নাটোর রাজবাড়ির শতবর্ষী গাছগুলো মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে

নাটোর, দেশের খবর

ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, নাটোর | 2023-08-25 23:11:06

ইংরেজ শাসনামলে বাংলার দাপুটে জমিদার অর্ধবঙ্গেশ্বরী রানি ভবানীর স্মৃতিবিজড়িত নাটোর রাজবাড়িতে রয়েছে ৬০টির মতো শতবর্ষী গাছ। তবে গাছের গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় মৃত্যুর দ্বারপ্রান্তে রয়েছে ওই গাছগুলো।

জানা গেছে, ওই রাজবাড়ির পুকুর ও দিঘিগুলো ইজারার মাধ্যমে রাজস্ব আদায়ের উৎস বানিয়েছে নাটোর জেলা প্রশাসন। প্রায় এক দশক ধরে এখানকার পুকুর ও দিঘিগুলোতে চাষ হয় মাটিখেকো হিসেবে পরিচিত কার্প জাতীয় বিভিন্ন মাছ। এতে হঠাৎ করেই গোড়া থেকে মাটি সরে যাওয়ায় পুকুর-দিঘির পাড় জুড়ে বেড়ে ওঠা গাছগুলো ধসে বিলীন হচ্ছে। এভাবে ধীরে ধীরে কমছে রাজবাড়ীর শতবর্ষী গাছের সংখ্যা।

ঐতিহাসিক এ স্থাপনার গাছগুলোর ভবিষ্যত নিয়ে জেলা উদ্যানতত্ত্ব বিভাগের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হলে তারা দ্রুত মাটি ভরাট করে রিটেইনিং ওয়াল তৈরির উদ্যোগ নিতে পরামর্শ দিয়েছেন। তবে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর ও জেলা প্রশাসনের রশি টানাটানিতে এ উদ্যোগ এখনো শুরু করা যায়নি।

স্থানীয়দের অভিযোগ, প্রতি বছর রাজবাড়ির ইজারা সম্পদ ও দর্শনার্থীদের প্রবেশ মূল্য বাবদ বিপুল পরিমাণ অর্থ আয় হয়। তবে জেলা প্রশাসন রাজবাড়ির উন্নয়ন ও সংস্কার কাজে তা ব্যয় করে না।

 ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

জানা গেছে, ১৯২০ সালের দিকে নাটোর রাজবংশের রাজা যোগেন্দ্রনাথ রায় রাজবাড়ির সৌন্দর্যবর্ধনের জন্য মেহগনি, দেবদারু, পাম, আম, কাঁঠাল এবং কাঠ করবী ফুলের কয়েক হাজার গাছ রোপণ করেন। প্রায় ১০০ বছর পর এ রাজবাড়িতে এখন অবশিষ্ট রয়েছে ৬০টি গাছ। যার ৩২টি যথাযথ রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে হুমকির মুখে।

সচেতন নাগরিক কমিটি নাটোর শাখার সভাপতি রনেন রায় জানান, ঐতিহাসিক মূল্য থাকার পরও গাছগুলোর জন্য স্থানীয় প্রশাসনের তেমন ভ্রুক্ষেপ নেই। তাদের উদাসীনতায় শতবর্ষী গাছগুলো নষ্ট হয়ে যাচ্ছে। গাছগুলো রক্ষায় দ্রুত পদক্ষেপ নিতে হবে।

নাটোর সদর উপজেলা বন কর্মকর্তা সতেন্দ্রনাথ সাহা জানান, রাজবাড়ির গাছগুলো পরিচর্যার অভাবে নষ্ট হচ্ছে। গাছগুলো বাঁচাতে গোড়ায় মাটি দেয়ার পাশাপাশি রিটেইনিং ওয়াল তৈরি করা জরুরি। এতে বাকি গাছগুলো বাঁচানো যেতে পারে।

এ বিষয়ে নাটোর জেলা প্রশাসক মোহাম্মাদ শাহরিয়াজ বলেন, ‘আমরা রাজবাড়ির সংস্কার ও রক্ষণাবেক্ষণের ব্যাপারে আন্তরিক। তবে রাজবাড়ির ভেতরে কোনো কাজ করতে গেলে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তর বাধা দেয়। তাই সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ে চিঠি দিয়ে গাছগুলো রক্ষার জন্য প্রকল্প চাওয়া হচ্ছে।’

সংস্কৃতি মন্ত্রণালয়ের সচিব আবু হেনা মোস্তফা কামাল জানান, ইতিহাসের অংশ এ স্থাপনার ঐতিহাসিক গুরুত্ব অক্ষুণ্ন রাখার জন্য যা যা করণীয় সবই করা হবে।

এ সম্পর্কিত আরও খবর