বাংলা একাডেমির মহাপরিচালক কবি হাবীবুল্লাহ সিরাজী বলেছেন, আজ দেশজুড়ে যখন ইংরেজি মাধ্যমে শিক্ষালাভের হুজুগ তৈরি হয়েছে তখন আমাদের ফিরে তাকাতে হবে সাহিত্য সম্রাট মীর মশাররফ হোসেনের জীবনের দিকে। যিনি ঔপনিবেশিক সময়ের বাসিন্দা হয়েও ঔপনিবেশের ভাষাগত দাসত্ব স্বীকার করেননি। বরং তিনি আমৃত্যু বাংলা ভাষায় সাহিত্যের সেবা করে গেছেন। দেশের বর্তমান বাস্তবতায় তাকে অনুসরণের প্রতিজ্ঞা করতে হবে।
বুধবার (১৩ নভেম্বর) মীর মশাররফ হোসেনের ১৭২তম জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দির পদমদী গ্রামে মীরের সমাধীস্থলে বাংলা একাডেমির দুইদিনের কর্মসূচির প্রথম দিনের আলোচনা সভার সভাপতিত্বের বক্তব্য তিনি এ কথা বলেন।
এ সময় তিনি আরও বলেন, মীর মশাররফ হোসেন বাংলা সাহিত্যের এক উজ্জ্বল নক্ষত্র। ঊনিশ শতকের বহুমাত্রিক এই সাহিত্যশিল্পী তার উপন্যাস, নাটক, নকশা, স্মৃতিকথা, দিনলিপি ইত্যাদির মধ্য দিয়ে বাংলা সাহিত্যকে নানাভাবে দীপান্বিতা করেছেন। ধর্মীয় বিষয়কে উপজীব্য করে এমন সম্প্রদায় অতিক্রমী মানবিক আখ্যান যেকোন সাহিত্যের ইতিহাসে বিরল। সারা জীবন চরম আর্থিক দুর্দশা এবং কষ্টের ভিতরেও তিনি বিরুদ্ধ বাস্তবতাকে অতিক্রম করে সাহিত্য চর্চা করে গেছেন। সেই সাহিত্য চর্চার মূল উদ্দেশ্য ছিল কলমের মাধ্যমে ঘুমন্ত জাতিকে জাগানো।
আলোচনা সভায় মীর মশাররফ হোসেনের ‘মনীষিতা’ শীর্ষক প্রবন্ধ পাঠ করেন লেখক ও গবেষক ড. ইসরাইল খান। স্বাগত বক্তব্য দেন বাংলা একাডেমির সচিব মোহাম্মদ আনোয়ার হোসেন। অতিথি হিসাবে বক্তব্য রাখেন রাজবাড়ী জেলা প্রশাসক দিলসাদ বেগম, সদর উপজেলা চেয়ারম্যান ইমদাদুল হক বিশ্বাস, বালিয়াকান্দি উপজেলা চেয়ারম্যান আবুল কালাম আজাদ, নির্বাহী অফিসার ইশরাত জাহান, নবাবপুর ইউপি চেয়ারম্যান মোহাম্মাদ আলী প্রমুখ।
মীর মশাররফ হোসেনের জন্মবার্ষিকী উপলক্ষে সকালে বাংলা একাডেমি, স্থানীয় প্রশাসন ও পরিষদ এবং বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের শিক্ষার্থীরা সহ সামাজিক সংগঠনগুলো মীরের প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করে পুষ্পমাল্য অর্পণ ও দোয়া মাহফিল অনুষ্ঠিত হয়। আলোচনা সভা শেষে গ্রন্থমেলার উদ্বোধন করেন অতিথিরা।
উল্লেখ্য, ১৮৪৭ সালের ১৩ নভেম্বর এই দিনে কুষ্টিয়া জেলার কুমারখালী উপজেলার গৌরী নদীর তীরে লাহিনীপাড়ায় বাবা মীর মোয়াজ্জেম হোসেন ও মা দৌলতুন্নেসার ঘরে তিনি জন্মগ্রহণ করেন এবং ১৯১১ সালের ১৯ ডিসেম্বর রাজবাড়ীর বালিয়াকান্দি উপজেলার নবাবপুর ইউনিয়নের পদমদী গ্রামে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুর পর এখানেই মহান এই মনীষীকে সমাহিত করা হয়।
তার লেখা উপন্যাস ‘উদাসীন পথিকের মনের কথা’ (১৮৯০), ‘গাজী মিয়ার বস্তানী’, ‘জমিদার দর্পণ’ (১৮৭৩), আত্মকাহিনী মূলক রচনাবলী ‘আমার জীবনী’, ‘বিবি কুলসুম’ (১৯১০), সহ বিভিন্ন গল্প, উপন্যাস, নাটক, কবিতা, প্রবন্ধ ও ধর্মবিষয়ক ৩৭টি বই বাংলা সাহিত্যের অমর সৃষ্টি।