দেওয়ানি আদালত না থাকায় বিচারপ্রার্থীদের চরম ভোগান্তি

বরগুনা, দেশের খবর

মো. খাইরুল ইসলাম আকাশ, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, বরগুনা | 2023-08-26 16:22:22

দেওয়ানি আদালত না থাকায় গত ২৮ বছর ধরে বরগুনার আমতলী-তালতলী উপজেলার বাসিন্দাদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। চার কিলোমিটার প্রমত্তা পায়রা নদী পাড়ি দিয়ে মামলা-মোকদ্দমার জন্য যেতে হয় বরগুনা সদরে অবস্থিত সহকারী জজ আদালতে। ২০১২ সালে বরগুনার তৎকালীন জেলা জজ আমতলীতে দেওয়ানি আদালত পুনঃস্থাপনের পক্ষে আইন মন্ত্রণালয়ে প্রতিবেদন জমা দিলেও সাত বছরে তা আলোর মুখ দেখেনি।

জানা গেছে, ১৯৮২ সালে আমতলী-তালতলী নিয়ে আমতলী উপজেলা গঠিত হয়। উপজেলা ঘোষণার পর থেকেই আমতলীতে মুনসেফ আদালত স্থাপিত হয়। ১৯৯১ সালে রাজনৈতিক পট পরিবর্তনের ফলে কোনো কারণ ছাড়াই আমতলী আদালত প্রত্যাহার করে বরগুনা জেলা সদরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এতে সুবিধা বঞ্চিত হন দুই উপজেলার কয়েক হাজার বিচারপ্রার্থী। মুনসেফ আদালত বরগুনায় সংযুক্ত হওয়ায় এক বছরের মাথায় পায়রা নদী ও রাখাইন অধ্যুষিত এলাকা বিবেচনা করে ফৌজদারি আদালত পুনরায় আমতলীতে শুরু হয়।

আমতলী মানবাধিকার কমিশনের সভাপতি অশোক মজুমদার জানান, গত ২৮ বছরেও দেওয়ানি আদালতের কার্যক্রম শুরু হয়নি। এতে মামলা-মোকদ্দমার সঙ্গে সংশ্লিষ্ট প্রত্যন্ত গ্রামাঞ্চলের হাজার হাজার বিচার প্রার্থীরা চরমভাবে ভোগান্তির শিকার হচ্ছেন। বরগুনা জেলা সদরে দেওয়ানি আদালত থাকায় দু'উপজেলার জনস্বার্থ চরমভাবে উপেক্ষিত হচ্ছে। দেওয়ানি আদালত পুনঃস্থাপনের দাবিতে ইতোমধ্যে আমতলী উপজেলা আইনজীবী সমিতি মন্ত্রণালয়ে আবেদন করেছে।

তিনি আরও জানান, বর্তমানে বরগুনায় দেওয়ানি আদালতে আমতলী-তালতলীর প্রায় তিন হাজার মামলা চলমান রয়েছে। এদিকে, ২০১২ সালে তৎকালীন আইন প্রতিমন্ত্রী অ্যাডভোকেট কামরুল ইসলাম আমতলী আদালত পরিদর্শনে এসে জেলা জজের কাছে আমতলীতে দেওয়ানি আদালত পুনঃস্থাপনের মতামত চান। তৎকালীন জেলা জজ আমতলীতে দেওয়ানি আদালত পুনঃস্থাপনের পক্ষে প্রতিবেদন দেন। কিন্তু আজও দেওয়ানি আদালত পুনঃস্থাপন হয়নি।

তালতলী উপজেলা গাবতলী গ্রামের বাসিন্দা মো. আবদুল মাজেদ মাস্টার জানান, গত ৮ বছর ধরে বরগুনা সহকারী জজ আদালতে (আমতলী) একটি মামলা চলছে। ঝড়-বন্যা উপেক্ষা করে আদালতে যেতে হয়। এটা খুবই কষ্টের। আমতলী-তালতলী মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করে আইন মন্ত্রণালয়কে দ্রুত আমতলীতে দেওয়ানি আদালত স্থাপনের দাবি জানান তিনি।

আমতলী সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট আদালতের আইনজীবী মো. মিজানুর রহমান সিকদার জানান, ১৯৯১ সালে আমতলী থেকে দেওয়ানি আদালত প্রত্যাহার করে বরগুনা জেলা সদরের সঙ্গে সংযুক্ত করা হয়। এতে বিচারপ্রার্থীদের ভোগান্তি বেড়েছে।

বরগুনা আইনজীবী সমিতির আমতলী বারের সহ-সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট মো. জসিম উদ্দিন জানান, আমতলীতে দেওয়ানি আদালত না থাকায় প্রায় তিন হাজার মামলার বিচারপ্রার্থীদের বরগুনা আদালতে যেতে হচ্ছে। যা চরম দুর্ভোগের।

বরগুনা আইনজীবী সমিতির আমতলী বারের সাবেক সহ-সভাপতি সিনিয়র আইনজীবী অ্যাডভোকেট কাশেম মিয়া জানান, গত ২৮ বছরেও দেওয়ানি আদালত পুনঃস্থাপন হয়নি।

বরগুনা আইনজীবী সমিতির আমতলী বারের সহ-সভাপতি অ্যাডভোকেট এম এ কাদের মিয়া জানান, মানুষের কষ্টের কথা বিবেচনা করেই আমতলীতে দেওয়ানি আদালত পুনঃস্থাপনের চেষ্টা করা হচ্ছে। ইতোমধ্যে আইন মন্ত্রণালয়ে আবেদন করা হয়েছে।

ঢাকা বার আইনজীবী সমিতির সভাপতি অ্যাডভোকেট গাজী শাহ আলম বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম-কে বলেন, 'আমতলীতে দেওয়ানি আদালত পুনঃস্থাপনের দাবি সময় উপযোগী। মানুষের দুর্ভোগের কথা বিবেচনা করে সেখানে দেওয়ানি আদালত পুনঃস্থাপন করা প্রয়োজন।'

এ সম্পর্কিত আরও খবর