মেহেরপুরে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স

মেহেরপুর, দেশের খবর

মাজেদুল হক মানিক, ডিস্ট্রিক্ট করেসপন্ডেন্ট, বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম, মেহেরপুর | 2023-08-30 19:44:25

মেহেরপুরের গাংনী উপজেলায় আশঙ্কাজনকভাবে ছড়িয়ে পড়েছে অ্যানথ্রাক্স। গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে গত ৯ মাসে ৫০১ জন রোগী চিকিৎসা নিয়েছেন। অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত গবাদি পশু জবাই করার ফলে মরণব্যাধি এ রোগ ছড়িয়ে পড়ছে মানুষের শরীরে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা গেছে, গেল কয়েক মাস আগে সীমান্তবর্তী হাড়াভাঙ্গা গ্রামের কয়েকটি বাড়িতে অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত কিছু গরু ও ছাগল মারা যায়। মৃতদেহগুলো যারাই হাত দিয়ে ধরেছেন তাদের বেশিরভাগ মানুষের হাতে ঘা হয়েছে। সে সময় চিকিৎসা নিতে হাসপাতালে গেলে অ্যানথ্রাক্সের বিষয়টি নজরে আসে। এরপরই জানা যায় বেশ কয়েকটি গ্রামে এই রোগ ছড়িয়ে পড়েছে।

জানা গেছে, বিভিন্ন গ্রামে পালন করা গরু ও ছাগল অসুস্থ হলেই জবাই করে সেই মাংস বিক্রি করা হচ্ছে। তাছাড়া গ্রামের কসাইখানাগুলোতে যত্রতত্রভাবে পশু জবাইয়ের কারণে ছড়িয়ে পড়ছে এই অ্যানথ্রাক্স।

বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকদের মতে জনসচেতনতার অভাব ও প্রাণিসম্পদ বিভাগের সীমাবদ্ধতায় এ রোগ আশঙ্কাজনকহারে ছড়িয়ে পড়ছে। তবে, পরিস্থিতি সম্পর্কে বিস্তারিত ধারণা নিতে এলাকায় কাজ করছেন রোগতত্ত্ব বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল।

অ্যানথ্রাক্সের আতঙ্ক গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে।
রোগতত্ত্ব বিভাগের একটি বিশেষজ্ঞ দল পরিস্থিতি সম্পর্কে ধারণা নিতে এলাকা পরিদর্শন করেছেন, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

অ্যানথ্রাক্সের আতঙ্ক গ্রামগুলোতে ছড়িয়ে পড়েছে। এ বিষয়ে হাড়াভাঙ্গা গ্রামের বাসিন্দা কাজিপুর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগ সভাপতি আবু নাতেকের সঙ্গে বার্তাটোয়েন্টিফোর.কমের কথা হয়। এ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘আমার বাড়িতে কয়েকটি গরু ছাগল মারা গেছে। মারা যাওয়ার পর প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গিয়ে তাদের অনেক বুঝিয়ে পশুদের টিকা দিতে নিয়ে আসি। এরপর এই গ্রামে টিকা সম্পন্ন হলেও আশপাশের গ্রামগুলোতে টিকা প্রদান করা হয়নি।’

গরু পালনকারী গাংনী বাজারপাড়ার মনিরুল ইসলাম বলেন, 'এর আগে তো এসব টের পাইনি। গরুর কখন কী হয় তা নিয়ে আতঙ্কে আছি। প্রাণিসম্পদ হাসপাতালে গেলে শুধু পটাশের পানি দিয়ে বিদায় করে দেয়। তারা বিষয়টিতে গুরুত্ব দিচ্ছে না।'

গাংনী উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের আবাসিক মেডিকেল অফিসার ডা. বিডি দাস বলেন, ‘তিন প্রকারের অ্যানথ্রাক্স হয়ে থাকে। এর মধ্যে এ এলাকায় কিউটেনিয়াস অ্যানথ্রাক্স হচ্ছে। রোগীদের চিকিৎসা অব্যাহত রয়েছে। কার্যকরী প্রতিরোধের ব্যবস্থা না থাকায় এই রোগ দ্রুত ছড়াচ্ছে।’

তিন প্রকারের অ্যানথ্রাক্স হয়ে থাকে
অ্যানথ্রাক্স আক্রান্ত মৃত গরু-ছাগল নাড়াচাড়ার কারণে হাতে ঘা হয়েছে গ্রামের এক বাসিন্দার, ছবি: বার্তাটোয়েন্টিফোর.কম

 

টিকা প্রদানে প্রাণিসম্পদ হাসপাতালের অনীহা নিয়ে অভিযোগ থাকলেও বিষয়টি মানতে নারাজ প্রাণিসম্পদ কর্মকর্তা মোস্তফা জামান। তিনি জানান, আক্রান্ত এলাকা পরিদর্শন করে নমুনা সংগ্রহ করা হয়েছে।

অ্যানথ্রাক্স গবেষণা প্রতিনিধি দলের প্রধান ডা. প্রভাত চন্দ্র সাহা বলেন, ‘পরীক্ষাগারে জীবাণুর ফলাফল আসলে সেটা সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে পাঠানো হবে যেন তারা প্রয়োজনীয় প্রতিরোধ নিতে পারেন।’

এ সম্পর্কিত আরও খবর