লালমনিরহাটে রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই

লালমনিরহাট, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, লালমনিরহাট | 2023-09-01 14:26:50

লালমনিরহাটের নিরাময় ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারের বিরুদ্ধে ফারুক মিয়া (২৯) নামে এক রোগীর পেটে গজ রেখে সেলাই দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে।

রোববার (৬ অক্টোবর) রোগীকে টাকা দিয়ে বিষয়টি মিটমাট করার চেষ্টা করলে বিষয়টি জানাজানি হয়।

এর আগে রংপুরের পারফেক্ট ক্লিনিকে দ্বিতীয়বার অপারেশন করে গজ বের করে ২০ দিন পরে শুক্রবার (৪ অক্টোবর) ছাড়পত্র নিয়ে বাড়ি ফিরেন রোগী ফারুক মিয়া।

রোগী ফারুক মিয়া লালমনিরহাটের আদিতমারী উপজেলার দুর্গাপুর ইউনিয়নের মান্নানের চৌপতি এলাকার ফজলুল হকের ছেলে। পেশায় স্থানীয় বটতলা মোড় বাজারের ক্ষুদ্র ব্যবসায়ী।

রোগী ফারুক মিয়া ও স্থানীয়রা জানান, গত ঈদুল আজহার দেড় সপ্তাহ পর পেটে ব্যাথা অনুভব হলে লালমনিরহাট শহরের নিরাময় ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারে ভর্তি হন তিনি। সেখানে পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে কর্তব্যরত ডাক্তার জানান, তার অ্যাপেন্ডিসাইটিস অপারেশন করতে হবে। চিকিৎসকদের পরামর্শে ডা. ভোলানাথ বর্ম্মনের তত্ত্বাবধানে অপরেশন করে ৪ দিনে ১৮ হাজার ৫শ’ টাকা বিল দিয়ে চলে আসেন তিনি।

কয়েক দিন পরে আবার ব্যাথা অনুভব হলে ওই ক্লিনিকে যান। তারা ক্ষতস্থান পরিষ্কার করে নতুন চিকিৎসাপত্র দেন। তাতেও সুস্থ না হয়ে উল্টো শরীরের সমস্যা বেড়ে গেলে ফারুককে তার পরিবার রংপুর শহরের পারফেক্ট ক্লিনিকে ভর্তি করেন। সেখানে ডা. সাহেব আলী পরীক্ষা-নিরীক্ষা শেষে জানান, তার পেটে কোনো বস্তু রয়েছে। যা অপারেশন করে বের করতে হবে। সেই চিকিৎসকের পরামর্শে দ্বিতীয় বারের মতো অপারেশন করে বের করা হয় গজ ব্যান্ডেজ। সেখানে ২০ দিন চিকিৎসা শেষে প্রায় ৬০-৭০ হাজার টাকা ব্যয় করে কিছুটা সুস্থ হয়ে শুক্রবার বাড়ি ফিরেন ফারুক মিয়া।

এ বিষয়ে ক্ষতিপূরণ ও তাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে রোববার সকালে লালমনিরহাট যান ক্ষতিগ্রস্ত রোগী ফারুক। বিষয়টি জানতে পেরে নিরাময় ক্লিনিকের মালিক শামছুল আলম রোগী ফারুককে কৌশলে ডেকে নিয়ে দিনভর আপোসের চেষ্টা চালান। তাকে ১০ হাজার টাকা ক্ষতিপূরণ দেওয়ার চেষ্টা করলে কৌশলে বেড়িয়ে আসেন ফারুক মিয়া।

ক্ষতিগ্রস্ত রোগী ফারুক মিয়া বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, আমরা গরিব ও অর্ধশিক্ষিত মানুষ। সুস্থতার জন্য চিকিৎসকরা যা করতে বলেছেন তাই করেছি। তারা পেটের ভেতর গজ রেখে সেলাই করেছে সেটা তো আমরা জানতাম না। রংপুরে গেলে দ্বিতীয় অপারেশনে গজ বের করেন ডা. সাহেব আলী। এ নিয়ে সিভিল সার্জনের কাছে অভিযোগ দিতে যাওয়ার কথা শুনে নিরাময়ের মালিক ২ হাজার থেকে ১০ হাজার টাকা দিয়ে আপোসের অপচেষ্টা করেছেন। আমি এ অপচিকিৎসার বিরুদ্ধে আইনগত ব্যবস্থা নেব।

নিরাময় ক্লিনিক এন্ড ডায়াগনোসিস সেন্টারের ব্যবস্থাপক মাসুদুর রহমান মাসুদ বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, সাচিক লালমনিরহাট জেলার শাখার সভাপতি ডা. ভোলানাথ বর্ম্মন এই অপারেশন করেছিলেন। তিনি চিকিৎসকদের নেতা তার ভুল হতেই পারে না। জামায়াত-বিএনপির চিকিৎসক ডা. সাহেব আলী আমাদের ক্লিনিকের সুনাম ক্ষুন্ন করতে এ অপপ্রচার করছেন। তবে ওই রোগী রোববার ক্লিনিকে এসেছিলেন বলে স্বীকার করেন তিনি। কিন্তু তাকে ক্ষতিপূরণ দেওয়ার কথা অস্বীকার করেন।

লালমনিরহাট সিভিল সার্জন ডা. কাসেম আলী বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমকে বলেন, এমন কোনো খবর তার জানা নেই। তবে অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে অবশ্যই ব্যবস্থা নেওয়া হবে বলে জানান তিনি।

এ সম্পর্কিত আরও খবর