টাকা আয় হয় তাদের

আলী হোসেনের মা ফিরোজা বার্তা২৪.কমকে বলেন, যখন আলী দুর্ঘটনায় পা হারায় তখন চিকিৎসার কোনো টাকা ছিলো না। ভিক্ষা করে, হাটে বাজারে টাকা উঠিয়ে খেয়ে না খেয়ে চিকিৎসা করিয়েছি। টাকা পয়সার অভাবে আলী হোসেনের ৩ সন্তানের ভবিষ্যৎও অনিশ্চিত। তাদের লেখা পড়ার খরচ চালানোর মত অর্থ না থাকায় এখনো কোনো সন্তানই স্কুলের মুখ দেখেনি। যদি কেউ প্রতিবন্ধী কার্ড করে দিতো তাহলে হয়তো আমার নাতনি তিনটার একটা অন্তত স্কুলে পড়তে পারতো।

এদিকে বিরুলিয়া ইউনিয়নের চেয়ারম্যান মো. সাইদুর রহমান সুজন বলেন, ইউনিয়ন পরিষদে যোগাযোগ করলে অবশ্যই তার জন্য করণীয় যা আছে তাই করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর