জায়গা হলো না হাসপাতালে, সিঁড়ির নিচে সন্তান প্রসব

সিরাজগঞ্জ, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তা২৪.কম, সিরাজগঞ্জ | 2023-08-28 22:26:41

সিরাজগঞ্জ ২৫০ শয্যা বিশিষ্ট বঙ্গমাতা শেখ ফজিলাতুন্নেছা মুজিব জেনারেল হাসপাতালের সিঁড়ির নিচে মরিয়ম বেগম (২৫) নামের এক প্রসূতি সন্তান প্রসব করেছেন।

রোববার (৮ ডিসেম্বর) রাতে এ ঘটনা ঘটে। মরিয়ম শাহজাদপুর উপজেলার বেলতৈল ইউনিয়নের খাজাসাতবাড়িয়া গ্রামের শাহিন আলমের স্ত্রী।

প্রসূতি মরিয়মের আত্মীয় উম্মে আয়েশা বলেন, মরিয়মকে সকাল দশটার দিকে হাসপাতালে ভর্তি করি। সে স্থান পায় মেঝেতে। কিন্তু দুঃখের বিষয় সারাদিনে রোগীকে দেখতে একবারও কোন ডাক্তার আসেননি। সকাল থেকেই ডাক্তারদের অবহেলা আর দায়সারা ভাব লক্ষ্য করেছি।

রোগীর ছাড়পত্র

সন্ধ্যার পর ডাক্তার মোছাঃ আফরোজা খাতুন রোগীকে দেখতে এসেই বলেন, সিজার করাতে হবে। ডাক্তারের কথা মতো রক্ত পরীক্ষা থেকে শুরু করে আলট্রাসনোগ্রাফি ও অতিরিক্ত রক্তের ব্যবস্থা করি। রাত নয়টার দিকে আমার রোগী মরিয়মকে অপারেশন থিয়েটারে নেওয়া হয়। এরপর হঠাৎ ডাক্তার বলেন এ রোগীর অবস্থা ভালো না। এই অবস্থায় সিজার করলে রোগীর মৃত্যু হতে পারে। রোগীকে বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে রেফার্ডের ছাড়পত্র হাতে ধরিয়ে বলেন, রোগীকে নিয়ে যান।

আয়েশা অভিযোগ করে আরও বলেন, আমারা রোগী নিয়ে এসেছি সকালে, সন্ধ্যার পর বলছেন, সিজার করতে হবে আর এখন রাত দশটায় বলছেন রোগীর অবস্থা ভালো না, রোগী মারা যেতে পারে। এ কেমন আমাদের সরকারি হাসপাতালে চিকিৎসা।

অসহায় প্রসূতি মরিয়ম কান্না জড়িত কন্ঠে জানান, হাসপাতালে ভর্তি হয়েছি সকল দশটায়, রাত দশটায় আমাকে রেফার্ড করা হয় বগুড়া জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালে। তীব্র যন্ত্রণায় আমাকে অপারেশন থিয়েটার থেকে বের করে দেওয়া হয়। এর মধ্যে ডাক্তাররা এতোটুকুও চেষ্টা করেন নাই। তীব্র ব্যথা নিয়েই পায়ে হেঁটে নীচতলা পর্যন্ত যাই। এ সময় আমার প্রচণ্ড ব্যথা আর পায়খানার চাপ দেয়, তখন আমি আর সহ্য করতে না পেরে মেঝেতে শুয়ে পড়ি। ততক্ষণে আমার সন্তানের মাথার কিছুটা অংশ বেরিয়ে আসে। কিন্তু চাপ দেওয়ার মতো এতটুকুও শক্তি আমার ছিল না। এ সময় শাহজাদপুর থেকে আমার সাথে আসা বৃদ্ধা করিমুন্নেসা (৬৫) তখন হাত দিয়েই বাচ্চাটিকে বের করে নিয়ে আসেন।

মরিয়মের সঙ্গে আসা দায়মা করিমুন্নেসা জানান, নিচতলায় নামার পর রোগীর পায়খানার চাপ দেয় এবং মেঝেতেই শুয়ে পড়ে। সঙ্গে থাকা মহিলারা কাপড় দিয়ে ঢেকে দেয় তখন আমি একটু বাচ্চার মাথা দেখতে পাই এবং হাত দিয়েই ফুটফুটে কন্যা শিশুটিকে বের করতে সক্ষম হই।

উল্লেখ্য, এসময় কর্তব্যরত চিকিৎসক হিসেবে ডাক্তার মোছাঃ আফরোজা খাতুনের সাথে ডাঃ ফারহান তানজীব ও ডাঃ বনশ্রী শাহা ছিলেন।

এ সম্পর্কিত আরও খবর